মৌলভীবাজারে স্ত্রীর শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন, স্বামী আটক
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় ঘুমন্ত স্ত্রীর শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছেন স্বামী শিপন আহমদ। এতে রহিমা বেগমের (২০) শরীরের প্রায় ৬৩ শতাংশ পুড়ে গেছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিপন আহমদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রোববার (৪ জুলাই) বেলা আড়াইটার দিকে উপজেলার পশ্চিম হাতলিয়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের রফিক উদ্দিনের মেয়ে রহিমা বেগমের সঙ্গে প্রায় তিন বছর আগে একই ইউনিয়নের আরেঙ্গাবাদ গ্রামের মুকুল মিয়ার ছেলে শিপন আহমদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রহিমার সঙ্গে স্বামী ও তার পরিবারের লোকজনের ঝগড়া হতো। এ নিয়ে স্বামী ও তার স্বজনরা রহিমাকে নির্যাতন করত। বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কয়েকবার সমাধান করে দিলেও কোনো লাভ হয়নি। এরপরও তাদের মধ্যে ঝগড়া লেগে থাকত। স্বামী ও স্বজনদের নির্যাতন সইতে না পেরে প্রায় ৭ মাস আগে সন্তানকে নিয়ে স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি হরিপুর গ্রামে চলে যান রহিমা। একমাত্র সন্তানকে দেখার জন্য প্রায়ই শ্বশুরবাড়িতে যেতেন রহিমার স্বামী শিপন আহমদ।
শনিবার (৩ জুলাই) শিপন সন্তানকে দেখতে শ্বশুরবাড়িতে যান। রাতে সেখানে ঘুমান তিনি। কিন্তু ভোর ৫টার দিকে ঘুমন্ত অবস্থায় স্ত্রী রহিমা বেগমের গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন শিপন। ঘটনার পরই তিনি পালিয়ে যান। রহিমার চিৎকার শুনে স্বজনরা তাকে দ্রুত উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সাহেদুল ইসলাম সুমন বলেন, রহিমার স্বামী শিপন ও তার পরিবারের লোকজন প্রায়ই রহিমাকে নির্যাতন করতেন। বিষয়টি কয়েকবার বসে আমরা সমাধান করে দিয়েছি। এরপরও তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো। নির্যাতন সইতে না পেরে প্রায় ৭ মাস আগে স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে চলে যান রহিমা। স্বামী শিপন সন্তানকে দেখতে সেখানে যেত। ঘটনার রাতে শিপন শ্বশুরবাড়িতে থেকেছে। ভোরবেলা সে ঘুমন্ত অবস্থায় রহিমার গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। তাদের পরিবারে এক সন্তান রয়েছে।
বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার ডা.মো ফয়জুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, সকাল ৭টার দিকে রহিমা বেগমকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তার হাত-মুখসহ শরীরের ৬৩ শতাংশ পুড়ে গেছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
বড়লেখা থানার ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার গণমাধ্যমকে জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছে। রহিমার বাবা থানায় মামলা দায়ের করায় পুলিশ অভিযুক্ত শিপনকে গ্রেপ্তার করেছে।