লঙ্কাবাংলা'র বিরুদ্ধে ১১ কোটি টাকার মূসক ফাঁকির অভিযোগ : এনবিআর
লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেডের বিরুদ্ধে সরকারকে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৩ সালের জানুয়ারি হতে ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখ পর্যন্ত সর্বমোট (সুদ ছাড়া) ১১ কোটি ৩৩ লক্ষ ৫৯ হাজার ৪২ টাকা মূসক ফাঁকি দেয় বলে নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর, ঢাকা লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেড এর বিরুদ্ধে সুদসহ সর্বমোট ২০ কোটি ৬০ লাখ ৪১ হাজার ৬০৬ টাকার অডিট আপত্তি উত্থাপন করে তা আদায়ের সুপারিশ করেছেন।
সম্প্রতি লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেড এর এই মূসক ফাঁকি বিষয়ে কাস্টমস্, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা (উত্তর) এর একটি নথি প্রকৌশল নিউজের হাতে এসে পৌঁছায়। আর এই নথিতেই পাওয়া যায় উল্লেখিত এই মূসক ফাঁকি বিষয়ক তথ্য সমূহ।
এই নথি সূত্রে জানা যায়, নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর মূল্য সংযোজন কর, ঢাকার প্রতিবেদনে দেখা যায়, লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেডের জানুয়ারি ২০১৩ সাল থেকে ডিসেম্বর ২০১৭ সাল পর্যন্ত অপরিশোধিত মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ১১ কোটি ৩৩ লক্ষ ৫৯ হাজার ৪২ টাকা। সেই সাথে এই অপরিশোধিত মূসক এর উপর প্রযোজ্য ২ শতাংশ হারে সুদ বাবদ আরও আসে ৯ কোটি ২৬ লক্ষ ৮২ হাজার ৫৬৪ টাকা। যা সুদসহ সর্বমোট ২০ কোটি ৬০ লাখ ৪১ হাজার ৬০৬ টাকা হয়।
নথি সূত্রে আরও জানা যায়, মূসক নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের প্রতিবেদনের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেড কর্তৃপক্ষ নিরীক্ষা মেয়াদে আয়ের বিপরীতে ২,৯২,৯০,৬৬২.১২ টাকা, উৎস কর্তন খাতে ৮,০৭,৩৩,০৭২.১৫ টাকা ও স্থান স্থাপনা ভাড়া খাতে ৩,৩৩৫,৩০৭.৫৯ টাকা অর্থাৎ সর্বমোট ১১ কোটি ৩৩ লক্ষ ৫৯ হাজার ৪২ টাকা প্রদেয় মূসক যথাসময়ে সহকারি কোষাগারে জমা দেয়নি। এর ফলে তারা নিজেরা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হলেও সরকার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
মূসক নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের প্রতিবেদনের বর্ণনা অনুযায়ী, লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেডের বিভিন্ন আয়ের উপর সিএ ফার্মের অডিট রিপোর্ট মোতাবেক উৎসে মূসক ও স্থান ও স্থাপনার উপর পরিহারকৃত মূসক যথাসময়ে পরিশোধ না করায় মূল্য সংযোজন কর আইন,১৯৯১ এর ধারা ৩৭(৩) অনুযায়ী মাসিক ২ শতাংশ হারে প্রাথমিক সুদের পরিমান আসে ৯ কোটি ২৬ লক্ষ ৮২ হাজার ৫৬৪ টাকা।
লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেড এর মূল্য সংযোজন কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ এর বিষয়ে জানতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) খাজা শাহরিয়ার এর সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
পরে তাকে তার মুঠোফোন নাম্বারে এই বিষয়ে জানতে একটি ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও তিনি তার কোন জবাব দেননি। পরবর্তীতে লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেড এর হেড অব ব্রান্ড এন্ড কমিউনিকেশন পরিচয়ে জনৈক রাজিউদ্দিন আহমদ প্রতিবেদককে ফোন দেন। রাজিউদ্দিন প্রতিবেদকের নিকট থেকে লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেডের মূসক ফাঁকির বিষয়টি জানতে পেরে তিনি নিজেও বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, এই বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারবেন সাইফ নামের একজন ব্যক্তি। তবে তিনি এও জানান, এই সাইফ নামের ব্যক্তি মূলত লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেড এর কোন কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারীও নন কিন্তু মিডিয়ার বিভিন্ন ইস্যুগুলো তিনিই সমাধান করেন।
লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেড এর কোন কর্মকর্তা বা দায়িত্বপূর্ণ পদে না থেকেও কিভাবে একজন ব্যক্তি এই বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারবেন এমন প্রশ্নের উত্তরে লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেডের হেড অব ব্রান্ড এন্ড কমিউনিকেশন মো. রাজিউদ্দিন বলেন, উনি এই বিষয়গুলো দেখেন।
এরপর তিনি লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেড এর মূল্য সংযোজন কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ এর বিষয়ে বিস্তারিত জানতে সেই সাইফ নামের ব্যক্তির ফোন নাম্বার প্রতিবেদককে দেন।
প্রতিবেদক সেই সাইফ নামের ব্যক্তিকে মুঠোফোনে কল দিলে জানা যায় তার পুরো নাম আবু জাফর মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। তিনি লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেড এর মূল্য সংযোজন কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগের বিষয়টি জানার পর প্রতিবেদককে বলেন, কিছু দিন সময় দেওয়ার জন্য। যেন তিনি কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে এই বিষয়ে যথাযথ মন্তব্য জানাতে পারেন।
প্রায় দশদিন সময়ক্ষেপনের পর তিনি প্রতিবেদককে জানান, এটা ভ্যাটের ওখান থেকে একটা অডিট হয়েছে। সেই অডিটে ওনারা জানিয়েছেন একটা টাকার (মূসক) অংকে গ্যাপ হয়েছে। সেটা আমরা ওনাদের সাথে সমাধান করার চেষ্টা করছি।