সিক্রেট অ্যাপ ব্যবহার করে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিতেন ফোরকান
নব্য জেএমবি’র বোমা তৈরি ও সামরিক শাখার প্রধান প্রশিক্ষক জাহিদ হাসান ফোরকানসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, মো. জাহিদ হাসান ওরফে রাজু ওরফে ইসমাঈল হাসান ওরফে ফোরকান, সাইফুল ইসলাম মারুফ ওরফে বাসিরা ও মো. রুম্মান হোসেন ফাহাদ ওরফে আব্দুল্লাহ।
গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় মামলা করা হয়েছে। তাদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনসহ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে বিস্ফোরক পদার্থ, ঢাকনাযুক্ত জিআই পাইপ, রিমোট কন্ট্রোল ডিভাইস, লোহার বল, সাংগঠনিক কাজে ব্যবহৃত ৩টি মোবাইল ফোন ও ১টি ট্যাব উদ্ধার করা হয়। মঙ্গলবার রাজধানীর কাফরুল থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
বুধবার দুপুরে ডিএমপি’র মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সিটিটিসি’র প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান এ তথ্য জানান।
সিটিটিসি’র প্রধান বলেন, বিগত দিনে ১০ থেকে ১২টি পুলিশ বক্সে বোমা হামলার চেষ্টা চালায় নব্য জেএমবি’র সদস্যরা। বোমাগুলো ছিল একই প্যাটার্নের। যারা বোমাগুলো বানায় তাদের বিভিন্ন সময় অভিযানে গ্রেফতার করা হয়। এর পর নতুন করে আবার মেলে একই প্যাটার্নের বোমার খোঁজ। ফলে তদন্তে নামে সিটিটিসি।
তদন্তের এক পর্যায়ে উঠে আসে নব্য জেএমবি’র সদস্য জাহিদের নাম। তিনিই অনলাইনে বোমা বানানো শেখান বলে জানান সিটিটিসি’র প্রধান।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, জাহিদ বেশকিছু দিন ধরে পলাতক ছিলেন। সম্প্রতি গ্রেফতার হন তার দু’সহযোগি শফিকুর রহমান হৃদয় ওরফে বাইতুল্লাহ মেহসুদ ওরফে ক্যাপ্টেন খাত্তাব ও মো. খালিদ হাসান ভূঁইয়া ওরফে আফনান।
তাদের দেয়া তথ্য ও সিটিটিসি’র আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে মঙ্গলবার রাজধানীর কাফরুল থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত জাহিদ হাসান ফোরকান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় হতে রসায়নে অনার্স সম্পন্ন করেছে। জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত হওয়ায় এবং হিজরত করায় তিনি মাষ্টার্স সম্পন্ন করতে পারেননি। ২০১৬ সালে অনলাইনে ‘হোয়াইট হাউজের মুফতি’ নামক আইডি’র মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে নব্য জেএমবি’র তৎকালীন আমির মুসার হাত ধরে তিনি এই সংগঠনে যোগদান করেন। আমির মুসার সাথে কাজ করার সুবাদে সংগঠনের ওই সময়ের শীর্ষস্থানীয় জঙ্গিদের নজরে আসে এবং তাদের সার্বক্ষনিক সঙ্গী হিসেবে কাজ করেন তিনি। রসায়নে পারদর্শী হওয়ার কারণে তার মেধা এবং সাহসের জন্য তাকে এই সংগঠনের সামরিক শাখার সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। রসায়নের ছাত্র হওয়ার সুবাদে তিনি অল্পদিনে গ্রেনেড ও বোমা তৈরিতে অত্যন্ত দক্ষ হয়ে ওঠেন এবং নিত্য নতুন কৌশলে আইইডি (ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) প্রস্তুত করেন। এই সংগঠনের যারা বোমা ও গ্রেনেড তৈরি করতেন তাদেরকে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিতেন তিনি।
তিনি বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সিটিটিসি তথা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানে নব্য জিএমবি’র শীর্ষস্থানীয় জঙ্গিরা গ্রেফতার অথবা নিহত হলে এই সংগঠনটি দুর্বল হয়ে পড়ে। এ সময় জাহিদ গ্রেফতার এড়ানোর জন্য আত্মগোপনে চলে যায়। পূনরায় তিনি নতুন আমিরের নেতৃত্বে সংগঠনকে সংগঠিত করার উদ্যোগ নেন। তারই অংশ হিসেবে অনলাইনে আইডি খোলার মাধ্যমে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে যারা অত্যন্ত সাহসী ও সামরিক বিভাগে কাজ করতে আগ্রহী তাদের মধ্য থেকে বাছাইকৃত সদস্যদের বিভিন্ন ধরনের টাইম ও রিমোট কন্ট্রোল বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিতেন তিনি। তিনি সংগঠনটির তৎপরতা আরও বাড়াতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একাধিকবার মিটিং করেছেন। শারীরিক সক্ষমতা বাড়াতে বাংলাদেশ কারাত ফেডারেশনের আওতাধীন মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়াম থেকে কারাতে প্রশিক্ষণও নেন তিনি। তিনি বড় কোন ক্যামিকেল সাপ্লাই কোম্পানিতে চাকুরি করে সেখান থেকে এক্সপ্লোসিভ তৈরির উপাদান নিয়ে আইইডি বানানোর পরিকল্পনা ছিল তার। সর্বশেষ তিনি ড্রোন বানানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। ড্রোনের সাথে এক্সপ্লোসিভ যুক্ত করে কোন জায়গায় আক্রমনের পরিকল্পনার পাশাপাশি সামরিক শাখার প্রধান নিযুক্ত হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, পুলিশ বক্সে হামলার পরিকল্পনার সাথেও তিনি জড়িত ছিলেন। জেএমবি’র আমিরের নির্দেশে যে সকল হামলার ঘটনা ঘটেছে সে সব হামলায় সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেছেন তিনি।
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গ্রেফতারকৃত অপর অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম মারুফ একজন দক্ষ বোমা তৈরীর কারিগর। তিনি অনলাইনে জাহিদের নিকট হতে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। বেশ কয়েকটি বোমা হামলার ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা থাকার বিষয়ে তিনি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন। সাইফুল ইসলাম মারুফ এবং মো. রুম্মান হোসেন ফাহাদসহ সংগঠনের সিদ্ধান্তে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহন করার লক্ষ্যে বান্দরবান এলাকায় হিজরত করেন। তারা সংগঠনের ফান্ড তৈরির জন্য ইলেকট্রিক শক থেরাপির মাধ্যমে অজ্ঞান করে ছিনতাই ও ডাকাতি করার জন্য টঙ্গী থানার রেলগেট এলাকায় বাসা ভাড়া নেন।
প্রকৌশল নিউজ/এমআরএস