বেতনের একটি অংশ সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের দিবেন আইজিপি
জুমবাংলা ইয়ুথ ফাউন্ডেশন আয়োজিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে শীতবস্ত্র ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, প্রতি মাসে তার বেতনের একটি অংশ সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য দেবেন।
শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভানেত্রী জীশান মীর্জা।
জুমবাংলার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে এ কাজটি করতে পারলে পথশিশু নিয়ে কথা বলতে হতো না। প্রতি মাসে আমার বেতনের একটি অংশ জুমবাংলাকে দেওয়া হবে। আজ আপনারা যে শিশুদের পরিচর্যা দিয়ে যাচ্ছেন, একদিন তারা দেশের বোঝা না হয়ে পুঁজি হিসেবে বিকশিত হবে।’
তিনি সমাজের বিত্তবানদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য যত এগিয়ে আসবেন ততই দেশের উন্নতি হবে।’
তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘বাংলাদেশের মাটি খুবই খাঁটি। এখানে সোনা ফলে।’ সেই সঙ্গে পরগাছাও ফলে। অনেক সময় দেখা যায়, ফসলের চেয়ে পরগাছা বেশি শক্তিশালী হয়ে যায়। এ পরগাছারা আমাদের পেছন থেকে খামচে ধরার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের মানুষ সব ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছে। আজ এই ৫০ বছরে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। শিগগির মধ্যমআয়ের দেশে আমাদের উত্তরণ হবে।”
আইজিপি বলেন, ‘বাঙালি দেশপ্রেমিক জাতি। দেশের জন্য বাঙালি যতবার ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, ততবার বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। আমার কোনো সন্দেহ নেই দিনশেষে এ জাতি বিজয়ী হবে।’
তিনি বলেন, ‘একসময় বাংলাদেশ ছিল ক্ষুধা ও দারিদ্রের দেশ। অসুখ ও বঞ্চনা ছিল নিত্যসঙ্গী। দারিদ্রকে মানুষ নিয়তি হিসেবে মেনে নিতো। মানুষের গড় আয়ু ছিল ৪০-৫০ বছর। এ রকম একটা দেশকে বঙ্গবন্ধু স্বাধীন করেছিলেন।’
পুলিশপ্রধান আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে গরিবের হার ছিল ৮০ ভাগ। ২০০৯ সালে যখন বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসে তখন দারিদ্রের হার ছিল ৪৭ ভাগ। আর এখন ২০ ভাগ। চরম দারিদ্রের নিচে বসবাস করে মাত্র ৯ ভাগ মানুষ। আজ আমরা দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশকে উন্নয়ন ও সামাজিক অনেক সূচকে পেছনে ফেলে দিয়েছি। অথচ এসব দেশ উন্নয়ন শুরু করেছিল আমাদের আগে।’
তিনি বলেন, ‘করোনাকালে প্রধানমন্ত্রীর দুঃসাহসিক নেতৃত্ব ও প্রাজ্ঞ অর্থনৈতিক পরিকল্পনার ফলে আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। এ অগ্রগতি ধরে রাখতে পারলে আমরা চরম দারিদ্রকেও জয় করে দারিদ্রের শিকল ভেঙে বেরিয়ে আসতে পারবো।’
পুনাক সভানেত্রী ফুলের মতো শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য জুমবাংলাকে ধন্যবাদ জানান। তিনি শিশুদের কমলা ও চকলেট উপহার দেন। অনুষ্ঠানে জুমবাংলা স্কুলের কৃতি শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ, চার শতাধিক সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে শীতবস্ত্র, শিক্ষা উপকরণ ও উন্নতমানের খাবার বিতরণ করা হয়।
এর আগে আইজিপি, পুনাক সভানেত্রী ও অন্যান্য অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে জুম বাংলার শীত উৎসব ২০২১-এর উদ্বোধন করেন। পরে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে জুম বাংলা স্কুলের ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এতে বক্তব্য দেন জুমবাংলা ইয়ুথ ফাউন্ডেশনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মনিরুজ্জামান, সহ-সভাপতি জেরিন সুলতানা। সভাপতিত্ব করেন জুমবাংলা ইয়ুথ ফাউন্ডেশনের সভাপতি রুহুল আমিন সেলিম।
উল্লেখ্য, জুমবাংলা ইয়ুথ ফাউন্ডেশন একটি অলাভজনক সামাজিক সংগঠন। সংগঠনটি পথশিশু ও সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশ, ইয়ুথ লিডারশিপ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, পরিবেশ সংরক্ষণ, ভলান্টিয়ার ওয়ার্কশপ, আত্ম-কর্মসংস্থান, সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশ, দেশাত্মবোধ ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
সংগঠনটি সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য ঢাকায় ছয়টি স্কুল পরিচালনা করে থাকে। এর মধ্যে তিনটি আনুষ্ঠানিক ও তিনটি অনানুষ্ঠানিক স্কুল। এছাড়া ঢাকার বাইরে গাইবান্ধায়ও সংগঠনটির একটি আনুষ্ঠানিক স্কুল রয়েছে। বর্তমানে ঢাকার বাইরে দশটি জেলায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে জুমবাংলা ইয়ুথ ফাউন্ডেশন।