ঢাবি শিক্ষক সমিতিতে বিনা ভোটে জয় নীল দলের


প্রকৌশল নিউজ :
ঢাবি শিক্ষক সমিতিতে বিনা ভোটে জয় নীল দলের
  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশের নামের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের রয়েছে গৌরবোজ্জল ভূমিকা। কিন্তু সেখানেই ঘটলো এক নজিরবিহীন ঘটনা। দেশের গণতন্ত্রের সূতিকাগারা হিসেবে খ্যাত ঢাবিতেই ভোট ছাড়াই নির্বাচনের ফলাফল হয়ে গেছে। সেখানে জয় পেয়েছে ভোটের মাঠে থাকা সরকারপন্থী নীল দল। 

বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের বর্জনের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ২০২১ সালের কার্যকর পরিষদ নির্বাচনে বিনা ভোটে সব পদে জিতেছে আওয়ামীলীগ পন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দল। সাদা দল বলছে, এটি ‘নজিরবিহীন একদলীয় নির্বাচন’৷ তবে সাদা দলের বক্তব্যকে ‘অযৌক্তিক, খোঁড়া ও ভিত্তিহীন’ বলছে নীল দল।

৩০ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির এই নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গতকাল রোববার সন্ধ্যায় প্রকাশিত চূড়ান্ত প্রার্থীতালিকা অনুযায়ী, সমিতির ১৫টি পদের কোনোটিতেই নীল দলের প্রার্থীদের বাইরে কেউ প্রার্থী হননি। ফলে, ভোট ছাড়াই নির্বাচিত হচ্ছেন আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকেরা। 

করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষকদের স্বাস্থ্যঝুঁকির যুক্তি দিয়ে গত বৃহস্পতিবার শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দেয় সাদা দল। করোনার কারণে গত মার্চ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ আছে।

এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন আয়োজনকে ‘অযৌক্তিক’ উল্লেখ করে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ার পর নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব দিয়ে সাদা দল শিক্ষক সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও নির্বাচন পরিচালক বরাবর চিঠি দিলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। নীল দল প্রথম থেকেই বলে আসছিল, শিক্ষক সমিতির এই নির্বাচন হচ্ছে গঠনতান্ত্রিক বাধ্যবাধকতার কারণেই। এমন দৃশ্যপটের মধ্যেই বিনা ভোটে নীল দলের প্রার্থীরা জয়ী হলেন।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি পদে আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন মো. রহমত উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক পদে পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া জয়ী হয়েছেন। এ ছাড়া সহসভাপতি পদে অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাবিতা রিজওয়ানা রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবদুর রহিম এবং কোষাধ্যক্ষ পদে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক মো. আকরাম হোসেন জয়ী হয়েছেন।

১০টি সদস্যপদে জিতেছেন নীল দলের অধ্যাপক জিয়াউর রহমান, অধ্যাপক এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া, অধ্যাপক সাদেকা হালিম, অধ্যাপক ইসতিয়াক মঈন সৈয়দ, অধ্যাপক কে এম সাইফুল ইসলাম খান, অধ্যাপক মো. আমজাদ আলী, অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার, অধ্যাপক মুহাম্মাদ আবদুল মঈন, অধ্যাপক আবু সারা শামসুর রউফ ও অধ্যাপক নিসার হোসেন।

শিক্ষক সমিতির নির্বাচন পরিচালক অধ্যাপক জাকির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, বিকল্প প্রার্থী না থাকায় নীল দলের প্রার্থীরাই জয়ী হয়েছেন। 

প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাদা দলের নেতা অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘এটি একটি অস্বাভাবিক নির্বাচন। শিক্ষকদের মনে এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই।’

এই নির্বাচনের প্রক্রিয়া ও ফলাফল নিয়ে ক্ষুব্ধ সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলামও নীল দলকে একহাত নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যরাতের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অটো পাস করেছে। তারা এখন শিক্ষার্থীদেরও অটো পাস দিচ্ছে। শিক্ষক সমিতির নির্বাচন এই অটো পাসের সংস্কৃতিরই অংশ। এটি নজিরবিহীন একদলীয় নির্বাচন। শিক্ষক সমিতির ইতিহাসে এমন নির্বাচন কখনো হয়েছে কি না সন্দেহ। আওয়ামী লীগের চরিত্র তাদের অনুসারী শিক্ষকদের মধ্যে সঞ্চারিত হয়েছে।’

সাদা দলের সব অভিযোগের জবাব দিয়েছেন নীল দলের নেতা ও শিক্ষক সমিতির নতুন সভাপতি অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহ। তিনি বলেছেন, ‘সাদা দল যেসব বক্তব্য দিচ্ছে, সেগুলো অযৌক্তিক, খোঁড়া ও ভিত্তিহীন। নির্বাচনের প্রক্রিয়াটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই তাঁরা এসব কথা বলছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মোটামুটি সব কার্যক্রমই যেখানে চলছে, সেখানে নির্বাচনে সমস্যা কোথায়? আসলে তাঁদের উদ্দেশ্য নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বিতর্কিত করা। 

শিক্ষক সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে সংগঠনই তো থাকবে না। প্যানেল কোনো আইনগত বিষয় নয়, এখানে ব্যক্তি পদের বিপরীতে নির্বাচন করেন। সমিতির গঠনতন্ত্র ও বিধিবিধান মেনেই নির্বাচন হয়েছে।’