ধানক্ষেতে কিশোরীকে পালাক্রমে ধর্ষণ
মা মারা গেছেন ছোটবেলায়, বাবা ফের বিয়ে করেছেন। সৎ মায়ের কাছে ঠাঁই হয়নি ১৬ বছরের আশার (ছদ্মনাম)। ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার একটি গ্রামে দাদির সঙ্গে থাকত সে। সিরাজগঞ্জের রায়পুরে তার এক বান্ধবী সম্প্রতি তাকে চাকরির ব্যবস্থা করে দেবে বলে জানায়। কিশোরীও দাদিকে মানিয়ে বেরিয়ে পড়ে অর্থ উপার্জনের আশায়।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ চলমান। এই অবস্থায় ভালো নেই যাতায়াত ব্যবস্থা। ভেঙে ভেঙে যেতে হচ্ছিল আশাকে। যাত্রাপথে টাঙ্গাইলের কালিহাতি পর্যন্ত যেতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। একাকি কী করবে, কোথায় যাবে ভেবে পাচ্ছিল না ষোড়শী আশা। রেল স্টেশনে একা দাঁড়িয়ে থাকে। খুঁজতে থাকে সিরাজগঞ্জ যাওয়ার উপায়। না পেলে রাতটা তো কাটাতে হবে!
একটা সময় স্টেশনের পাশে এক লেগুনা চালক এগিয়ে আসে তার দিকে। সিরাজগঞ্জ পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে নিজের বাহনে তুলে নেয়। পথে সেই লেগুনায় ওঠে আরেক যুবক। তারা মেয়েটিকে নিয়ে হাতিয়া ও সল্লার মাঝামাঝি ছোট বটতলা গ্রামের দিকে চলে যায়। সেখানে তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে একটি ধানক্ষেতে নিয়ে যায় টেনে হিঁচড়ে। বুনো পশুর মতো মেয়েটির উপর ঝাপিয়ে পড়ে তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে, রক্তাক্ত করে। ভোরের দিকে মেয়েটিকে তাড়িয়ে দেয় তারা।
এ ঘটনাটি ঘটে ৬ মে রাতে। আশাকে তাড়িয়ে দেওয়ার পর সে পথ ভুল করে হাঁটছিল। পথে এক ব্যক্তি তার কাছ থেকে পুরো ঘটনা জানতে পারে। এ সময় আশা আতঙ্কে কাঁপছিল। কারও কাছে সাহায্য চাওয়ারও মানসিকতা ছিল না তার। তার ধারণা ওরা আবারও তাকে খুঁজে বের করবে। তার উপর নির্যাতন করবে। ঘটনাটি হয়তো ওখানেই শেষ হতো। নিপীড়নের যাতনা আর ভয় একাকী বয়ে বেড়াতো মেয়েটি। কিন্তু আশার অজানা শঙ্কার কথা মাথায় রেখে ওই ব্যক্তি পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং পরিচালিত বাহিনীর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের ইনবক্সে ঘটনাটি লিখে জানান গত ১২ মে।
বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স) মো. সোহেল রানা এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, বার্তাটি পাওয়ার পরই কালিহাতির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সওগাতুল আলমকে পাঠিয়ে দ্রুত তদন্ত করে মেয়েটি ও তার ধর্ষকদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেয় মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং। ওসি সওগাতুলের তৎপরতায় ইন্সপেক্টর তদন্ত রাহেদুল ইসলামের নেতৃত্বে, এসআই রাজু আহমেদ এবং এএসআই তৈয়ব আলীসহ পুলিশের একটি টিম এ বিষয়টি তদন্তে নামে। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা খুঁজে পায় তারা।
সোহেল রানা আরও জানান, ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী ও বিশেষ কোনো ক্লু না থাকায় প্রথমে বেগ পেতে হয়েছে পুলিশকে। কিন্তু, অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তারা অল্প সময়ের মধ্যেই মেয়েটিকে শনাক্ত করে। দাদির ঠিকানা খুঁঁজে পায় পুলিশ। সেখানেই পাওয়া যায় তাকে। সেখান থেকে ভাড়া গাড়িতে করে তাকে কালিহাতি আনা হয়। তাকে অভয় দেওয়া হয়। আশ্বাস দেওয়া হয় অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার।
আসামিরা হলো - মো. লালন (২০), মো. রাসেল (২০), মো. সুমন (২১), মো. রিপন (২৩) ও জামাল (২৪)। আসামি সকলের গ্রাম টাঙ্গাইলের কালিহাতি থানার সল্লায়।
পুলিশ জানায়, মেয়েটির বর্ণনা ও দেওয়া তথ্যমতে আসামিদের শনাক্ত করা হয়। বুধবার রাতেই বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামিসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বাকিদেরকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। মামলা হয়েছে। মেয়েটি বর্তমানে পুলিশের হেফাজতে চিকিৎসাধীন। মেয়েটির একটি পুনর্বাসনের জন্য চেষ্টাও করছে পুলিশ।
প্রকৌশল নিউজ/এমআরএস