মিয়ানমারে বিক্ষোভকারীরা অস্ত্র তুলে নিচ্ছেন : ইউএন হাইকমিশনার
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মিশেল ব্যাশেলে জানিয়েছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর নিষ্ঠুরভাবে বিক্ষোভ দমনের কারণে “অনেকেই অস্ত্র হাতে তুলে নিচ্ছেন”। এই পরিস্থিতির প্রতি সতর্কতা জানিয়ে তিনি বলেন, “২০১১ সালে সিরিয়ার মতোই এক অবস্থার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে এবং একটি পুরোপুরি সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে এগুচ্ছে।” গতকাল শনিবার প্রকাশিত নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে।
মিয়ানমারে সামরিক জান্তা বিরোধী বিক্ষোভ দিন দিন শক্তিশালী হয়ে উঠছে। ক্ষমতা দখলকারী সামরিক বাহিনী গণতন্ত্র পুনর্বহালের দাবিতে চলমান আন্দোলনকে কঠোর হাতে দমনের পদক্ষেপ নিলেও বিক্ষোভকারীরা রাজপথ ছাড়তে নারাজ। বরং শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হওয়া বিক্ষোভ ধীরে ধীরে আত্মরক্ষা ও পাল্টা জবাব দেওয়ার পথে এগুচ্ছে। আর এক্ষেত্রে তাদের হাতিয়ার ঘরে বানানো অস্ত্র, গুলতি আর পাথর।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় শহর ইয়াংগনের শহরতলী থারকেতায় এক বিক্ষোভকারী প্রতিবেদকদের জানান, ২৭ মার্চের হত্যাকাণ্ডের পর তারা ২০ জনের একটি দল গড়ে তুলেছেন।
কো থি হা নামের ওই বিক্ষোভকারী বলেন, “অভ্যুত্থানের পর আমরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের পথেই ছিলাম। কিন্তু যখন তারা এতোগুলো মানুষকে হত্যা করলো, তখন আর শান্তিপূর্ণ আন্দোলন নিয়ে এগুনো যায় না। আমাদের পাল্টা জবাব দিতে হবে।”
বিক্ষোভকারীরা হাতে বানানো বন্দুক, পাথর, গুলতি, এয়ারগানের মতো খুবই সাদামাটা অস্ত্র নিয়ে সামরিক বাহিনীর মোকাবেলায় নেমেছে। হাতের কাছে যা পাওয়া যাচ্ছে সেসব উপকরণ দিয়েই অস্ত্র বানাচ্ছে তারা। যেমন এয়ারগান বানাতে ব্যবহার করা হচ্ছে প্লাস্টিকের পাইপ, গুলি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বল বেয়ারিং।
গুলতিতে তারা খেলার গোল মার্বেল বা গোলাকার পাথর ব্যবহার করছে। ঘরে বানানো ধোঁয়া-বোমার উপকরণে সাধারণত গান পাউডার বা পটাশিয়াম নাইট্রেট - যা কৃষিতে সার হিসেবে ব্যবহৃত হয় - ব্যবহার করা হচ্ছে।
বিক্ষোভকারীদের এসব অস্ত্র যতোটা না আক্রমণের জন্য তার চেয়ে বেশি আত্মরক্ষামূলক। তাদের এয়ারগান কোন মারণাস্ত্র নয়। কিন্তু এটা দিয়ে ১০০ ফুট দূরের লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করা যায়। বিক্ষোভকারীরা এটা ব্যবহার করে মূলত সেনাদের এগিয়ে আসার গতি কিছুটা ধীর করার চেষ্টা করে।
পালানোর মতো পরিস্থিতি দেখা দিলে ধোঁয়া-বোমা ব্যবহার করা হয় যা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সামনে কিছুটা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে।
এসব উদ্ভাবনী অস্ত্রশস্ত্র ছাড়াও আন্দোলনকারীরা নিজেদের মধ্যে সাংকেতিক শব্দ চালাচালি করছে। যেমন ‘বিরিয়ানি রান্না হচ্ছে’ মানে অস্ত্র তৈরি করা হচ্ছে, ‘অতিথিদের বিরিয়ানি দেওয়া হচ্ছে’ মানে সেনাদের লক্ষ্য করে বন্দুক ছোড়া হচ্ছে। “বিগ বিরিয়ানি” অর্থ হলো পাল্টা হামলা হিসেবে একটি আগুন দেওয়ার ঘটনা।
এ মাসেই কালেই শহরে বিক্ষোভকারীদের একটি দল তাদের এয়ারগান ও শিকারের রাইফেল নিয়ে সামরিক বাহিনীর হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। নিজেদের তারা ‘কালেই সিভিল আর্মি’ হিসেবে ঘোষণা করে। তারা শহরের প্রান্তে বালুর বস্তা দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করে নিজেদের এসব হালকা অস্ত্র নিয়ে সেনাদের মোকাবেলা করার প্রস্তুতি নেয়।
সেনারা ভোরে শহরের প্রান্তে পৌঁছানোর পর ব্যারিকেড সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয়, কিন্তু কালেই সিভিল আর্মি নির্দেশ অমান্য করে। সেনারা ফিরে গিয়ে আবার সকাল ১০টায় সেখানে উপস্থিত হয়ে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে সরাসরি গুলি করে ও গ্রেনেড চার্জ করে।
এ হামলায় শহরটির অন্তত ১১ বাসিন্দা নিহত হয় এবং ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বন্দীদের তুলে নেওয়ার আগে তাদের সারিবদ্ধ দাঁড় করিয়ে জব্দ করা অস্ত্রসহ ছবি তোলা হয়।
নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, কালেই সিভিল আর্মির এই পরাজয় সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে একটি পরিস্কার বার্তা যে প্রতিরোধের জন্য যারা অস্ত্র তুলে নেবে এবং গোষ্ঠীবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করবে তাদেরই সমূলে ধ্বংস করা হবে। সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস