ডাক্তার-পুলিশের পাল্টাপাল্টি প্রতিবাদ
রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসক ডা. সাঈদা শওকত জেনি পুলিশের হাতে অযাচিত হেনস্থার শিকার হয়েছেন বলে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)। একইসঙ্গে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি জানিয়েছে স্বাচিপ। অপরপক্ষে, লকডাউনে পরিচয়পত্র চাওয়ায় ডাক্তার সাঈদা শওকত ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের সঙ্গে যে আচরণ করছেনে তার তীব্র প্রতিবাদ ও শাস্তি দাবি করেছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ)’র পক্ষ থেকেও ডাক্তার নিগ্রহের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করা হয়েছে বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়। সমাজবিজ্ঞানীরাও মনে করেন, গতকাল (রোববার) এর ঘটনায় ত্রি-মুখী ইগো ফাইট হয়েছে, যা সমাজকে নেতিবাচক বার্তা দেয়।
ঘটনার পর উভয় পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। তাতে তারা পরস্পর পরস্পরকে দোষারোপ করেছেন। সেখানে স্বাচিপের পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, করোনাকালীন এই সংকটময় পরিস্থিতিতে যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে চিকিৎসকরা সম্মুখসারিতে ঝুঁকি নিয়ে লড়ে যাচ্ছে তখন হাসপাতালের দায়িত্ব শেষে বাসায় ফেরার পথে পুলিশ ডা. জেনির গাড়ি থামিয়ে তার কাছে পরিচয়পত্র দেখতে চায়। এ সময় নিজের পরিচয় ও গাড়িতে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের লোগো সম্বলিত স্টিকার, পরিচালক ইস্যু করা পাস ও বিএসএমএমইউর লোগোসহ ডাক্তারের নামাঙ্কিত অ্যাপ্রন দেখালেও সবকিছুকে ভুয়া বলে ডা. জেনিকে ইচ্ছাকৃতভাবে হেনস্থা করা হয়।
অপরদিকে, বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন পক্ষ থেকে বলা হয়, 'ওই স্থানে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের উপস্থিতিতে চেকপোস্ট চলাকালে একজন চিকিৎসকের কাছে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরিচয়পত্র দেখাতে বলা হয়। এতে তিনি অত্যন্ত ন্যাক্কারজনকভাবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। যা একজন পেশাদার ও সচেতন নাগরিকের কাছ থেকে কোনোভাবেই কাম্য নয়। তিনি শুধু ওই পুলিশ সদস্যদেরই অপমান করেননি, গোটা পুলিশ বাহিনীকেই কটাক্ষ ও হেয় প্রতিপন্ন করেছেন।'
বিএমএ’র সভাপতি ও চিকিৎসক নেতা মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, এই করোনায় একশত ৪০ জন ডাক্তার মারা গেছেন, সাংবাদিক ভাইরা মারা গেছেন এবং পুলিশ ভাইরাও মারা গেছেন। আমাদের সাথে যদি এমন হয় তবে আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো।
তিনি আরো বলেন, মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে কথা বলেছি, তার সদয় দৃষ্টি কামনা করেছি। আমরা বিবৃতি দিয়েছি ঠিক আছে কিন্ত আমরা চাই, পরবর্তীতে যেন এমন ঘটনা না ঘটে।
বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বলেন, আমরা গত কালকের ঘটনা নিয়ে একটা বিবৃতি দিয়েছি। আর আমি ব্যাক্তিগতভাবে মনে করি, প্রত্যেক পেশার উপর সকলের সম্মান আর শ্রদ্ধা থাকতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমি মনে করি, এই করোনাকালীন সময়ে যেন সবাই সংযত থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিককভাবে পালন করতে পারি। কারো প্রতি বৈরিতা কোনভাবেই কাম্য নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের প্রথম নারী ডিন সাদেকা হালিম বলেন, আমাদের প্রত্যেকে অপরের দায়িত্বকে সম্মান দিয়ে কাজ করতে হবে। আমার কাছে মনে হয়েছে এখানে ত্রি-মুখী ইগো ফাইট হয়েছে আর সেখানে নারীর উপস্থিতিও ছিল। আবার এটাও মনে করছি সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের ছোট করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘কোটার এতো বড়াই করা উচিত হয় নাই। কেননা: স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা অংশগ্রহণ করেছেন তারা কোন কিছু পাবার জন্য তো যুদ্ধ করেনি। কিন্ত তাদের সন্তানরা তাদের সম্ম্মান রাখার জন্য কোটা নিয়ে এমন ‘বড়াই’ করতে পারে না। তারা এমন করে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ক্ষুন্ন করেছেন বলে আমি মনে করি।
আমার কাছে ব্যাক্তিগতভাবে মনে হয়েছে যে, এমন কূরুচিপূর্ণ ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে তা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয় নাই।