পুলিশ দম্পতির মামলা : স্ত্রী বহাল, স্বামী বরখাস্ত
পারিবারিক কলহের জেরে পুলিশ দম্পতি পরস্পরের বিরুদ্ধে করা মামলায় স্বামী ওবায়দুল কবির সুমন সাময়িক বরখাস্ত হলেও তার স্ত্রী সুমাইয়া বেগম লাকি আদালত থেকে জামিন নিয়ে চাকরিতে বহাল আছেন।
সুমন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড টান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটে উপ-পরিদর্শক (এসআই) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাকে বাহিনীর শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে গত ১ জুন এক আদেশে বরখাস্ত করে ডিএমপি।
অন্যদিকে তার স্ত্রী সুমাইয়া বর্তমানে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি রাজশাহী মেট্রোতে উপপরিদর্শক হিসেবে কর্মরত। তার বিরুদ্ধে স্বামী সুমনের কাছে ২০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করার মামলা রয়েছে। ওই মামলায় তিনি আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন।
মামলায় ওবায়দুল কবির অভিযোগ করেছেন, ২০১৬ সালে পারিবারিকভাবে সুমাইয়ার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের সংসারে চার বছরের একটি পুত্রসন্তান আছে। গত কয়েক বছর ধরে স্ত্রী সুমাইয়া বেগম লাকি উশৃঙ্খল জীবনযাপন আর পরকীয়ায় লিপ্ত হন। ছেলেকে বাসায় রেখে কাউকে কিছু না বলে ফোন বন্ধ করে বেরিয়ে যেতেন ইচ্ছামতো। ফেরার পর কিছু জিজ্ঞেস করলে অকথ্য ভাষায় গালাগাল দিতেন এবং নারী নির্যাতনের মামলা করে চাকরিচ্যুত করার হুমকি দিতেন।
স্বামী সুমন এবং পারিবারিকভাবে অনেক বুঝানোর পরও সুমাইয়ার আচরণ দিনের পর দিন খারাপ হতে থাকে। এক পর্যায়ে সুমাইয়া ওবায়দুল কবিরের কাছে ২০ লাখ টাকা ডিপোজিটসহ তার মায়ের বাড়ি করার জন্য পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন।
পরে উপায় না পেয়ে ২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর ওবায়দুল কবির ঢাকা মহানগর হাকিমের আদালতে একটি মামলা করেন। যৌতুক নিরোধ আইনে করা ওই মামলায় সুমাইয়া বেগমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পরে গত ২৭ জানুয়ারি জামিন নেন সুমাইয়া। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন আছে।
ওবায়দুল কবির বলেন, ওই মামলার পর ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর সুমাইয়া বেগমকে তালাক দেন তিনি। তালাকের নোটিশ পেয়ে সুমাইয়া ৬/৭ জন লোক নিয়ে তাকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে বাড়ির সামনে আক্রমণ করেন। এ ঘটনায় ওবায়দুল কবির ঢাকা মহানগর নির্বাহী হাকিমের আদালতে সুমইয়ার বিরুদ্ধে ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১০৭/১১৭ ধারায় আরেকটি মামালা করেন। বর্তমানে এই মামলাটিও বিচারাধীন।
ওবায়দুল কবিরের মামলার পর স্ত্রী সুমাইয়া ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) রাজপাড়া থানায় এসআই ওবায়দুল কবিরের নামে একটি মামলা করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা ওই মামলায় একই বছরের ২৯ ডিসেম্বর আদালতে জামিন নেন ওবায়দুল কবির। এ মামলায় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
ওবায়দুল কবির বলছেন, স্ত্রী করা মামলার জেরে তিনি বরখাস্ত হলেন। অথচ স্ত্রীর বিরুদ্ধে তার করা যৌতুক ও ফৌজদারি আইনে দুটি মামলা থাকার পরও সুমাইয়া চাকরিতে বহাল আছেন।
সিআইডি রাজশাহী মেট্রোপলিটনের পুলিশ সুপার মো. আবদুল জলিল বলেন, সুমাইয়া বেগম লাকীর বিরুদ্ধে মামলা হওয়া বিষয়ে এখনো আমরা কোনো অফিসিয়ালি কাগজ পাইনি। এছাড়া এসব ঘটনায় সাসপেন্ড করার মতো বিষয়টি সিআইডি সদর দপ্তরের প্রশাসন দেখেন। সদর দপ্তরের প্রশাসন সুমাইয়ার বিষয়ে কিছু জানে কি না সেটা আমার জানা নেই। তারা জানার পর যে ব্যবস্থা নেবে, সে নির্দেশনা আমরা পালন করবো।’
বৃহস্পতিবার সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (প্রশাসন) জেসমিন বেগম বলেন, ‘সুমাইয়ার মামলার বিষয়টি আমাদের জানা নেই। আমরা যখন জানতে পারবো তার নামে মামলা হয়েছে এবং তিনি আদালতে হাজির হয়েছেন, সেই দিন থেকেই তিনি সাসপেন্ড হবেন। প্রতিবেদন হাতে পেলেই তিনি সাসপেন্ড হবেন।’
প্রকৌশল নিউজ/এমআরএস