দেশ থেকে মানবপাচারে জড়িত দুই বিদেশি এয়ারলাইন্স-সিআইডি
মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে মানবপাচারের ঘটনায় বিদেশি দু’টি এয়ারলাইন্স জড়িত আছে বলে তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মানবপাচারের ঘটনা তদন্ত কার্যক্রমের সময় বিদেশি দু’টি এয়ারলাইন্সের বেশ কিছু ত্রুটি পাওয়া গেছে, যা মামলার তদন্তে উল্লেখ থাকবে বলে জানিয়েছে সিআইডি। তবে তদন্তের স্বার্থে এয়ারলাইন্স দু’টির নাম এখনই প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
মঙ্গলবার দুপুরে সিআইডি প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, মানবপাচারের ঘটনায় বিদেশে যাদের পাচার করা হয়েছে তাদের সবাইকেই ভিজিটর/ কনফারেন্স ভিসায় পাঠানো হয়েছে। তবে এসব ভিসায় যাওয়া ভিজিটরদের রিটার্ন (ফিরতি) টিকিট থাকার কথা থাকলেও পাচার হওয়া কারও ফিরতি টিকিট ছিল না। এটা এয়ারলাইন্সের একটি বড় ত্রুটি। আর অধিকাংশ মানবপাচার এই দু’টি এয়ারলাইন্সের মাধ্যমেই হয়েছে।
ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান বলেন, এয়ারলাইন্সের এই ত্রুটির বিষয়ে সেখানের কর্মকর্তারা জড়িত। আমরা এয়ারলাইন্স দু’টির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেছি। তারাও এই ত্রুটির বিষয়ে স্বীকার করেছেন।
তিনি আরও বলেন, গত ১৮ অক্টোবর বাংলাদেশ পুলিশ মানবপাচারকারী চক্রের চিহ্নিত ছয় সদস্যকে গ্রেফতারের জন্য ইন্টারপোলের কাছে সহায়তা চায়। গত ২৭ নভেম্বর তাদের বিষয়ে ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারি করে।
সম্প্রতি সিআইডির অনুরোধে মানবপাচারকারী চক্রের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করে ইন্টারপোল। রেড নোটিশ জারি করা আসামিরা হলেন- মিন্টু মিয়া, স্বপন, শাহাদাত হোসেন, নজরুল ইসলাম মোল্লা, ইকবাল জাফর ও তানজিরুল।
সিআইডি প্রধান বলেন, বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মানবপাচারের সঙ্গে ছয়জনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। আরও কেউ আছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মানবপাচারের মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত ২৬ মে লিবিয়ায় ২৬ জন বাংলাদেশিকে হত্যার ঘটনার পর মানবপাচারের ২৬ মামলার মধ্যে ২৫টি মামলা তদন্ত করছে সিআইডি। এখন পর্যন্ত ১৭১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হবিগঞ্জে দায়ের করা একটি মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। গ্রেফতার আসামিদের মধ্যে ৪২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
২০১৯ সালের মে মাস থেকে বিভিন্ন সময় ৩৮ জন বাংলাদেশি নাগরিক লিবিয়ায় পাচার করা হয়। তাদের ইতালি ও স্পেনে পাঠানোর কথা বলে লিবিয়ার বেনগাজীতে নিয়ে যাওয়া হয়। মুক্তিপণের জন্য গত ২৬ মে নির্মমভাবে পাচার হওয়া ২৬ জনকে গুলি করে হত্যা করা করে দুর্বত্তরা। এ ঘটনায় মানবপাচারের অভিযোগে সারাদেশে ২৬টি মামলা হয়। এর মধ্যে সিআইডি বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। বাকিগুলো ভুক্তোভোগীদের পরিবার বাদী হয়ে করেছে।