নব্য জেএমবির দাওয়া শাখার প্রধান সমন্বয়কারী প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ শহিদুল্লাহ গ্রেপ্তার
নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির অনলাইন ভিত্তিক সোশ্যাল মিডিয়ার দাওয়া শাখার প্রধান সমন্বয়কারী ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ শহিদুল্লাহ কাওসার ইমনকে গ্রেফতার করেছে কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।
১৪ জুলাই রাজধানীর পূর্ব গোড়ানের একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে সিটি-ইন্টেলিজেন্স এ্যানালাইসিস বিভাগ।
সিটিটিসি সূত্র জানায়, এইচএসসি পাস করা ইমন পড়াশোনা বহুদূর না করলেও প্রযুক্তিগতভাবে সে বেশ দক্ষ। সে নব্য জেএমবির প্রচার প্রচারণার জন্য একটি ওয়েবসাইট এবং মোবাইল অ্যাপস তৈরি করে। যার মাধ্যমে নব্য জেএমবির বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে দিতে কাজ করে আসছিল ইমন। এই সুবাদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উগ্রবাদী বিভিন্ন আইডি, পেইজ ও গ্রুপে সে যুক্ত ছিলো। একসময় নব্য জেএমবির মিডিয়া ও দাওয়া শাখার দায়িত্বশীল গুরুত্বপূর্ণ দুজন সদস্যের নজরে আসে ইমন।
নব্য জেএমবির দায়িত্বশীল দুই সদস্য পরবর্তীতে ইমনকে মোটিভেটেড করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার প্রচারণা চালানোর জন্য। যার কারণে নব্য জেএমবির একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে নানা কার্যক্রম শুরু করে ইমন। প্রযুক্তিগত দক্ষতার কারণে ও ইসলামিক বিভিন্ন বিষয় জানার জন্য অল্প কিছুদিনের মাঝেই সে হয়ে ওঠে নব্য জেএমবির দায়িত্বশীলদের প্রিয়পাত্র। তাকে বানানো হয় নব্য জেএমবির সোশ্যাল মিডিয়া কেন্দ্রিক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রুপের এডমিন। পরবর্তীতে নব্য জেএমবির দায়িত্বশীল দুই সদস্য ইমনের হাতে সোশ্যাল মিডিয়া কেন্দ্রিক প্রচারণার দায়িত্ব দিয়ে অফলাইনে চলে যায়।
সিটিটিসি আরো জানায়, ইমন ২০২১ সালের শুরুর দিক থেকে নব্য জেএমবির সোশ্যাল মিডিয়া কেন্দ্রিক একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রুপের দায়িত্ব পালন করা শুরু করে। সে প্রাথমিকভাবে সংগঠনের বিভিন্ন সাংগঠনিক কার্যক্রম এবং সদস্য সংগ্রহের কাজ করে আসছিল। নব্য জেএমবির মতাদর্শে অনেককে টার্গেট করে দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছিলো। বিভিন্ন সময়ে নিজের ফেইক ফেসবুক একাউন্ট থেকে নব্য জেএমবির শোলাকিয়া, হলি আর্টিজান এবং কল্যাণপুরে জঙ্গী অভিযানে নিহতদের শহীদ ও বীর হিসেবে আখ্যায়িত করে পোস্ট দিতো। অন্যদেরকেও এ ধরনের কাজে অংশগ্রহণের জন্য সে উদ্বুদ্ধ করে আসছিল। নব্য জেএমবির দায়িত্বশীলদের পরামর্শ ও অনুমতিক্রমে একটি ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপস তৈরি করে যা নব্য জেএমবির বিভিন্ন কার্যক্রম এবং সদস্য সংগ্রহের কাজে ব্যবহৃত হতো।
তাদের লক্ষ্য ছিলো অধিক সংখ্যক মানুষের মাঝে নব্য জেএমবির আদর্শিক চিন্তাধারা ছড়িয়ে দেওয়া ও তাদের মোটিভেট করা। যার ফলশ্রুতিতে ইমন নিজেই আল বাতাল এজেন্সি নামে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে নব্য জেএমবির দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করে যাচ্ছিল। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক হারে সে ওয়েবসাইটের প্রচার প্রচারণা চালিয়ে আসছিল। তাদের লক্ষ্য ছিল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং তাদের ওয়েবসাইটে যত কনটেন্ট তারা দিতে পারবে ততবেশি সাধারণ জনগণ তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হতে পারবে।
গ্রেপ্তারকৃত ইমন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টেলিগ্রাম, ওয়েবসাইটে নিজের নাম পরিচয় গোপন রেখে নব্য জেএমবির নীতি-আদর্শ সমর্থন, সদস্যপদ গ্রহণ এবং প্রচার প্রচারণার সাথে জড়িত ছিল। সে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেয়ার জন্য সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের ট্রাফিক পুলিশ বক্সে বোমা রাখার ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার করে বলে সিটিটিসি সূত্রে জানা যায়।
তদন্তকারী কর্মকর্তা গ্রেপ্তারকৃত ইমনকে সাত দিনের পুলিশ রিমান্ড আবেদনসহ আদালতে পাঠালে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
প্রকৌশল নিউজ/এমআরএস