করোনার নতুন ভেরিয়েন্ট, ডব্লিউএইচওর জরুরি বৈঠক
দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা দক্ষিণ আফ্রিকা ও প্রতিবেশী দেশ বোস্তানাতে করোনাভাইরাসে নতুন একটি ধরন শনাক্ত করার পর এ নিয়ে জরুরি বৈঠক ডেকেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। আজ শুক্রবার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
বিবিসি, ব্লুমবার্গ, এএফপির প্রতিবেদনে করোনাভাইরাসের এই নতুন ধরণের কথা জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আপাতত বিজ্ঞানীরা নতুন এই ধরনের নাম দিয়েছেন বি.১.১.৫২৯ সার্স–কভ–২। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডেলটা, গামা, বেটার মতো নতুন এই ধরনের একটি গ্রিক নাম নির্ধারণ করে দেবে শীঘ্রই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেটা ধারণা করা হচ্ছিল, তার চেয়ে দ্রুত ছড়ায় এই ভেরিয়েন্ট। এই নতুন ধরণের বিস্তৃতি ঘটলে দেশটিতে করোনার চতুর্থ ঢেউ দেখা দিতে পারে। তাদের আশঙ্কা, খুব দ্রুত সেই ধরন আন্তর্জাতিকভাবেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। ডব্লিউএইচওর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই ভেরিয়েন্টটি নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে।
দক্ষিন আফ্রিকার দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে জিনোম সিকোয়েন্সিং করছেন বায়ো-ইনফরমেটিক্সের অধ্যাপক তুলিও ডি অলিভেরা। তিনি বলেন, ‘নতুন এই ধরণটির স্পাইক প্রোটিনে অস্বাভাবিক মাত্রায় মিউটেশন হচ্ছে যা তাকে অন্য ধরণগুলোও চেয়েও আলাদা করে তুলেছে।’ এটি এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত টিকাগুলোর সুরক্ষাকে পাশ কাটাতে বেশি সক্ষম হতে পারে এবং মহামারী পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে।’
দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জো ফালা এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘নতুন এ ধরণের মিউটেশন আমাদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। আমরা আশা করেছিলাম, এ বছরের ডিসেম্বর বা আগামী বছর জানুয়ারি পর্যন্ত করোনার নতুন ঢেউ আমরা ঠেকিয়ে রাখতে পারব। কিন্তু পরিস্থিতি ভিন্ন কথা বলছে।’
দক্ষিণ আফ্রিকার সংক্রামক ব্যাধিবিষয়ক ইনস্টিটিউটের ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজিস্ট অ্যান ভন গ্যাটবার্গ জানিয়েছেন, সম্প্রতি তারা একশরও বেশি রোগী শনাক্ত করেছেন যারা বি.১.১.৫২৯ সার্স–কভ–২ ধরণে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রতিবেশী দেশ বোস্তানাতেও এই ধরণে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
অ্যান ভন বলেন, ‘নতুন এ ধরণ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। বোস্তানাতে টিকা নেওয়া ব্যক্তিরা যখন এই নতুন ধরণে আক্রান্ত হলেন, তখন তা উদ্বেগেরই বটে।তারা আমাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন।’
দক্ষিণ আফ্রিকার ইউসিএল জেনেটিক্স ইনস্টিটিউটের পরিচালক ফ্রাঁসোয়া ব্যালোক্স বলেছেন, এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে যারা দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিচ্ছেন না এবং যাদের মধ্যে সংক্রমণের মাত্রা তীব্র তারাই এ নতুন ধরণটির সবচেয়ে ‘বড় বাহক’ হয়ে উঠতে পারেন। সারা বিশ্বে এখন ৮২ লাখ এইডস আক্রান্ত রোগী রয়েছেন।
এখন পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার গৌতেং প্রদেশে ৭৭ জনের দেহে এই ধরনটি পাওয়া গেছে; এর বাইরে বতসোয়ানায় যে চারজন ও হংকংয়ে একজনের দেহে এ ধরন শনাক্ত হয়েছে। তারা মূলত দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ওই দেশগুলোতে গিয়েছেন বলে জানা গেছে।
গৌতেংয়ে শনাক্ত কোভিড রোগীদের ৯০ শতাংশের মধ্যেই সম্ভবত এখন এই বি.১.১.৫২৯ পাওয়া যাবে এবং ধরনটি ‘হয়তো দক্ষিণ আফ্রিকার সব প্রদেশেই মিলবে’ বলে অনুমান বিজ্ঞানীদের।
নতুন এ ধরনটি মোকাবেলায় যুক্তরাজ্য এরই মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা ও এর প্রতিবেশী ৫ দেশ থেকে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, তারা দক্ষিণ আফ্রিকায় পাওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের ওপর নজর রাখছে। ঝুঁকির পরিমাণ বেশি বলে মনে হলে দক্ষিণ আফ্রিকা ও এর আশপাশের দেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় ঢুকতে ইচ্ছুকদের জন্য সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলেও জানিয়েছে তারা।
নিউজিল্যান্ড বলেছে, তারা কোভিডের এই নতুন ধরনের জন্যও প্রস্তুত। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বি.১.১.৫২৯ সার্স–কভ–২ নিয়ে সতর্ক করে রাজ্যগুলোকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ দেশ’ থেকে আগতদের ওপর নজর রাখতে নির্দেশ দিয়েছে।