করোনা দেশের উন্নয়ন থামাতে পারেনিঃ রাষ্ট্র্রপতি
বৈশ্বিক করোনা মহামারী বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে ঠেকাতে পারেনি উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের 'সফল বাস্তবায়নের’ ফলেই করোনাভাইরাস মহামারী দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি থামিয়ে দিতে পারেনি।
বুধবার দেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-এর সপ্তম আসরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের মাল্টি পারপাস হলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে প্রদর্শনীর উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
আবদুল হামিদ বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার ২০০৮ সালে যে ‘দূরদর্শী অঙ্গীকার’ করেছিল, তার সুফল আজ মানুষ ঘরে বসে পাচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, মহামারীর মধ্যেও ই-কমার্সের মাধ্যমে ঘরে বসে কেনা-বেচা করা, অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম, ভার্চুয়াল কোর্টের মাধ্যমে বিচারিক কার্যক্রম, টেলি মেডিসিন সেবাসহ বিভিন্ন অনলাইন সেবা এ কঠিন সময়ে জীবনযাত্রাকে ‘অনেকটাই সহজ’ করে দিয়েছে।
অফিস-আদালতে চালু করা ই-নথি ব্যবস্থা সরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবা কার্যক্রমে গতিশীলতা বাড়িয়েছে, তাতে সরকারি সেবা কার্যক্রম চালু রাখা এবং নাগরিকের কাছে সেবা পৌঁছানোও সহজ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন রাষ্ট্রপ্রধান।
এছাড়া সেমিনার, কনফারেন্স, প্রদর্শনী, ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড সম্মাননা ও ভার্চুয়াল কনসার্টেরও আয়োজন রয়েছে এবার।
এবারের প্রদর্শনীতে ই-গভর্নেন্স, সফটওয়্যার ও মোবাইল উদ্ভাবন, মেইড ইন বাংলাদেশ, বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং, ই-কমার্স, স্টার্টআপ বিষয়ক বিভিন্ন চিন্তা ও অর্জনগুলো গুরুত্ব পাচ্ছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন এবং ফ্রিল্যান্সিং খাতে নারীরা যাতে এগিয়ে যেতে পারে, সে ব্যাপারে আরও উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্মকে স্বাবলম্বী করার ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বর্তমানে অন্যান্য খাতে চাকরির সুযোগ কমে এলেও ফ্রিল্যান্সিং এর কারণে অসংখ্য তরুণের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। বর্তমানে দেশে সাড়ে ৬ লক্ষ সক্রিয় ফ্রিল্যান্সার রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, তবে ফ্রিল্যান্সিং পেশায় পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও যাতে সমানতালে এগিয়ে যেতে পারে, সে ব্যাপারেও উদ্যোগী হতে হবে। এর পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নিয়মিত গবেষণা ও মৌলিক জ্ঞান সৃষ্টিতে আমাদের আরো মনোযোগী হতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের ‘রোডম্যাপ’ ঘোষণার দশ বছর পর সরকার ‘আমার গ্রাম-আমার শহর, সুশাসন’ ও তারুণ্যের শক্তি’- এই তিনটি উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নেয়। তাতে ডিজিটাল বিপ্লবের বাস্তবায়ন আরো ‘গতিশীল’ হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ আজ বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। সকল ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অভিযাত্রায় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচির বাস্তবায়ন ডিজিটাল বাংলাদেশের ভিতকে আরো শক্তিশালী করেছে।
তিনি বলেন, উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত থাকলে রূপকল্প ২০২১ ও রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’ হিসেবে গড়ে তুলতে পারব বলে আমার বিশ্বাস।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ডাক, টেলি যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি এ কে এম রহমতুল্লাহ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির বক্তব্য দেন।