তথ্য প্রযুক্তি খাতে আগামীর রপ্তানী গন্তব্য উজবেকিস্তান
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে আমাদের যে টার্গেট ৫ বিলিয়ন ডলার এক্সপোর্ট করা, সে ক্ষেত্রে উজবেকিস্তান আমাদের একটি রপ্তানি গন্তব্য হতে পারে আমাদের হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার ও বিপিও (বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং) সেক্টরের জন্য।
২০২৫ সালের মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে রপ্তানি আয় ৫ বিলিয়ন (৫০০ কোটি) ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যের কথা জানিয়ে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক বলেন, সে ক্ষেত্রে উজবেকিস্তান হতে পারে রপ্তানি গন্তব্য।
দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরিতে দেশটির সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হবে বলেও জানান তিনি। উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দে বৃহস্পতিবার একটি আইটি পার্ক পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
উজবেকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের নতুন দ্বার খুলতে রাজধানী তাসখন্দ সফরে আছেন ১৪ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল। এ দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
উজবেকিস্তানে সাংবাদিকদের পলক বলেন, প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে লেনদেন, কেনাকাটাসহ নিত্যদিনের হাজারও কাজ নিমিষে শেষ করতে ইন্টারনেটের সেবার আওতায় এসেছে ১০ কোটি মানুষ। প্রযুক্তির উৎকর্ষে দেশে কর্মসংস্থান যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে রপ্তানি আয়ও। এ আয় এখন প্রায় এক বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলার।
মাথাপিছু আয়সহ আরও কিছু সূচকে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে উজবেকিস্তান। জনসংখ্যা মাত্র সাড়ে তিন কোটি। কিন্তু তথ্য-প্রযুক্তিতে এখনও অনেকটাই পিছিয়ে আছে দেশটি।
ইন্টারনেটের গতির এমন করুণ দশা যে, দিনের বেশির ভাগ সময়েই তা ব্যবহার অনুপযোগী থাকে বলে জানিয়েছে দেশটির বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সফরে থাকা প্রতিনিধিদলের সদস্য ও সংবাদকর্মীরাও এ কথা জানিয়েছেন। তাই তথ্য-প্রযুক্তি খাতে আলো ফেলতে চায় বাংলাদেশ।
গত এক দশকে এ খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি, সাফল্যের গল্পটিই তুলে ধরা হয়েছে উজবেকিস্তানের ব্যবসায়ীদের কাছে।
পলক বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের স্থপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তার আইসিটি-বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের দূরদর্শিতার কথা বিশ্ববাসীকে জানান দেয়ার সময় এসেছে। তিনি বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতের কর্মীর সংখ্যা ৩০ লাখে উন্নীত করতে চায় সরকার। আর তা বাস্তবায়নে বিনিয়োগ আকর্ষণ মূল লক্ষ্য।
উজবেকিস্তান বাংলাদেশের বিষয়ে আগ্রহী জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা যেভাবে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে, বাংলাদেশে তারা এ বছরই ভিজিট করতে চান। একটা সমঝোতা স্মারক আমরা স্বাক্ষর করার ব্যাপারে সম্মত হয়েছি, যেখানে সাইবার সিকিউরিটি, হাইটেক পার্কে বিনিয়োগ অপরচ্যুনিটি তৈরি করা, দুই দেশের স্টার্টআপদের মধ্যে একটা এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম হবে।’
উজবেকিস্তানে হাইটেক পার্কে বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীদের যে সুযোগ রয়েছে সেটাকে কাজে লাগাতে চান বলেও জানিয়েছেন জুনাইদ আহ্মেদ পলক।
এ খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি নিয়ে বিস্মিত উজবেক প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল টেকনোলজি-বিষয়ক উপদেষ্টা অলিমজন ওমারভ। তিনি বলেন, ‘দুটি বিষয়কে মাথায় রেখে আমরা আমাদের সহযোগিতার ক্ষেত্রটা বাড়াতে চাই। প্রথমত, আমরা একটা ওয়ার্কিং গ্রুপ তৈরি করব। তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে দুই দেশের পারস্পরিক যোগাযোগ বাড়াতে একটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের বিষয়টিকে এগিয়ে নেবেন তারা।
বাংলাদেশ সফরে আগ্রহের কথা জানিয়ে ওমারভ আরও বলেন, প্রযুক্তি খাতের প্রতিনিধি, সরকারের কর্মকর্তা, তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে আমরা একটা ডেলিগেশন টিম তৈরি করব। আমাদের চেষ্টা থাকবে বাংলাদেশ সফর করার, যেন প্রযুক্তি শিল্পকে এগিয়ে নেয়া অভিজ্ঞতাটা আমরা বাংলাদেশ নিতে পারি।
এছাড়াও তাসখন্দে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পাশাপাশি ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (আইএসডিবি গ্রুপ) বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নেবে প্রতিনিধিদলটি। বিশ্বের ৫৭ সদস্য দেশের প্রতিনিধিরা দুই দিনের এ সম্মেলনে যোগ দেবেন।
করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাব কাটিয়ে অর্থনীতিকে দ্রুত সচল করার উদ্দেশে তাসখন্দে মিলিত হতে যাচ্ছেন সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিরা। আইএসডিবির সম্মেলনের পাশাপাশি বিভিন্ন পার্শ্ববৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল উজবেকিস্তানে বাণিজ্যের নতুন সম্ভাবনা খুঁজে বের করবে।