ফারুকী হত্যা : ৭ বছর ধরে তদন্ত চলছে


প্রকৌশল প্রতিবেদক :
ফারুকী হত্যা : ৭ বছর ধরে তদন্ত চলছে
  • Font increase
  • Font Decrease

ইসলামী বক্তা, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব নুরুল ইসলাম ফারুকীর হত্যার ৭ বছর অতিবাহিত হলেও এখনো তদন্তই শেষ হয়নি। কবে নাগাদ তদন্ত শেষে বিচার হবে তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে পরিবার। তাই পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানানো হয়েছে যেন তদন্ত শেষ করে মামলার ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়। এদিকে, ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন আসামিরা। মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ হোক এ আশা আইনজীবীদের। 

২০১৪ সালের এইদিনে (২৭ আগস্ট) রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের বাসায় নুরুল ইসলাম ফারুকীকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ফারুকীর ছেলে ফয়সাল ফারুকী মামলা দায়ের করেন। কিন্তু দীর্ঘদিনেও মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে সিআইডি। সর্বশেষ গত ২৯ জুন মামলাটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে আদালত সাধারণ ছুটিতে থাকায় কার্যক্রম বন্ধ ছিল। সাধারণ ছুটি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবদাস চন্দ্র অধিকারী আগামী ৭ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন আদালত। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য এখন পর্যন্ত ৫২ বার সময় নিয়েছে তদন্ত সংস্থা।

মামলা সম্পর্কে নুরুল ইসলাম ফারুকীর বড় ছেলে আহমেদ রেজা ফারুকী বলেন, ৭ বছর হলো বাবা খুন হয়েছেন। কিন্তু এখনো মামলার তদন্তই শেষ হলো না। থানা পুলিশ, ডিবির হাত ঘুরে এখন মামলার তদন্তে আছে সিআইডি। একের পর এক তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হচ্ছেন কিন্তু তদন্ত শেষ হচ্ছে না। এখনো প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করা যায়নি। তবে প্রশাসন যথেষ্ট তৎপর রহস্য উদঘাটনে। তারা আমাদের বলছে, ঘটনার প্রথম বছরেই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করা উচিত ছিল। কিন্তু কেন হচ্ছে না সেই প্রশ্ন আমাদেরও। এত বছর হয়ে গেল। এর পিছনে বড় কোনো হাত জড়িত কি না। যদি জড়িত থাকে তাহলে সেই হাত কি প্রশাসনের চেয়ে বড় কি? এ নিয়ে তাদের মধ্যে ধোঁয়াশা আছে।

সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে রেজা ফারুকী বলেন, সরকার বা প্রশাসনের যদি সদিচ্ছা থাকে, ওপর মহলে চাপ দিলে কি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন হবে না? উপস্থাপক নুরুল ইসলাম ফারুকীর সুনাম, সুখ্যাতি ছিল, আছে। এসব বিবেচনা করে হলেও মামলার গুরুত্ব দেওয়া উচিত। যারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, যারা পরিকল্পনা করেছে আর তাকে হত্যা করতে যারা কলকাঠি নেড়েছে তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত। তাদের সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হোক।

সরকার যেন এ মামলা নিয়ে আর কালক্ষেপণ না করে এ অনুরোধ রেজা ফারুকীর। তিনি বলেন, এ মামলার বিচার করা উচিত। এক্ষেত্রে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি। তার হস্তক্ষেপই পারে মামলাটি দ্রুত শেষ করতে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছি। এ বিষয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করছি।

মামলার বাদী নুরুল ইসলাম ফারুকীর আরেক ছেলে ফয়সাল ফারুকী বলেন, মামলায় ন্যায়বিচার পাবো এ নিয়ে আমরা এখনো আশাবাদী। সম্প্রতি আমাকে সিআইডিতে ডেকে নেওয়া হয়। মামলা সম্পর্কে তারা আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে। অ্যাডিশনাল এসপি মো. জিসান মামলার তদন্ত পেয়েছেন। তারা আবার নতুনভাবে মামলার তদন্ত শুরু করতে চাচ্ছেন। আমাদের ফ্যামিলিরও সহযোগিতা চেয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা এত বছর ধরে চিন্তা করছি। সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে সন্দেহ করছি না। অবশ্য অনেকবার বাবাকে ফোনে থ্রেট দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেননি। কে থ্রেট দিয়েছে তাও বলেননি। পুরো পরিবার প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছি।  

এদিকে, মামলার সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তার  সঙ্গে যোগাযোগ করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

মামলা সম্পর্কে আসামিপক্ষের আইনজীবী জায়েদুর রহমান বলেন, মামলার তদন্ত সঠিক সময়ে শেষ না হওয়ায় আসামিদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। প্রতি ধার্য তারিখে তাদের আদালতে হাজিরা দিতে হয়। এদের মধ্যে অনেকের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। আদালতে আসার খরচও থাকে না। এভাবেই তারা আদালতে এসে যাচ্ছেন। আর দীর্ঘ তদন্তের কারণে আদালত সম্পর্কে মানুষের মধ্যে বিরূপ ধারণার সৃষ্টি হচ্ছে।

তিনি বলেন, মামলার তদন্তে পুলিশ যদি আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ না পায় তাহলে তারা মামলা থেকে অব্যাহতি পাবেন। তাদের ভোগান্তির শিকার হতে হবে না। আর তারা যদি জড়িত থাকেন তাহলে তাদের বিচার শুরু হবে। কিন্তু এতদিন তাদের আদালতে তো আসতেই হচ্ছে।

প্রকৌশল নিউজ/এমআরএস