কপিরাইট কী এবং এর গুরুত্ব
মানবমন, সৃজনশীলতা ও সংস্কৃতির মাধ্যমে যে মেধাসম্পদ সৃজিত হয়, এর আইনগত স্বীকৃতি ও সুরক্ষাই হলো কপিরাইট। মূলত কপিরাইট দ্বারা মেধাসম্পদের ওপর প্রণেতার নৈতিক ও আর্থিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে উক্ত মেধাসম্পদ বিভিন্ন পন্থার পুনরুৎপাদন, বিক্রয়, বাজারজাতকরণ, লাইসেন্স প্রদান এবং জনসম্মুখে প্রদর্শনীর ক্ষেত্রে প্রণেতা বা সৃজনশীল ব্যক্তি একচ্ছত্র অধিকার লাভ করেন।
কপিরাইট রেজিস্ট্রেশনের আওতাভুক্ত বিষয়সমূহ:
সাহিত্য, গবেষণা তত্ত্ব, কম্পিউটার সফ্টওয়্যার, সংগীত, রেকর্ড কর্ম, চলচ্চিত্র, নাটক, অ্যানিমেশন, স্থাপত্য নকশা, চার্ট, ফটোগ্রাফ, স্কেচ, ভাস্কর্য, পেইন্টিংসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম এবং লোক-সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তি ইত্যাদি।
উল্লেখিত বিষয়সমূহের প্রণেতা হিসেবে মৌলিক কর্মের কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন এবং সম্পাদনকারী হিসেবে আনুষঙ্গিক অধিকার সুরক্ষায় রিলেটেড রাইট রেজিস্ট্রেশন করা যায়।
প্রণেতা কে?
ক. সাহিত্য বা নাট্যকর্মের গ্রন্থাকার বা রচয়িতা,
খ. সংগীতকর্মের ক্ষেত্রে সুরকার ও গীতিকার,
গ. ফটোগ্রাফের ক্ষেত্রে চিত্রগ্রাহক,
ঘ. শিল্পকর্মের ক্ষেত্রে সৃজনকারী,
ঙ. চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে প্রযোজক,
চ. কম্পিউটার মাধ্যমের সৃজিত সৃজনশীল কর্মের ক্ষেত্রে কর্মটির সৃজনকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান।
কপিরাইট রেজিস্ট্রেশনের সাধারণ সুবিধা:
ক. নৈতিকভাবে আবহমানকাল ধরে মেধাসম্পদের প্রণেতা হিসেবে আইনগত স্বীকৃতি,
খ. উত্তরাধিকার সূত্রে মালিকানা স্বত্ব নিশ্চিত হয়,
গ. মেধাসম্পদ বিভিন্ন পন্থায় পুনরুৎপাদন, বিক্রয়, বাজারজাতকরণ, লাইসেন্স প্রদান এবং জনসম্মুখে প্রদর্শনীর ক্ষেত্রে একচ্ছত্র অধিকার,
ঘ. মেধাসম্পদের কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন সনদ, যেকোনো আদালতে মালিকানা-সংক্রান্ত উদ্ভূত জটিলতার ক্ষেত্রে প্রমাণক হিসেবে কার্যকর,
ঙ. প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি/ স্বকীয়তা তথা সুনামের (Goodwill) সুরক্ষা প্রদান।
অর্থনৈতিক অধিকারের বিভিন্ন মেয়াদ:
কপিরাইটের ক্ষেত্রে, প্রণেতা কর্তৃক সৃজিত কর্মের আর্থিক অধিকারের মেয়াদ জীবনকাল প্লাস ৬০ বছর পর্যন্ত বলবৎ থাকে।
কখন কপিরাইট বা রিলেটেড রাইট লঙ্ঘিত হয়?
কপিরাইট বা রিলেটেড রাইটের বৈধ মালিক বা প্রণেতার অনুমতি বা লাইসেন্স ছাড়া কিংবা রেজিস্ট্রার অব কপিরাইটের ইস্যুকৃত লাইসেন্স ব্যতীত বা লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করে, এমন কোনো কাজ কপিরাইট লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে।
কপিরাইট লঙ্ঘন হলে প্রতিকার:
কপিরাইট লঙ্ঘনজনিত অপরাধের মামলা ফৌজদারি বা দেওয়ানি আদালতে দায়ের করা যায়।
রিলেটেড রাইট:
আপনার মেধাস্বত্ব যেভাবে আপনাকে আর্থিকভাবে লাভবান করবে—আপনি যদি একজন সৃজনশীল মানুষ হন, আপনার মেধাস্বত্ব রেজিস্ট্রেশন করলে সেই কাগজ আপনি অনলাইনে অথবা অফলাইনে চাওয়া মাত্র প্রদান করতে পারবেন।
অন্য কেউ যদি আপনার আগে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে অথবা জাল দলিল দিয়ে অন্য কোনোভাবে রেজিস্ট্রেশন করে নিয়ে যায়, তখন তা বাতিল চেয়ে আপনি প্রতিকার পেতে পারবেন। আপনার কর্মটি যে যে প্ল্যাটফর্মে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার হবে, প্রতিটি প্ল্যাটফর্ম থেকে আপনি লাইসেন্স প্রদানের মাধ্যমে আপনার রয়্যালটি (আর্থিক লাভ) পাওয়ার অধিকার রাখেন।
আপনার মেধাস্বত্ব দিয়ে আপনি আপনার নিজের বাণিজ্য করতে পারেন, কর্মক্ষেত্র বৃদ্ধি করতে পারেন, সরকারকে তার রাজস্ব আহরণের খাত তৈরি করে দিতে পারেন এবং এর ফলে দেশে জিডিপি বৃদ্ধিতে অংশ রাখতে পারেন। মেধাস্বত্বের গুরুত্ব সৃষ্টিকে এবং সেই সৃষ্টির প্রণেতাকে এবং সেই সৃষ্টির প্রতিটি স্টেকহোল্ডারকে উপকৃত করে। মেধাস্বত্ব লঙ্ঘন বিশ্বব্যাপী অনেক গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। একটি জমির যেমন মূল্য এবং একটি সম্পদ, তেমনই মেধাস্বত্ব দেখা না গেলেও এটির মূল্য আছে এবং এটিও একটি সম্পদ। তাই আপনার মেধাস্বত্ব সম্পদটি দেখাশোনা, যেমন—রেজিস্ট্রেশন এবং পরিচর্যা (বাণিজ্যিক ব্যবহার) করার ক্ষেত্রে সচেতন থাকাটাই সমীচীন।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, উইমেন ইন আইপি বাংলাদেশ; সেক্রেটারি জেনারেল, কপিরাইট সমিতি (এলসিএসসিএফ)