বরিশালে ইউএনও-ওসির বিরুদ্ধে মামলা : তদন্তে পিবিআই
বরিশালের সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনিবুর রহমান, ওসি নুরুল ইসলামসহ শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে দুটি মামলা করা হয়েছে। রোববার বরিশালের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন আদালতে মামলা করা হয়। বিকেলে আদালতের বিচারক মাসুম বিল্লাহ মামলা আমলে নিয়ে আগামী ২৩ সেপ্টেম্বারের মধ্যে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
বরিশালের সিটি করপোরেশনের কাজে বাধাদান, বিনা উস্কানিতে সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের ওপর গুলিবর্ষণের নির্দেশ ও হামলার অভিযোগে মামলা দুটি দায়ের করেন বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র-২ অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন এবং সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব শাখার কর্মকর্তা বাবলু হালদার।
অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন মামলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনিবুর রহমান, বরিশাল কোতয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুল ইসলাম ও এসআই শাহ জালাল মল্লিকসহ অজ্ঞাত ৪০-৫০ জনকে আসামি করেছেন। অপর মামলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনিবুর রহমান ও ৫ জন আনসার সদস্যসহ ৪০-৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। গত বুধবার ঘটনা ঘটলেও থানায় মামলা করতে গেলে সেখানে অভিযোগ না নেওয়ায় আদালতে অভিযোগ দাখিলে দেরি হয়েছে বলে এই মামলা দুটিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলা দুটির বিবরণে বলা হয়েছে, বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য শহরের বিভিন্ন অলিতে-গলিতে টানানো ব্যানার, ফেস্টুন নামিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ শুরু করে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। গত বুধবার রাতে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা নগরের ২৩নং ওয়ার্ডস্থ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের বিভিন্ন ব্যানার-ফ্যাস্টুন অপসারণকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে আনসার সদস্যরা তাতে বাধা দেয়। বিষয়টি সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসের কাছ থেকে মোবাইলে জানতে পারেন সিটি মেয়র। পরে তিনি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত হন। এ সময় মেয়র নিজের পরিচয় দেওয়া সত্ত্বেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান উত্তেজিত হন এবং ষড়যন্ত্রমূলকভাবে পরিকল্পনা অনুযায়ী মেয়রসহ তার সঙ্গে থাকা সকলের ওপর গুলিবর্ষণ করেন। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হুকুমে আনসার সদস্যরা মেয়রকে খুন করার উদ্দেশ্যে তাকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি শর্টগান দিয়ে গুলি করতে থাকে।
পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিতিরা মানবপ্রাচীর তৈরি করে মেয়রকে রক্ষা করে গাড়িতে উঠিয়ে দেন। সেই সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে সিটি করপোরেশনের স্টাফ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা সেখানে জড়ো হন। তখনও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনসার সদস্যদের তাদের ওপরও গুলি করার নির্দেশ দেন। এরপর পুলিশ এসে আওয়ামীলীগ নেতাদের লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
গুলিবর্ষণ ও পুলিশের লাঠিচার্জে ৫০ জন আহত, আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের মোটরসাইকেল ভাংচুর ও একশত গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে কোটি টাকার ক্ষতিসাধন করেছেন বলে মামলায় দাবি করা হয়।
এর আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনিবুর রহমানের বাসায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হামলা ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় করা দুটি মামলায় বরিশালে গ্রেপ্তারকৃত ২১ জনের জামিন আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন আদালত।
বরিশাল অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন আদালতের বিচারক মাসুম বিল্লাহ তাদের জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
গত বুধবার রাতে বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে সাঁটানো ব্যানার অপসারণকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ ও ইউএনও মুনিবুর রহমান বাদী হয়ে দুটি মামলা করেন। ওই মামলায় ৬০২ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বরিশালের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে। মামলা দায়েরের পর থেকে আওয়ামী লীগের বেশকিছু নেতাকর্মী আত্মগোপনে আছেন।
প্রকৌশল নিউজ/প্রতিনিধি/এমআরএস