রূপগঞ্জে হতাহতের ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্ত চেয়ে ৩৬ নাগরিকের বিবৃতি
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সেজান জুস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ৫১ শ্রমিক নিহতের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন দেশের ৩৬ নাগরিক।
রোববার এক বিবৃতিতে তারা জানান, আমরা এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত বিচার ও শাস্তি দাবি করছি। পাশাপাশি সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান ‘অগ্নিকাণ্ডের দায় কি আমার’ শীর্ষক যে বক্তব্য দিয়েছেন আমরা তার তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে বলা হয়, গণমাধ্যম থেকে জানা যায়, ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সময় শ্রমিকরা প্রাণ বাঁচানোর জন্য বের হয়ে আসতে চাইলে বহির্গমনের পথ তালা বন্ধ দেখতে পায় এবং ছাদে প্রাণ বাঁচানোর জন্য যাওয়ার সময়ও দুটো সিঁড়ির একটি বন্ধ দেখতে পায়। কারখানার ভেতর বিভিন্ন অতি দাহ্য পদার্থ মজুত থাকা এবং জরুরি অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা না রাখা সত্বেও এভাবে অগ্নিকাণ্ডেরর সময় শ্রমিকদের বন্দী অবস্থায় রাখা একটি অমানবিক, চূড়ান্ত দায়িত্বহীন এবং সীমাহীন গাফিলতিমূলক কাজ এবং এটি হত্যাকাণ্ডের সামিল বলে আমরা মনে করি।
তারা বলেন, নিহত এবং আহতদের মধ্যে অনেক শিশু থাকার কারণে এটিও স্পষ্ট যে শ্রম আইনে কল কারখানায় শিশু শ্রমের বিরুদ্ধে যে সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে এখানে তাও মানা হয়নি। আমরা এসব প্রতিটি অপরাধের জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দায়ী সবার বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে নিহত শ্রমিকদের শনাক্ত, হতাহত শ্রমিকদের জন্য যথাযথ চিকিৎসা, উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসনের দাবি জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইতোপূর্বে তাজরীন, রানা প্লাজা, টাম্পাকোসহ বিভিন্ন কারখানায় এ ধরনের শোচনীয় ঘটনার বিচার না হওয়ায় এবং সরকারি তদারকী ব্যবস্থার অভাবে রূপগঞ্জের হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে। এই হত্যার দায় তাই সরকার ও তার কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর এড়াতে পারে না বলে আমরা মনে করি।
মুনাফালোভী মালিক প্রচলিত আইন অনুসারে শ্রমিকের জীবনের নিরাপত্তা বিধান না করে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ইচ্ছেমতো কারখানা চালু রেখে শ্রমিকদের কাজ করতে বাধ্য করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে বলে জানানো হয় বিবৃবিতে।
তারা বলেন, মালিকদের এ আচরণকে আমরা ধিক্কার জানাই। সেইসাথে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধে সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের পরিদর্শন ও তদারকীমূলক দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করার এবং সরকারকে সামগ্রিকভাবে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জোর দাবি জানাচ্ছি।
বিবৃতিদাতারা হলেন-তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, রাশেদা কে. চৌধুরী, মানবাধিকার কর্মী হামিদা হোসেন, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না, সারা হোসেন, নিজেরা করি-র সমন্বয়কারী খুশী কবির, সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, অধ্যাপক স্বপন আদনান, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, ড. শাহনাজ হুদা, অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, ড. নাসরিন খন্দকার, সায়েমা খাতুন, গবেষক ড. নোভা আহমেদ, অ্যাকটিভিস্ট সাদাফ সাজ সিদ্দিকী, অধ্যাপক পারভীন হাসান, অধ্যাপক ফিরদৌস আজিম, মানবাধিকার কর্মী শারমীন মুরশিদ, শিরিন প হক, সঞ্জীব দ্রং, ড. ফষ্টিনা পেরেরা, নূর খান লিটন, জাকির হোসেন, আইনজীবী তবারক হোসেইন, ডা. নায়লা জেড খান, নাসের বুখতিয়ার ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাইদুল ইসলাম।