'পরীমণির সঙ্গে প্রেম : সাকলায়েন চাকরিবিধির শৃঙ্খলা ভেঙ্গেছেন'
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ থেকে অব্যাহতি পাওয়া কর্মকর্তা গোলাম সাকলায়েন শিথিল ঢাকা বোট ক্লাবে ‘ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা’র অভিযোগে চিত্রনায়িকা পরীমণির মামলার তদারকির দায়িত্বে ছিলেন না বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার।
মঙ্গলবার ডিএমপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পরীমণির ওই মামলা বা অন্য মামলার তদারকির দায়িত্বে ছিলেন না ডিবির অফিসার সাকলায়েন। মামলা হয়েছিল ঢাকা জেলায়। এখানে ডিবির কোনো অফিসার তদারকিতে থাকার কথা নয়।’
চলতি বছর জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে চিত্রনায়িকা পরীমণি ফেসবুক স্ট্যাটাসে অভিযোগ জানান, ঢাকা বোট ক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নাসির উদ্দিন তাকে ‘ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করেছেন।’ এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার চেয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পরে তিনি সাভার মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
পরীমণির ওই মামলায় নাসির উদ্দিন মাহমুদ, তুহিন সিদ্দিকী অমিসহ ছয় জনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। পরে তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করে ডিবি। এই দুটি মামলার কোনোটির তদন্তে সাকলায়েন জড়িত না থাকলেও সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে পরীমণির সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে সাকলায়েন সরকারি চাকরিবিধির শৃঙ্খলা ভেঙ্গেছেন বলে জানান ডিএমপি কমিশনার।
পরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সাকলায়েন আইনগতভাবে কোনো অপরাধ করেননি। তিনি যদি তা করতেন, তবে তো তার বিরুদ্ধে মামলা হত। তিনি সরকারি চাকরিবিধির শৃঙ্খলা ভেঙ্গেছেন। বিসিএস ক্যাডারের অফিসারের এমন অনৈতিক সম্পর্কে জড়াবে তা প্রত্যাশিত নয়। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আগস্টের প্রথম সপ্তাহে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর আসে, পরীমণির দায়ের করা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে তার সঙ্গে ‘অন্তরঙ্গ সম্পর্কে’ জড়িয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার গোলাম সাকলায়েন শিথিল। পরীমণির গাড়িচালকের বরাত দিয়ে গণমাধ্যম জানান, সম্প্রতি শিথিলের বাসায় '১৮ ঘণ্টা’ কাটিয়ে এসেছেন পরীমণি।
এ ঘটনায় সারা দেশে কঠোর সমালোচনা শুরু হলে সাকলায়েনকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ থেকে অব্যাহতি দিয়ে অতিরিক্ত উপ-কমিশনার হিসেবে পুলিশের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) পদায়ন করা হয়।
পরীমণি ও পিয়াসাকাণ্ডে বেশক’জন ব্যবসায়ীর নাম গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও ডিএমপি কমিশনার নিশ্চিৎ করেন, পুলিশের কোনো শাখাই ব্যবসায়ীদের এমন কোনো তালিকা করেনি।
তিনি বলেন, ‘পরী ও পিয়াসাদের মামলাটির তদন্তভার সিআইডির। কিন্তু এমন কোনো তালিকা করার আইনগত ভিত্তি নেই। পুলিশের কোনো সংস্থা এটা করছে না।’
গণমাধ্যমে ব্যবসায়ীদের নাম প্রকাশের পর অনেক ব্যবসায়ী ‘বাড়ি ছাড়া’ হয়েছেন জানিয়ে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তাদের অনেকেই সামাজিক মর্যাদাহানির ভয়ে সামনে আসছেন না। তারা আমাদের ফোন করছেন। তারা আমাদের জিজ্ঞাসা করছেন, বাড়িতে থাকবেন কি না। তারা বলছেন, যদি সেই তালিকা ধরে কোনো মামলা বা আইনি কিছু যদি ঘটে। অনেক মিডিয়া থেকে ফোন করে তাদের বলা হচ্ছে, ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে এমন তথ্য রয়েছে, যা ফাঁস করে দিবেন। এমন ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।’
এসব সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না -এমন প্রশ্নে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা তো কেউ সামনে আসছে না। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই তো ব্যবস্থা নিতে পারি আমরা।’
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও জানান, পরীমণির মামলার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ ‘আন্ডারওয়ার্ল্ডের অনৈতিক’ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে নানা তথ্য পাচ্ছে।
প্রকৌশল নিউজ/এমআরএস