কাস্টমসের ইমেইল প্রতারণায় দুই বন্ধু লাখপতি


প্রকৌশল প্রতিবেদক :
কাস্টমসের ইমেইল প্রতারণায় দুই বন্ধু লাখপতি
  • Font increase
  • Font Decrease

ঢাকা কাস্টম হাউজের ইমেইল অ্যাড্রেসের অনুরুপ আইডি খুলে প্রতারণার সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন দুই বন্ধু। কাস্টমসে চাকরি কিংবা অকশনের পণ্য কম দামে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আগ্রহীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এক বন্ধু। আরেক বন্ধু করেন কাস্টমস কর্মকর্তা সেজে চাকরিপ্রার্থী বা পণ্য কিনতে আগ্রহীদের সঙ্গে বৈঠক। এরপর ইমেইলে ভুয়া নিয়োগপত্র বা অকশনের মালামাল বিক্রির চিঠি পাঠিয়ে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা।

ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম টিমের অভিযানে গ্রেপ্তার দুই বন্ধুর অভিনব প্রতারণার চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।

২০১৭ সালে প্রতারণা শুরু করেন দুই বন্ধু ইব্রাহিম হোসেন রবিন ও মেহেদী হাসান খোকন। মানুষ ঠকাতে সাজেন কাস্টমস কর্মকর্তা। কাস্টমসে স্টোর কিপারের চাকরির কথা বলে কিংবা অকশনের পণ্য কম দামে পাইয়ে দেয়ার প্রলোভনে অথবা পণ্য খালাসের কথা বলে আগ্রহীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন খোকন। তারপর আগ্রহীদের সঙ্গে কাস্টমস কর্মকর্তা সেজে কথা বলেন রবিন। আবার রবিন লোক যোগাড় করলে কর্মকর্তা সাজেন খোকন। ভুয়া নিয়োগপত্র, অকশন পণ্যের কোটেশন ও পণ্য খালাসের চিঠি তৈরি করে ঢাকা কাস্টম হাউজের অনুরুপ ইমেইল আইডি থেকে মেইল করেন তারা। তারপর দফায় দফায় একেকজনের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে বন্ধ করে দেন যোগাযোগ।

গ্রেপ্তারের সময়ে তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত কাস্টমসের একটি ভুয়া ই-মেইল, অসংখ্য ভুয়া সিল ও সিল প্যাড, প্রতারণার টাকা আত্মসাতে ব্যবহৃত ব্যাংক একাউন্টের চেক বই, মোবাইল সেট-৫টি, সিম-১৬টি এবং বিভিন্ন চাকরির ভুয়া নিয়োগপত্র উদ্ধার করা হয়।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, কাস্টমসের সব ধরনের কাগজপত্রই হুবহু নকল করতে পারেন রবিন ও খোকন। এজন্য তাদের প্রতারণা ধরা খুবই কঠিন। এক ভুক্তভোগী বলেন, আইএসপি সম্পর্কিত যে সকল প্রোডাক্ট আছে যেমন মোটরসাইকেল। এগুলো দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমার কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা নেয়।

আরো একজন বলেন, যখন মাল দেয়ার সময় আসে ও অ্যাপয়েনমেন্ট লেটার দেয়ার সময় আসে, তখনই তালবাহানা শুরু করে তারা। অনেকদিন হয়ে যাওয়ার পর আমি বুঝতে পারি প্রতারণার শিকার হয়েছি।

রোববার ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) জুনায়েদ আলম সরকার বলেন, 'এই চক্রটি প্রথমে কাস্টমসে একটি নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিতো। পরে ই-মেইলের মাধ্যমে চাকরিপ্রত্যাশীদের আবেদন গ্রহণ করতো। রবিন নিজেই অ্যাপয়েনমেন্ট লেটার (নিয়োগপত্র) তৈরি করে পাঠাতো। বিকাশের মাধ্যমে এই চাকরির নামে টাকা আদায় করতো।

সাধারণত ডটগভডটবিডি(.govt.bd) ডোমেইনে ওয়েবসাইট ও ইমেইল অ্যাড্রেস তৈরি করে থাকে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু ঢাকা কাস্টমসের মেইল আইডি ইয়াহুতে। একারণেই প্রতিষ্ঠানটির মেইল আইডির অনুরুপ আরেকটি ইমেইল আইডি সহজেই খুলতে পেরেছে প্রতারকরা। কয়েক ধাপে তারা প্রতারণার টাকা নিতো। চাকরি এবং মালামাল বুঝিয়ে দেয়ার আগেই তারা গা ঢাকা দিতো। ঢাকা কাস্টম হাউজ সংক্রান্ত যে কোনো বিষয়ে জানতে প্রতিষ্ঠানটিতে গিয়ে খোঁজ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, এ ধরনের প্রচুর প্রতারণা হচ্ছে। কখনো যদি কেউ টাকা চেয়ে তাকে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স থেকে শুরু করে নিয়োগপত্র দিতে, সবকিছু যদি একজন ব্যক্তিই যোগাযোগ করে তাহলে সন্দেহের অবকাশ থাকে। যত বেশি মামলা হবে এই প্রতারক চক্র দমে যাবে। বেশিরভাগ সময়ই ভুক্তভোগীরা মামলা না করার কারণে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে প্রতারকরা। তাই প্রতারিত হলেই মামলা করার পরামর্শ পুলিশের।

প্রকৌশল নিউজ/এমআরএস