আকাশপথে ভাড়ার নৈরাজ্যের নেপথ্যে যারা
অসাধু সিন্ডিকেটের কারসাজিতে আকাশচুম্বী বিমান ভাড়ায় নাভিশ্বাস উঠেছে রেমিটেন্স যোদ্ধাদের। টিকিটের মূল্য দুই থেকে তিনগুণ বৃদ্ধিতে প্রায় ৫০ হাজার প্রবাসী শ্রমিকের কর্মস্থলে যাওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চিয়তা। অসাধু টিকিট সিন্ডিকেটের নৈরাজ্যের কালো থাবা অদৃশ্য এক সিন্ডিকেটের জালে বন্দি বিমান টিকিটের সিংহভাগ। এ সংকট সমাধানে জানুয়ারি মাসে ভুক্তভোগীরা দ্বারস্থ হন উচ্চ আদালতের।
এবিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিশির মনিরের সাথে কথা হলে তিনি আজকের সংবাদ’কে জানান, বিমান ভাড়া নিয়ে সিন্ডিকেটিক ব্যবসায়ীরা কিভাবে সাধারণ যাত্রীদের হয়রানি করছে বর্তমান সময়ে সে বিষয়টি আদালতের সামনে আনার চেষ্টা করেছি। এছাড়া কিভাবে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী অগ্রিম টিকিট বুকিং করে টিকিটের কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে। শুরুতে যে নামে বুকিং দেওয়া হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত তারা ট্রাভেল করছেন না এবিষয়টি আদালতের সামনে তুলে ধরেছি। আইনজীবী শিশির মনির আরও বলেন আমরা পরবর্তী শুনানির অপেক্ষায় আছি।
দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে মহামারি করোনাভাইরাসের সময়েও কোনো প্রকার প্রভাব পড়েনি, তার অন্যতম কারণ বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিটেন্সে। যাদের একটি বড় অংশ সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কাজ করেন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশে পাড়ি জমানো প্রবাসী শ্রমীকদেরকে জিম্মি করে মধ্যপ্রাচ্যগামী এয়ারলাইন্সগুলো সিন্ডিকেট করে টিকিটের দাম বৃদ্ধি করায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে এসব শ্রমিকদের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত প্রবাসী শ্রমিকদের দেশের স্বার্থেই দ্রুত বিদেশ পাঠানোর ব্যবস্থা করা উচিত। তা না হলে দেশের রেমিটেন্সে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
টিকেটের মূল্য বৃদ্ধির সাথে আটাব সদস্যদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। নিচে আটাব সদস্যদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ তুলে ধরা হলো :
কাজী এয়ার ইন্টারন্যাশনালের প্রতারণা:
কাজী এয়ার ইন্টারন্যাশনাল। ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য,হজ্জে অনিয়ম আর ট্যাক্স ফাকি দেয়ার অভিযোগে ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটিতে অভিযান চালিয়েছিলো দুদক। এবার মধ্যপ্রাচ্যগামী টিকিটে দ্বিগুণের বেশি ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্যে্ও এসেছে কাজী এয়ার ইন্টারন্যাশনাল নাম । প্রতিষ্ঠানটির পল্টনে অফিসে প্রবেশে লক্ষ করা গেল একাধিক টেবিলে ওমান, সৌদি আরব ও দুবাইয়ের প্রবাসীদের পাসপোর্ট এর কপি দিয়ে টিকেট বুকিং এর কার্যক্রম চলছে। একাধিক প্রবাসী যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রিয়াদ, জেদ্দা, মাস্কাট ও দুবাই সেক্টরের ইকোনমি ক্লাসের স্বাভাবিক একমুখী ভাড়া ত্রিশ থেকে পয়ত্রিশ হাজার টাকা হলেও এখানে এক লাখ টাকা থেকে এক লাখ ত্রিশ হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। কাজে যোগদানের সময় চলে আসায় অনেকটা বাধ্য হয়ে টিকিট নিচ্ছেন তারা। আরেক পাশে লক্ষ্য করা গেল পাসপোর্ট এর স্তুপ। যা প্রসেস করা হচ্ছে সৌদি আরবের টিকেটের জন্য। কাজী এয়ার ইন্টারন্যাশনালের মালিক মূলত আটাবের প্রভাবশালী সদস্য হওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে সেভাবে কেউ কথা বলতে সাহস দেখায় না।
এসময় পরিচয় না প্রকাশের শর্তে কাজী এয়ার ইন্টারন্যাশনালের একজন কর্মকর্তা আজকের সংবাদ'কে জানান, এখানে নির্দিষ্ট এজেন্ট ছাড়া টিকিট বিক্রি হয় না। অতিরিক্ত দামে টিকেট বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, এজেন্টের সাথে কথা বলে যাত্রী বুঝে টিকিটের মূল্য নির্ধারন করা হচ্ছে এখানে। আর টিকিটের মূল্য গায়ে উল্লেখ থাকার কথা থাকলে এখানে মানা হচ্ছে না তা।
নড়িয়া ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরসের প্রতারণা:
নড়িয়া ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস। দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকরুটে বিমান টিকেট বিক্রি করেন তারা। গ্রাহকের অভিযোগ অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে টিকিট ক্রয়ের জন্য অফার দেখে আসলেও পরবর্তীতে নানা অজুহাতে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে নড়িয়া ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস।
নড়িয়া ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস এর মালিক সবুজ মুন্সীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ হলে তিনি আজকের সংবাদ'কে জানান, আমি আটাবের নব নির্বাচিত কমিটির সদস্য। এটা কি আপনি জানেন। কিভাবে গ্রুপ টিকিট এর অফার দিচ্ছেন এমন প্রশ্ন করতে তিনি বলেন আমি একাধিক এজেন্সির সাথে চুক্তি করেছি। তাদের থেকে আমি টিকিট নিচ্ছি। অতিরিক্ত দাম নেওয়ার বিষয় জানান, আমি লাভ করার জন্যই প্রতিষ্ঠান খুলেছি। একটু লাভ তো করবো এটাই স্বাভাবিক। সরাসরি গ্রাহকের কাছে টিকিট বিক্রি করেন না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান,গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে আগ্রহী না।
জে আর ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরসের প্রতারণা:
পল্টনের এই প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে এজেন্ট নিয়োগ করে অতিরিক্ত দামে টিকিট বিক্রি করে আসছে। এছাড়া জে আর ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরসের অফিসে গিয়েও দেখা মেলে একাধিক এজেন্ট প্রবাসী যাত্রীদের নিয়ে এসে টিকিট সংগ্রহ করছে। এবিষয় কথা বলার জন্য প্রতিষ্ঠানের মালিক এনামুল হক বাবুলের সাথে যোগাযোগ করা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা ফেরদৌসের সাথে কথা হলে তিনি আজকের সংবাদ’কে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যগামী শ্রমিক বেশি। তাদের অনেকেই যাওয়ার পর নানা কারণে বিমানবন্দর থেকে দেশে ফিরে আসে। আর এ কারণে আমাদের গুনতে হয় অতিরিক্ত অর্থ। তাই এজেন্ট হয়ে টিকিট বিক্রি করি আমরা। তাদের ( মধ্যপ্রাচ্যগামী শ্রমিক) জন্য ব্যবসায় লোকশান গুনতে পারবো না।
এবিষয়ে কথা বলার জন্য আটাবের সভাপতি এস.এন.মঞ্জুর মোর্শেদ (মাহবুব) এর সাথে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। আকাশপথে ভাড়ার নৈরাজ্য নিয়ে বিমানের এমডি আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল এর সাথে কয়েক দফার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।