১৫ টি মামলার আসামী গ্রেপ্তার, ৫২৫ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে
শুল্ক গােয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর একজনের বিরুদ্ধে ১৫ টি মামলা দায়ের করে তাকে গ্রেপ্তার করেছে। ওই ব্যক্তির নাম সুরুজ মিয়া ওরফে বেলাল। এছাড়া তার আরো অনেকগুলো নাম আছে বিভিন্ন সময় তিনি বিভিন্ন নামে পরিচিত।
জানা যায়, ৫২৫ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে দায়ের করা ১৫ মামলার আসামি সুরুজ মিয়া ওরফে মাে. বিল্লাল হােসেন খানকে গ্রেপ্তার করেছে তারা। মিথ্যা ঘোষণায় নিষিদ্ধ পণ্য আমদানির মাধ্যমে ওই টাকা পাচারের অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার রাজধানীর বনশ্রী এলাকা থেকে শুল্ক গোয়েন্দার একটি টিম তাকে গ্রেপ্তার করে।
মঙ্গলবার শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুর রউফ এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
আব্দুর রউফ বলেন, অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক মেশিনারিজ ঘােষণায় অবৈধ মদ, সিগারেট ও টেলিভিশন আমদানির মূলহােতা সুরুজ মিয়া। তাকে গ্রেফতার করতে পারলে সব তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে প্রত্যাশা ছিল। অনেক চেষ্টার পর তা আজ সম্ভব হয়েছে। একই প্রক্রিয়ায় অবৈধভাবে আমদানিকৃত পণ্য চালানের বিপরীতে দায়ের করা অবশিষ্ট ১৫টি মামলার বিষয়ে তার কাছে অনেক অজানা তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়।
তিনি বলেন, শুল্ক গোয়েন্দা জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরে ১২টি কন্টেইনারে মিথ্যা ঘােষণায় অর্থাৎ পােল্ট্রি ফিডের ক্যাপিটাল মেশিনারি ঘােষণায় পণ্য খালাসের অপচেষ্টা হয়। এ ঘটনায় ২০১৭ সালের ৫ ও ৬ মার্চ বিপুল পরিমাণ সিগারেট, এলইডি টেলিভিশন ও ফটোকপিয়ার মেশিন ও মদসহ কন্টেইনার জব্দ করে কাস্টমস গােয়েন্দা।
শুল্ক গোয়েন্দার মহাপরিচালক বলেন, হেনান আনহুই এগ্রো এলসি এবং এগ্রো বিডি অ্যান্ড জেপি নামীয় প্রতিষ্ঠান দুটির বিরুদ্ধে ১৪০ কোটি টাকা পাচার হওয়ায় মানিলন্ডারিং প্রতিরােধ আইনে ওই বছরের ২৭ নভেম্বর পল্টন থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।
আব্দুর রউফ বলেন, আমদানিকারকরা ইতােপূর্বে ৭৮টি কন্টেইনারে মেশিনারিজ ঘােষণায় খালাস নিয়েছে। এ ঘটনায় ৮৭৪ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে পাচার হওয়ায় মানিলন্ডারিং প্রতিরােধ আইনে পল্টন থানায় আরও ১৪ মামলাসহ ১৫টি মামলা দায়ের করা হয় ।
শুল্ক গোয়েন্দা পরিচালক বলেন, রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান চীনের জমরাজ ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে ঢাকার হেব্রা ব্রানকো, শেকহার্টেক ও খিলগাওন নামে প্রতিষ্ঠান সাতটি বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে ৩১ কন্টেইনার মেশিনারিজ পণ্য ঘােষণায় আমদানি করে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান হেব্রা ব্রানকোর অস্তিত্ব কখনােই ছিল না এবং এটি কখনােই উৎপাদন কার্যক্রম করেনি। এতে হেনান আনহুই এগ্রো এলসি এবং এগ্রো বিডি অ্যান্ড জেপি নামীয় প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ইতােপূর্বে আমদানিকৃত ৬ কন্টেইনারের ন্যায় মদ, সিগারেট ও টেলিভিশনসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক পণ্য আমদানি করে বিপুল পরিমাণ শুল্ক ফাঁকি দেয়। যেখানে প্রায় ২৯১ কোটি টাকা মানিলন্ডারিং সংগঠিত হয়েছে বলে প্রমাণ মিলে। যে কারণে হেব্রা ব্রানকোর প্রতিষ্ঠানের মালিক সুরুজ মিয়া ওরফে মাে. বিল্লাল হােসেন খানকে ১ নম্বর আসামি করে ওই অর্থ পাচারের বিপরীতে পৃথক সাতটি মামলা দায়ের করা হয়।
তিনি আরো বলেন, যেখানে ২৩৪ কোটি টাকা পাচারের ঘটনায় হেব্রা ব্রানকোর প্রতিষ্ঠানের মালিক সুরুজ মিয়া ওরফে মাে. বিল্লাল হােসেন খানের বিরুদ্ধে আরও ৭ টি মামলা দায়ের করা হয়। এভাবে মোট ১ হাজার ৫৩৯ টাকা পাচারের অভিযোগে ৩০টি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে আমদানিকারক সুরুজ মিয়া ওরফে মাে. বিল্লাল হােসেন খান ১৪টি মামলার আসামি। ওই ১৪ মামলায় পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ ৫২৫ কোটি টাকা।
তিনি বলেন, এছাড়া চারটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে মেশিনারিজ পণ্য ঘােষণা দিয়ে আমদানি নিষিদ্ধ ২৫ কন্টেইনারে পণ্য আমদানি করা হয়। যেখানে ৭টি বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে আমদানিকৃত পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর হতে খালাস করা হয়। অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠানের জন্য মেশিনারিজ আমদানির সুযােগ না থাকা সত্ত্বেও তা আমদানি করা এবং মেসার্স হেনান আনহুই এগ্রো এলসি ও মেসার্স এগ্রো বিডি অ্যান্ড জেপি নামীয় প্রতিষ্ঠানের মেশিনারিজ ঘােষণায় অবৈধ মদ, সিগারেট ও টেলিভিশন আমদানি করা হয়েছে।
প্রকৌশল নিউজ/এমআরএস