'শক্তি সঞ্চার'সহ ৭ জাহাজে ভাসানচরে যাচ্ছেন রোহিঙ্গারা


প্রকৌশল নিউজ ডেস্ক :
'শক্তি সঞ্চার'সহ ৭ জাহাজে ভাসানচরে যাচ্ছেন রোহিঙ্গারা
  • Font increase
  • Font Decrease

কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলোতে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে স্বেচ্ছায় স্থানান্তরে রাজি হওয়া এক হাজার ৬৪২ জনকে  জাহাজে করে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের বহনকারী জাহাজের ছয়টি নৌবাহিনীর, একটি সেনাবাহিনীর। সেনাবাহিনীর জাহাজটির নাম ‘শক্তি সঞ্চার’। 

শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চট্টগ্রামের বোট ক্লাব এলাকায় কর্ণফুলী নদীতে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে জাহাজে করে ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা দেন তারা। এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ‘চল চল ভাসানচর চল’ স্টিকার লাগানো বাসে করে চট্টগ্রামে পৌঁছান রোহিঙ্গারা। এরপর শুক্রবার সকালে স্থানীয় প্রশাসন তাদের সাতটি জাহাজে তুলে দেয়।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ সামছু-দৌজা জানান, ‘শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে ১৬৪২ জন রোহিঙ্গা ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। তারা আড়াই-তিন ঘণ্টার মধ্যে (দুপুরে) পৌঁছে যাবে। সেখানে পৌঁছানোর পর রির্পোট করে, তাদের খাবার খাওয়ানোর পর তাদের জন্য ভাসানচরে গড়ে তোলা আবাসন ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হবে।’

রোহিঙ্গা স্থানান্তর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সকাল ৬টার দিকে দুটো জাহাজে মোট এক হাজার ১৯টি লাগেজ পাঠানো হয়। এরপর সাড়ে ১০টার দিকে রোহিঙ্গাদের বহনকারী জাহাজগুলো রওনা হয়। 

এ বিষয়ে নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) খোরশেদ আলম খান জানান, ‘বৃহস্পতিবার সকালে কক্সাবাজারের রোহিঙ্গা শিবির থেকে রোহিঙ্গাদের গাড়ির বহর ভাসানচরে যাওয়ার জন্য রওনা দেয়। শুক্রবার জাহাজে করে রওনা দেন ১৬৪২ জন রোহিঙ্গা। শুক্রবার দুপুরে তাদের নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ভাসানচরে হস্তান্তর করা হবে। আমরাও সেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। ’

ভাসানচরে যাত্রাকারী এক রোহিঙ্গা বলেন, ‘আমরা ভাসানচরে যাত্রা করতে জাহাজে উঠে পরেছি। এখন অনেক ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে বহুদিন পর একটি কূল কিনারা খুঁজে পাচ্ছি। কক্সবাজারের ক্যাম্প থেকে সেখানে আমাদের উন্নত জীবন হবে, তাই চলে যাচ্ছি। কেউ আমাদের জোর করেনি, স্বেচ্ছায় সেখানে যাচ্ছি।’

নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) দীপক জ্যোতি খীসা বলেন, ‘কক্সবাজারের শরাণার্থী শিবিরের একটি দল শুক্রবার সকালে ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। আমারাও সেভাবে প্রস্তুত রয়েছি।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১২০টি ক্লাস্টার নিয়ে তৈরি ভাসানচর এক লাখ মানুষের আবাসনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। রোহিঙ্গা শরণার্থী ছাড়াও এখানে এনজিও কর্মকর্তা, দূতাবাসের কর্মকর্তা, উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের জন্য উন্নত ও আধুনিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অব্যাহত হামলা, নিপীড়ন ও হত্যার কারণে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয় সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এছাড়াও এর আগে এসে আশ্রয় নিয়েছিল বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা। বর্তমানে তাদের সংখ্যা কমপক্ষে ১১ লাখ। এ পরিস্থিতির মধ্যেই রোহিঙ্গাদের উখিয়া ও টেকনাফের ঘিঞ্জি ক্যাম্পগুলো থেকে সরিয়ে আরও নিরাপদে রাখতে নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ভাসানচরে নিজস্ব অর্থায়নে বিপুল ব্যয়ে আশ্রয় ক্যাম্প নির্মাণ করে সেখানে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ভাসানচরের আশ্রয় ক্যাম্পে কমপক্ষে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করতে পারবে।

গত মে মাসে অবৈধভাবে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া পৌঁছানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে দুই দফায় নারী-শিশুসহ মোট ৩০৬ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হয়।