আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ৫ ফেব্রুয়ারি হস্তান্তর করা হয়। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করেন। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে সংস্কার প্রস্তাবের সারসংক্ষেপ গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। পাশাপাশি বিষয়টি কমিশনের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়। মোট ১৭ অধ্যায়ের প্রস্তাবের দ্বাদশ অধ্যায়ে রয়েছে অংশটি।
কমিশনের প্রতিবেদনে জনপ্রশাসনে কার্যকারিতার লক্ষ্যে সংস্কারের যৌক্তিকতা প্রসঙ্গে নাগরিক পরিষেবা প্রদানে জনপ্রশাসনের ভূমিকা, নাগরিক পরিষেবার কার্যকারিতা, আমলাতান্ত্রিক লালফিতার দৌরাত্ম সম্পর্কে প্রতিবেদনে সুপারিশমালা পেশ করা হয়েছে।
সুপারিশে আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার বিষয়ে বলা হয়, নাগরিক সেবা প্রদানের বিষয়ে প্রশাসনিক পদ্ধতি তথা আমলাতান্ত্রিক বিধিবিধান সহজতর ও ডিজিটাল করা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে জনপ্রশাসনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। সঠিক নীতি-নির্ধারণের স্বার্থে তথ্য-উপাত্ত ও পরিসংখ্যান নির্মোহভাবে বিশ্লেষণ করা এবং নীতি-নির্ধারকদের কাছে তা পেশ করার নীতি চালু করা যেতে পারে বলে সুপারিশে বলা হয়।
এতে আরো বলা হয়, রাষ্ট্রীয় সম্পদ নাগরিকদের জন্য বরাদ্দ প্রদান টার্গেট জনগোষ্ঠির চাহিদা ও তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে হতে হবে। নাগরিকদের বিবিধ সরকারি পরিষেবা প্রদানের জন্য ওয়ান-স্টপ সার্ভিস সেন্টার স্থাপন করা এবং সেখানে তাদের অভিগম্যতা সহজতর করার উদ্যোগ নিতে হবে। একটি গতিশীল ও কার্যকর পদ্ধতি চালু করতে হবে যাতে নাগরিকদের মতামত দেয়ার সুযোগ থাকে এবং তারা যেন স্বস্তি বোধ করে যে তাদের কথা শোনা হয়।
কার্য সম্পাদনে প্রযুক্তি গ্রহণ ও প্রয়োগ বিষয়ে সুপারিশে বলা হয়, কার্যবিধিমালা, মন্ত্রণালয়/বিভাগের কর্মবন্টন ও সচিবালয় নির্দেশমালা পর্যালোচনা করে তা সংশোধন বা বিয়োজন এবং অনলাইনে তা সহজলভ্য করার উদ্যোগ নিতে হবে। মন্ত্রণালয়/বিভাগগুলোকে ৫টি ক্লাস্টারে ভাগ করা যেতে পারে। সরকারি পরিষেবা সহজতর করার জন্য একটি কেন্দ্রীয় অনলাইন পোর্টাল স্থাপন করা। সরকারি পরিষেবা পদ্ধতি গতিশীল করার জন্য ই-গভর্নেন্স কৌশল বাস্তবায়ন করা। ডিজিটাল টুল ও ডাটা ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের অধিকতর দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য প্রশিক্ষণ খাতে বেশি বিনিয়োগ করা। নাগরিকদের সেবা প্রদান ও সম্পদ বরাদ্দের ক্ষেত্রে নারী ও পিছিয়ে পড়া সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠিকে প্রাধান্য দিতে হবে। সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তিকরণ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
পরিবেশ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণ বিষয়ে সুপারিশে বলা হয়, পরিবেশ ও ইকো-সিস্টেম সংরক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধিবিধান কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। পরিবেশ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের নিমিত্তে প্রয়োজনীয় নীতি-কৌশল নির্ধারণ ও প্রকল্প বা কর্মসূচি প্রণয়নের আগে পরিবেশ সমীক্ষা ও তার প্রভাব সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে হবে। পরিবেশ ব্যবস্থাপনা কার্যকরভাবে সম্পাদনের জন্য জেলা, উপজেলা ও স্থানীয় সরকারকে ক্ষমতায়ন করার লক্ষ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় ও আন্ত-বিভাগীয় সমন্বয়সাধন জোরদার করতে হবে।
জাতীয় জলবায়ু পরিবর্তন কৌশলকে সরকারি নীতি-কৌশলের মধ্যে অন্তর্ভুক্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় টিকে থাকার জন্য প্রকল্প গ্রহণ ও সম্পদ বরাদ্দ করতে হবে। দুর্যোগ মোকাবিলা সংক্রান্ত জাতীয় নীতি-কাঠামো ও দুর্যোগ-পূর্ব সংকেত প্রদান ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট এনজিওদের সাথে সহযোগিতার ক্ষেত্র বৃদ্ধি করা যেতে পারে বলে সুপারিশে বলা হয়।
জেলা ও উপজেলার সাথে কেন্দ্রের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক স্থাপন বিষয়ে সুপারিশে বলা হয়, স্থানীয় ই-গভর্নেন্স সিস্টেমের সাথে কেন্দ্রীয় ওয়েব পোর্টালের এবং মোবাইল সংযোগের ব্যবস্থা করতে হবে। জনপরিষেবা গ্রহণকারী বিশেষ করে কৃষক, নারী, জেলে ইত্যাদি শ্রেণির নাগরিকরা যাতে সহজে সেবা পেতে পারে সেজন্য সহজগম্য স্থানে সার্ভিস ডেলিভারী পয়েন্ট স্থান করতে হবে।
ডিজিটাল পদ্ধতিতে জনপরিষেবা প্রদানের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় কারিগরি প্রশিক্ষণ দিতে হবে বলে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের সুপারিশে উল্লেখ করা হয়েছে।