জিডির তিন ঘন্টার মধ্যে দুই শিশুকন্যাকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিল পুলিশ
মারিয়া (১০) ও ফারজানা( ৮) তিন বছর পূর্বে মাতৃহারা হয় দুই শিশু সন্তান, পড়াশোনা করে যথাক্রমে তৃতীয় ও দ্বিতীয় শ্রেনীতে। সৎমায়ের সংসারে অনাদরে অবহেলায় বেড়ে উঠছে তারা, বাবা ফিরোজ চৌকিদার ২৭ বছর যাবৎ লেবার এর কাজ করছেন সদরঘাটে। কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন জিনজিরা ইউনিয়ন এর পূর্ব বন্দডাকপাড়ায় ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে বাস করছেন পটুয়াখালীর বাউফলের স্হায়ী বাসিন্দা জনাব ফিরোজ।
গত ১৯ জুলাই সকাল ৬টায় ঐ বাসা থেকে পাশ্ববর্তী স্কাউট ক্লাব জামে মসজিদ এ সেফারা শিখতে গিয়েছিল মারিয়া ও ফারজানা, সকাল ৭টা বাজলে ও ঐদিন ফিরে আসেনি তারা।
অবুঝ শিশু সন্তানদের ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন তাদের বাবা ফিরোজ, সময় গড়িয়ে তা রুপ নেয় উদ্বেগ, উৎকন্ঠা ও আশংকায়, ক্রমে এ আশংকার পারদ উর্ধমুখী হতে থাকে।
সারাদিন ধরে আত্মীয় স্বজন ও বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নেন এই অসহায় বাবা।
পরেরদিন ২০ জুলাই সকালে শোকাতুর পিতা ফিরোজ হাজির হন কেরানীগঞ্জ মডেল থানায়, সবিস্তারে ঘটনাটি খুলে বলেন, এন্ট্রি করেন জিডি। ওসি মহোদয় কন্যাহারা পিতাকে অভয় দেন, আশ্বাস দেন হারিয়ে যাওয়া মেয়েদের ফিরিয়ে দেওয়ার।
অফিসার ইনচার্জ আবু ছালাম তাৎক্ষনিকভাবে বিষয়টি জানান ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মোঃ মারুফ হোসেন সরদারকে। জিডি তদন্তের দায়িত্ব অর্পণ করেন এসআই সুব্রত দাসকে।
তদন্তকালে বিশ্বস্ত সোর্স ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হয়, একপর্যায়ে দুপুর ২টার দিকে হারিয়ে যাওয়া মারিয়া ও ফারজানার হদিস পাওয়া যায় ঢাকা শহরের জুরাইনের মুরাদপুরস্থ মাদ্রাসা রোডের এক বাসায়। জানা যায় ঐ শিশুরা নিজেরাই সেখানে গিয়েছিল। জিডি এন্ট্রির তিন ঘন্টার মধ্যেই হারিয়ে যাওয়া দুই শিশু সন্তানকে ফিরে পান তাদের বাবা ফিরোজ। মুহূর্তেই শোকের নয়নজল যেন আনন্দ অশ্রুতে রুপান্তরিত হয়ে ধরা দেয় পিতা ফিরোজ এর নয়নে। এক অবিশ্বাস্য অভিব্যক্তি যেন ফিরোজ এর মুখায়ববে, অন্য রকম পুলিশ যেন দেখছেন তিনি।
উদ্ধার হওয়া শিশু মারিয়া ও ফারজানাকে নিয়ে আসা হয় কেরানীগঞ্জ মডেল থানায়। এডিশনাল এসপি মোঃ শাহাবুদ্দিন কবীর ও ওসি আবু ছালাম মিয়া শিশুদেরকে তাদের প্রিয় ক্যান্ডি দিয়ে আপ্যায়িত করেন, সবিস্তারে শুনেন তাদের দুঃখবেদনার কথা। মন খুলে শিশুরা তাদের মনের কথা বলেন পুলিশ আংকেলদের কাছে, বলতে পেরে দুঃখভার যেন হালকা হল তাদের, পুলিশ আংকেলদের এমন ব্যবহারে আপ্লুত হন মা হারানো মারিয়া ও ফারজানা।
এডিশনাল এসপি মোঃ শাহাবুদ্দিন কবীর শিশু মারিয়া ও ফারজানাকে ঈদ উপহার হিসেবে নগদ অর্থ তুলে দেন। ওসি আবু ছালাম চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, লবন, সেমাই, চিনি ইত্যাদি নানা সামগ্রীর সমাহার ঈদ উপহার হিসেবে তুলে দেন শিশুদেরকে। শিশু মারিয়া ও ফারজানাকে আশ্বাস দিয়ে যেকোন প্রয়োজনে তাদের কাছে আসার কথা বলেন এই পুলিশ কর্মকর্তারা। শিশুদের চোখে মুখে তখন খুশির বাঁধ ভাঙ্গা উচ্ছ্বাস।
প্রকৌশল নিউজ/এমআরএস