ব্লাড ক্যান্সার আক্রান্ত মিঠুর বাঁচার আকুতি


ম. শাফিউল আল ইমরান
ব্লাড ক্যান্সার আক্রান্ত মিঠুর বাঁচার আকুতি
  • Font increase
  • Font Decrease

‘আমার স্বপ্নগুলো দুঃস্বপ্ন হয়ে গেল’ ফোনের ওপার থেকে কান্নাভেজা কণ্ঠে বলছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক মেধাবী শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ শেরদিল মিঠুর কন্ঠে। তার প্রতিটি শব্দেই বাঁচার আকুতি। যে বয়স স্বপ্ন পূরণের, সেই বয়সে ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধির সঙ্গে লড়াইয়ে নামতে হচ্ছে তাকে।

ডাক্তার বলে দিয়েছে দ্রুত ভারতে নিয়ে চিকিৎসা করালে মিঠুর সুস্থ জীবনে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য দরকার প্রচুর অর্থ। কিন্তু চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনের সক্ষমতা নেই তার পরিবারের।

আরিফুজ্জামান তুহিন নামের এক বন্ধু তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘ওর নাম মিঠু। মিনা কার্টুনের মিঠু হিসেবে আমরা ওকে টেনে টেনে বলতাম, আমার নাম মিঠু। ভাল নাম আবদুল্লাহ শেরদীল। নব্বই দশকের শেষে যেসব মানুষ গ্রাম ও মফস্বল থেকে এসে এই তুমুল ইট পাথরের শহরে ভালোবাসার রঙ নিয়ে হাহাকার করত মিঠু ছিল তাদের একজন।

খুলনা থেকে আসা মিঠু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল। থাকত এফ রহমান হলে। জানতাম ওদের মাছের ঘের আছে। কিন্তু আসলে খুলনা-সাতক্ষীরা বা বাগেরহাট এলাকায় মাছের ঘের থাকা বড় কিছু না। বৃষ্টি হলে আমরা দল বেধে ভিজতাম, মিঠুও ভিজত। সন্ধ্যায় বান্ধবীদের হলের সামনে আড্ডা মারতাম দল বেঁধে। এভাবে মিঠু আমাদের খুব কাছের বন্ধু হয়ে গেলো। মিঠু বাঁধনের কর্মী ছিল। রক্ত দেয়া ও জোগাড় করা দুটোই করত।

আমার খুব কষ্টের দিন, মন খারাপের দিন ওরা আমাকে আগলে রেখেছিল। খুব মন খারাপ হলে ছেড়ে যাওয়া প্রেমিকার হলের সামনে রাতের পর পর রাত দাঁড়িয়ে থাকতাম, মিঠুও থাকত। আহারে আমার বন্ধু।

আমার মতই কালো ছিল মিঠু। কিন্তু কি মিষ্টি। চোখ দুটি দারুণ সুন্দর। কিন্তু কি এক অদ্ভুত কারণে ও রোদ চশমা পরতে ভালবাসত। হয়তো সুন্দর যা কিছু তা আড়াল রাখাই ভাল। ওর  মাথার চুল ঘন কালো কোঁকড়া। এরপর আমাদের বিপ্লব, বৃষ্টিভেজার দিন একদিন ফুরাল। মিঠু একটা বেসরকারি ফার্মে চাকরি করতে চলে গেলো। আমি থেকে গেলাম ঢাকায়।

মাঝে মধ্যে কথা হতো। বুঝতাম এখনও সে আমাকে ভালোবাসে, বন্ধু কেমন আছিস বল কতদিন দেখা হয়ইনি। আজ হুট করে আরেক বন্ধু সাগর আমাকে বলল, ‘মিঠু ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত। মিঠু Acute lymphoblastic leukemia (ALL) আক্রান্ত।  বুকের ভেতরটা ফাঁকা হয়ে গেল। এমন তয় ক্যান হয়? ক্যান হয়।’

