আগামী মাসে আসছে ই-কমার্স নির্দেশিকা
বর্তমানে ই-কমার্স নিয়ে কোনো নীতিমালা না থাকায় দেশে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের মত করে তৈরি করা নানা শর্ত দিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছে। এর ফলে অগ্রিম মূল্য পরিশোধের পরেও পণ্যের জন্য মাসের পর মাস অপেক্ষা করাচ্ছে কোনো প্রতিষ্ঠান। পণ্য না পেলে টাকা ফেরত পাওয়া নিয়েও ভোগান্তিতে পড়ছে সেবা গ্রহিতারা। তবে এসব ভোগান্তির দিন শেষ হচ্ছে। আসছে নতুন ই-কমার্স নির্দেশিকা। ডিজিটাল কমার্স নির্দেশিকা ২০ জুন ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সব কিছু ঠিক থাকলে জুলাই মাসে গেজেট প্রকাশ করা হবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
নির্দেশনার বিষয়ে কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেল। এই সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান জানান, আমরা ডিজিটাল কমার্স নির্দেশিকা ২০২১ বিষয়ে মতামতের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। অনেকে মতামত দিয়েছেন। তবে যেসব সংশোধনী চাওয়া হয়েছে সেগুলো তেমন মেজর বিষয় নয়। ১৭ জুনে আরও একটি মিটিং রয়েছে। যদি লকডাউন চলমান থাকে তাহলে মিটিংটি ভার্চুয়াল করা হবে।
জানা যায়, দেশে প্রচলিত ডিজিটাল কমার্স পলিসি ২০১৮ এর বিধি অনুসারে ডিজিটাল কমার্স নির্দেশিকা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে এই প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ হিসেবে গঠন করা হয় ডিজিটাল কমার্স সেলের উপদেষ্ঠা পরিষদ। চলতি বছর ফ্রেব্রুয়ারিতে খসড়া ডিজিটাল কমার্স নির্দেশিকা ২০২১ বিভিন্ন সেক্টরের মতামতের জন্য প্রেরণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর সভাপতি শমী কায়সার জানান, ডিজিটাল কমার্স নির্দেশিকা ২০২১ এর বিষয়ে তিন মাস ধরে লাগাতার বৈঠক করছি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে। আমরা চেয়েছি যাতে সুন্দর একটি নির্দেশিকা তৈরি করা যায়। সেইসঙ্গে এটা যাতে দ্রুত বাস্তাবায়ন করা হয় সে বিষয়েও অনুরোধ জানিয়ে আসছি।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে ই-কমার্স খাত এখন বেশ প্রসারিত হয়েছে। মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি হয়েছে। তবে আস্থা তৈরির পাশাপাশি অনাস্থাও তৈরি হয়েছে। আমরা আস্থার কারণগুলোকে চিহ্নিত করে সে বিষয়ে কাজ করছি।
বর্তমানে কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান পণ্য বিক্রিতে নানা প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করছে। এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগের পাহাড় জমেছে। কয়েক বছর এসব অভিযোগের ভিত্তিতে শুনানি করতো ভোক্তা অধিদপ্তর। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হতো। তবে এখন আর সেটা করা হয় না।
জানা যায়, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের তৈরি করা নীতিমালার মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করার ফলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। দুই পক্ষে আপস করেই ছেড়ে দিতে হচ্ছে। কোনো শাস্তি দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে ই-কমার্স ব্যবসা কিভাবে চলবে সে বিষয় সঠিক কোনো গাইডলাইন নাই। ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা চূড়ান্ত হলে তারা আর নিজেদের মতো করে ব্যবসা করতে পারবে না।
ডিজিটাল কমার্স নির্দেশিকা ২০২১ বিভিন্ন বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পণ্যের অর্ডার দেওয়ার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা ক্রেতার হাতে পৌঁছে দেওয়া, তাতে ব্যর্থ হলে অগ্রিম নেওয়া পণ্যমূল্য জরিমানাসহ ফেরত দেওয়া, খারাপ পণ্য সরবরাহকে ফৌজদারি আইনের আওতায় প্রতারণা হিসেবে গণ্য করাসহ বিভিন্ন বিধান রেখে ই-কমার্স ব্যবসার জন্য নীতিমালা হচ্ছে।
অর্ডার সম্পন্ন হওয়ার পরে এলাকা ভেদে ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি না দিলে জরিমানা গুনতে হবে ই-কমার্স কোম্পানিকে। এটি করতে ব্যর্থ হলে ই-কমার্স কোম্পানিকে জরিমানার পাশাপাশি গ্রাহককে টাকা ফেরত দিতে হবে। এমনকি তারা পণ্য সরবরাহ জালিয়াতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হবে।