বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক গাড়ি?
হেরমান লায়ার৷ জার্মানির টেকনিক মিউজিয়াম জিনসহাইম স্পায়ারের প্রধান৷ তিনি মাঝেমধ্যে ব্রুটাস চালান৷ তিনি বলেন, ‘‘যখন ইঞ্জিন চলা শুরু করে তখন দারুণ লাগে৷ আর যখন গতি বাড়তে থাকে তখন ইঞ্জিনের প্রতি আপনার মুগ্ধতাও বাড়ে৷ তবে সেই সময় আপনাকে শক্ত হাতে স্টিয়ারিংটা ধরে রাখতে হবে৷ কারণ আপনি আবেগ ধরে রাখতে না পারলে ঘটনা ঘটা শুরু করবে৷’’
ব্রুটাসকে রাস্তায় চলার উপযোগী করতে আট বছর লেগেছে৷ লায়ার ও মিউজিয়ামের অন্য সদস্যরা ১৯৯৮ সালে কাজ শুরু করেছিলেন৷ তখন এটি মিউজিয়ামের অন্যতম আকর্ষণ ছিল৷
১৯০৭ সালের অ্যামেরিকান ভিন্টেজ কার লাফ্রসের চেসিসে একটি ৪৭-লিটার এয়ারক্রাফট ইঞ্জিন বসান তারা৷
হেরমান লায়ার বলেন, ‘‘ইঞ্জিনটা অলস বসে ছিল৷ একদিন মনে হলো, যদি এটাকে চালানোর চেষ্টা করি তাহলে কেমন হয়? এর আগে কয়েকবার সংস্কারের কাজ শুরু করেও পিছিয়ে এসেছিলাম আমরা৷ কারণ ইঞ্জিনটাতো আসলে ওড়ার জন্য বানানো হয়েছিল৷ আর আমরা তাকে চালাতে চাইছি৷ তাই ভয় হচ্ছিল, না জানি কেমন আচরণ করে!’’
গত ১৫ বছরে স্পায়ারের একটি এয়ারফিল্ড ও একটি টেস্ট ট্র্যাকে নতুন রেকর্ড গড়ার চেষ্টা চালালেও কেউ এখনও বলতে পারেননা, গাড়িটা ঠিক কত জোরে চলতে পারে৷
হেরমান লায়ার বলেন, ‘‘আপনি যত জোরে চালানোর সাহস করবেন, তার চেয়েও বেশি গতিতে গাড়িটি চলতে পারে৷ এখানে একজন ইংলিশম্যান ছিলেন, যার বয়স সত্তরের বেশি ছিল৷ তিনি একবার ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার গতিতে গাড়িটি চালিয়েছিলেন৷ এখন আমরা অপেক্ষা করছি, কেউ একদিন এসে বলবেন, গাড়িটি যত জোরে চলতে পারি, আমি তত জোরে চালাব৷ আপনাকে জানতে হবে, গাড়িটি দিয়ে আপনি ঠিক কী, আর কতখানি কাজ করবেন৷ গাড়ির কোনো সীমাবদ্ধতা নেই৷’’
বছরে একবার ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে ব্রুটাসপ্রেমিরা জার্মানির স্পায়ার শহরে আসেন৷ কারণ তখন ব্রুটাসকে চলতে দেখা যায়৷ সামাজিক মাধ্যমে ব্রুটাসের ৫০ কোটিরও বেশি ফলোয়ার আছে৷
হেরমান লায়ার বলেন, ‘‘আপনি বলতে পারেন গাড়িটা একটু অন্যরকম, ওয়াইল্ড আর অবাধ্য৷ তবে সত্যি কথা হচ্ছে, এগুলোই ব্রুটাসের প্রতি মানুষের মুগ্ধতার কারণ৷
মাঝেমধ্যে হেরমান লায়ার ব্রুটাস নিয়ে গ্রামের পথে বেরিয়ে পড়েন৷ রাস্তায় চলার অনুমতি না থাকায় চলাচল বন্ধ থাকা রাস্তা বেছে নিতে হয় তাকে৷
দিন শেষে যখন তিনি গাড়ি থেকে নামেন তখন তাকে ক্লান্ত মনে হয়৷
হেরমান লায়ার বলেন, ‘‘একসময় সবাই এই গাড়ি চালাতে ভয় পায়৷ কেউ অল্পদিনেই ভয় পায়, আর কারও হয়ত একটু সময় লাগে৷ তখন আর কেউ এই গাড়ি চালায় না৷ এভাবে আপনি বুঝতে পারেন আপনার ক্ষমতা কতটুকু৷ এটা ভেবে আপনি শান্তিতে ঘুমাতে যেতে পারেন৷’’
এভাবেই একসময় বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক এই গাড়িতে ভ্রমণ অভিজ্ঞতার সমাপ্তি ঘটে৷
সূত্র: ডয়েচে ভেলে