বহুদিন পরে মিঠুর সাথে অনেক্ষণ কথা বললাম। জানালেন, ‘কেমো থেঁরাপি দিতে হবে। অনেক টাকার ব্যাপার।’ সিদ্ধান্ত হয়েছিল গোটা পরিবারে যত ঘের আছে আগামী তিন চার বছর কেউ লিজের টাকা (ওদের ভাষায় হাড়ি) নেবে না। সব মিঠুকে দেবে। তাতে হয়তো লাখ বিশেক টাকা হতো, হয়তো এতে অনেকটা এগিয়ে যেত ওর চিকিৎসা। কিন্তু এবার ইয়াস ঝড়ে সব ঘের ভেসে গেছে। ঘের ভাড়া দেয়া যাবে না। মিঠুর টাকা পাবার সে সম্ভাবনাও নষ্ট হলো। সেই সাথে সৃষ্টি হলো ওর চিকিৎসা নিয়ে অনিশ্চয়তা।

মিঠু বলছিল, আমি ওর কণ্ঠস্বর স্পর্শ করছিলাম। বুঝতে পারছিলাম, ও বাঁচতে চায়। জীবনটা অদ্ভুত। বেঁচে থাকাটাও আসলে পরম শান্তির। ও বাবা হয়েছে। দুটো সন্তান। কখনো অর্থ সহায়তা চায়নি কারোর কাছে কেউ বলতে পারবে না। বন্ধু মিঠুর জন্য মনে হচ্ছে, মানুষের কাছে হাত পাতি।

আমি অবশ্যই আমার বন্ধুর জন্য সাধ্য অনুযায়ী সব করব। এমন বন্ধুর জন্য যদি কিছু করার থাকে আপনাদের আপনারা কি করবেন না? কেন জানি মনে হয় অনেক মানুষ আছে যাদের এই পোস্টটি পড়ে খারাপ লাগছে।

ওর চিকিৎসার জন্য প্রায় ৩৫ লাখ টাকার মত লাগবে। যদি এক লাখ লোক ৩৫ টাকা করে দেয় তাহলে এটা এক দিনে উঠে যাবে। যদি ৫০ হাজার লোক ৭০ টাকা দেয় তাহলেও এ টাকা কোনো বড় অঙ্ক না। যদি ২৫ হাজার লোক ১৪০ টাকা দেয় তাহলেও এই টাকা কোনো ব্যাপার না। কারণ আমরাতো সম্মিলিত মানুষের উত্থানের কথা বলতাম, আমরা সম্মিলিত মানুষের শক্তির স্বপ্ন দেখতাম।

আমি  জানি না, মিঠুর জন্য কেউ  এগিয়ে আসবে কিনা। কারণ গান গাওয়া, কবিতা আবৃত্তি, ড্যাশিং বুদ্ধিজীবী এসবের কোনো গুনই নেই মিঠুর। ও গড়পড়তা সাধারণ মানুষ। আমাদের ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে অতি সাধারণ একজন, যে তার বন্ধুর অসুখে, মন খারাপ  করে মন খারাপে থাকে।’’’’

প্রকৌশলনিউজের পক্ষ থেকে আব্দুল্লাহ শেরদীল (মিঠু) এর জন্য শুভ কামনা। নিশ্চয় সমাজের হৃদয়বান ব্যক্তিরা, মিঠুর বন্ধু, সহপাঠী সর্বপরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল অ্যালামনাই এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার তার জন্য এগিয়ে আসবেন।

মিঠুকে সাহায্য পাঠানো যাবে:
Abdullah Sherdil মিঠুর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট 
Md. Abdullah Sherdil
Acc: 1031030066483
Dutch Bangla Bank Banani Branch, Dhaka
নগদ,বিকাশ ও রকেট নম্বর:
Bikash/Nagad/Rocket: 01717047784

প্রকৌশলনিউজ/এসএআই/এসআই