ব্ল্যাকমেইল করতেই শিশু জিসানুলকে হত্যা!
রাজধানীর খিলগাঁওয়ে অপহরণের পর হত্যার শিকার পাঁচ বছরের শিশু জিসানুল ইসলাম আকাইদের হত্যারহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে ঘাতককে গ্রেপ্তার করেছে। এ অপহরণের কাজে ব্যবহৃত রিকশা, টিশার্ট ও লুঙ্গি এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ক্ষুর জব্দ করা হয়। গত সোমবার রাতে গোড়ান থেকে ঘাতক সেলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৬ আগস্ট শিশু জিসানুল ইসলাম আকাইদকে হত্যা করা হয়। হত্যার তিন দিন পর গত সোমবার ৯ আগস্ট খিলগাঁয়ের মধ্য নন্দীপাড়া নূর মসজিদ গলির একটি ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, সিসিটিভির ফুটেজ দেখে সেলিমকে শনাক্ত করা হয়। সে পেশায় এক জন রিকশাচালক। তার বাড়ি ঝালকাঠি সদর থানার লেস প্রতাপ বয়াতিবাড়ি গ্রামে। তিনি স্ত্রীসহ রাজধানীর সবুজবাগ থানার শান্তিপাড়া এলাকায় থাকেন। মূলত অসুস্থ স্ত্রী নূপুর আক্তারের চিকিৎসার খরচ জোগাড়ের জন্য বাড়িওয়ালাকে ফাঁসিয়ে ব্ল্যাকমেইলিং করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতে শিশুটিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. আব্দুল আহাদ জানান, শিশু জিসানুলের বাবার নাম আব্দুল মালেক। খিলগাঁও থানার নন্দীপাড়া এলাকার নূর মসজিদ এলাকায় তাদের বাসা। গত ৬ আগস্ট বাইরে খেলা শেষে জিসানুল বাসায় ফিরেনি। ঐ রাতেই খিলগাঁও থানায় একটি জিডি করেন জিসানুলের বাবা। এরই মধ্যে স্থানীয় এবং আশপাশের লোকজনের মাধ্যমে আব্দুল মালেক জানতে পারে, তার ছেলেকে এক রিকশাচালক রিকশাতে করে নূর মসজিদের দিকে নিয়ে যায়। ঘটনাস্থলের আশপাশের এলাকার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়।
ভিডিও পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অজ্ঞাতনামা রিকশাচালক অপহৃত শিশুটিকে রিকশায় নিয়ে যায়। গত সোমবার নূর মসজিদ গলি এলাকার পাঁচতলা ভবনের দোতলা থেকে শিশু জিসানুলের লাশ উদ্ধার করা হয়। ঐ রাতেই সেলিমকে গ্রেফতার করা হয়।
সেলিমের তথ্যের ভিত্তিতে ডিসি আব্দুল আহাদ জানান, সেলিমের স্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে কিডনি রোগে আক্রান্ত। পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। তাই সে বাড়ির মালিক বাবুলের স্ত্রীর কাছে টাকা চাইলেও মোটা অঙ্কের টাকা পায়নি। এতে সে কোনো অবৈধ জিনিস ঐ বাড়িতে রেখে চাপ দিয়ে বেশি টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা থেকেই একটি ক্ষুর কিনে নিজের কাছে রেখে দেয় সেলিম। ঘটনার দিন বিকাল ৪টার দিকে রিকশা নিয়ে মধ্য নন্দীপাড়া ২ নম্বর রোডে যায়। সেখানে জিসানুলকে তার রিকশাতে করে নূর মসজিদের দিকে নিয়ে যায় এবং পরে তাকে বাবুলের বাড়ির দ্বিতীয় তলায় নিয়ে যায়। সেখানে থাকা রশি দিয়ে জিসানুলের দুই হাত বেঁধে ক্ষুর দিয়ে গলা কেটে তাকে হত্যা করে।
তার পরিকল্পনা ছিল বাড়িওয়ালা বাবুল তাকে বাসা পরিষ্কার করার জন্য ডাকবে। বাড়ি পরিষ্কার করার সময় এই লাশ দেখতে পেলে পুলিশি ঝামেলা এড়াতে লাশটি সরানোর চিন্তা করবে। এক্ষেত্রে বাবুল তাকে দিয়ে লাশটি সরানোর উদ্যোগ নিলে সে কাজের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করবে। কিন্তু তিন দিন পার হলেও বাবুল তাকে বাড়ি পরিষ্কার করার কাজের জন্য না ডাকায় এবং লাশের কোনো প্রকার খোঁজ না পাওয়ায় তার এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।
প্রকৌশল নিউজ/এমআরএস