কার্যালয়ে বসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হাই কোর্টের মানা


প্রকৌশল প্রতিবেদক :
কার্যালয়ে বসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হাই কোর্টের মানা
  • Font increase
  • Font Decrease

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সতর্ক থাকতে বলেছে হাই কোর্ট। আদালত বলেছে, কার্যালয়ে বসে নয়, ঘটনাস্থলেই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে। সংশ্লিষ্ট আইনের বিষয়ে ম্যাজিস্ট্রেটদের যথাযথ প্রশিক্ষণও নিশ্চিত করতে হবে।
 
বাল্যবিয়ের অভিযোগে নিজের কার্যালয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে দুই শিশুকে সাজা দেওয়ার ঘটনায় এক রিট আবেদনের নিষ্পত্তি করে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চে আজ বৃহস্পতিবার এ পর্যবেক্ষণ দেয়।

আবেদনকারী পক্ষে আদালতে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
 
শিশির মনির পরে সাংবাদিকদের বলেন, নেত্রকোণায় বাল্যবিয়ের অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত দুই শিশুকে সাজা দিয়েছিলেন। চিঠির মাধ্যমে সে বিষয়টি আমি হাই কোর্টের নজরে এনেছিলাম। আজকে বিষয়টির পরিপূর্ণ শুনানি শেষে নিষ্পত্তি হয়েছে। আদালত তিনটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছে।

পর্যবেক্ষণ তিনটি হল- আইন প্রয়োগের ব্যাপারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের আরও সতর্ক হওয়া দরকার। সংশ্লিষ্ট আইনের বিষয়ে ম্যাজিস্ট্রেটদের যথাযথ প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা দরকার। কার্যালয়ে বসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা যাবে না, ঘটনাস্থলেই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে।

নেত্রকোণার আটপাড়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুলতানা রাজিয়া গত (১ আগস্ট) নিজের কার্যালয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বাল্য বিয়ের অভিযোগে দুই শিশুকে এক মাসের আটকাদেশ দেন।

এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হওয়ার পর (৪ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিশির মনির এক চিঠিতে বিষয়টি হাই কোর্টের নজরে আনেন।

সে চিঠিতে ভ্রাম্যমাণ আদালতে শিশুদের সাজা দেওয়ার এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি দণ্ডপ্রাপ্ত দুই শিশুর তাৎক্ষণিক মুক্তির নির্দেশনা চান এ আইনজীবী।

পরে সেদিন বিকেলই বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম দুই শিশুকে মুক্তির নির্দেশ দেন। সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও হাই কোর্ট বিভাগের বিশেষ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান আদালতের আদেশটি নেত্রকোণার ডিসিকে জানাতে গিয়ে জানতে পারেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজা বাতিল করে তার আগেই শিশুদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

পরদিন (৫ আগস্ট) বিষয়টি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের একক ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে। শিশির মনির শুনানিতে বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের প্রযোজ্যতা নিয়ে সারাদেশেই এক ধরনের বিভ্রান্তি আছে। এটিই প্রথম ঘটনা নয়, এরকম অনেক ঘটনাই ঘটছে।

উনাকে (সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুলতানা রাজিয়া) নেত্রকোণার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট যে কারণ দর্শাতে বলেছেন, সেটির একটি অনুলিপি হাই কোর্টে দাখিল করার আদেশ দিতে পারেন।

“দেখা দরকার কোন ধারণার উপর ভিত্তি করে এ ঘটনা (দুই শিশুকে সাজা দেওয়া) ঘটেছে। এখানেই শেষ করে না দিয়ে এটা আপনার (উচ্চ আদালতের) সামনে আসা উচিত। তাই আমার আরজি হচ্ছে, বিষয়টা এখানেই শেষ না করে তার ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া দরকার।”

বিচারক তখন বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট সুলতানা রাজিয়া তার চেম্বারে বসে আদেশ দিয়েছিলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত এটা পারে না। চেম্বারে বা থানায় বসে বিচার করার সুযোগ নাই। অথচ অনেক ক্ষেত্রেই এমন ঘটনা দেখা যাচ্ছে।

সেদিন অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, “এরকম ঘটনা ঘটছে। সুতরাং এগুলো আপনারা সরকারের কাছে বলেন। যখন ম্যাজিস্ট্রেটদের ফাউন্ডেশন ট্রেনিং হয়, মোবাইল কোর্ট কীভাবে চলবে, চালাতে হবে, কিভাবে এর প্রয়োগ করবে এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।”

অ্যাটর্নি জেনারেল সে সময় বিচারককে আশ্বস্ত করেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি মন্ত্রী পরিষদ সচিবের সাথে কথা বলবেন।

পরে বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, “ওই ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে, তার একটা অনুলিপি (২৬ আগস্টের) মধ্যে হাই কোর্টে প্রেরণ করতে বলছি। নেত্রকোণার সিনিয়র জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একটা অনুলিপি ২৬ অগাস্টের মধ্যে আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেবেন। আমরা দেখি কী ব্যাখ্যা উনি (সুলতানা রাজিয়া) দেন। কী কনসেপশনে উনারা কাজ করছেন ফিল্ড লেভেলে।”

ওই নির্দেশের পর নেত্রকোণার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুলতানা রাজিয়ার দাখিল করা ব্যাখ্যার সত্যায়িত অনুলিপি গত ২২ আগস্ট হাই কোর্টে দাখিল করা হয়।

রাজিয়া সুলতানা তার ব্যাখ্যায় সাজা দেওয়ার ঘটনায় ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে এরকম ঘটনা আর ঘটবে না বলে অঙ্গীকার করেন।

সেটি অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের মাধ্যমে হাই কোর্টে উপস্থাপন করা হলে আজ বৃহস্পতিবার আদালত পর্যবেক্ষণ দিয়ে মামলাটি নিষ্পত্তি করে দিল।