বিশ্ব মেধাস্বত্ব দিবস ২০২১ : সামনে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য ও বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট
মেধাস্বত্বের গুরুত্ব অপরিহার্য যখন অর্থনীতি বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করনে অনেক বড় ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ (পঞ্চাশ) বছর হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে স্বপ্ন পাড়ি দিচ্ছে। যা অবশ্যই নতুন সৃষ্টির দিকেও মনোযোগ দিতে হবে এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য।
বাংলাদেশ সংস্কৃতির দিক থেকে সমৃদ্ধ অনেক উন্নত যাহা ঐতিহ্যের মাধ্যমে প্রকাশিত বাংলার সাহিত্য, চিত্রকলা, সংগীত, সিনেমা, পোশাক এবং স্থাপত্য ইত্যাদির মাধ্যমে। এই সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য অন্য সকল জাতি থেকে অনেক আলাদা এবং সম্পূর্ণ তাই এই ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও সুরক্ষা করা আবশ্যক।
দশক পেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে ট্রেডমার্ক রেজিষ্ট্রেশন এবং এর নিবন্ধনের সংখ্যা বেড়ে চলেছে সাথে মামলা নিষ্পত্তির হারও (সংখ্যায় খুব বেশি আলাদা নয় এমন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিবন্ধকরণ বিকাশের ক্ষেত্রে যথন এখনও উন্নয়নের গ্রাফটিতে এগিয়ে)।
অন্যদিকে পেটেন্ট জাতীয় ফাইলিং এর তুলনার চেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক ফাইলিং রয়েছে, যেখানে কথা রয়ে যায় উন্নয়নের গ্রাফটিতে এগিয়ে যেতে না পারার কারণ। মূল কারণ কি সৃষ্টিশীল নিজেই না কি পেটেন্ট ফাইলিং এর খসড়াটি? পেটেন্ট এবং ডিজাইন আইন ১৯১১ এখনও বর্তমান আইন হিসেবে বলবৎ রয়েছে এবং নতুন পেটেন্ট আইন প্রণয়নের কাজ চলছে।
কপিরাইট আইন ২০০০ (২০০৫ সালে সংশোধিত) কার্যকর হওয়ার পরে আজ দুই দশকেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে তবুও আজ পর্যন্ত কোন কপিরাইট মামলা নথিভূক্ত হয়নি। রেজিষ্ট্রেশনের সংখ্যা কিছু বেড়েছে গত দুই বছরে। যেখানে বাংলাদেশের ঐহিত্য এবং সংস্কৃতি সমৃদ্ধ এবং অন্যান্য দেশ গুলিতে প্রচলন অনেক রয়েছে গান এবং সিনেমার এর পরেও ন্যূনতম রয়েলটি থেকে প্রণেতারা এবং সরকারের রাজস্ব উপার্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এর মধ্যে বিদেশী বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে এই রয়ালটি এবং সরকারের রাজস্ব দেশের বাইরে অনলাইনের মাধ্যমে পাচার করছে। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সৃজনশীল মানুষ তাদের সৃজনশীলতা থেকে অন্য পেশা বেছে নিচ্ছে আর্থিক লাভবান হওয়ার জন্য, যার ফলে দুর্দান্ত কিংবদন্তির কোনও নতুন সৃষ্টি হচ্ছে না।
ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন ২০১৩ বাংলাদেশ জিআই পণ্যগুলির সুরক্ষা দিয়ে থাকে। এখন পর্যন্ত তিনটি পণ্য জামদানি, ইলিশ, ক্ষিরসাপাত আম নিবন্ধনভুক্ত করা হয়েছে। অন্যান্য পণ্য এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ব্যবসায়ের গোপনীয়তা এখনও প্রয়োগের পাশাপাশি সচেতনতা এবং গুরুত্বের অভাব রয়েছে। অনেক সংস্থা, ব্যক্তি, কোনও ধারণা বা প্রকল্প বা কোনও অগ্রগতি করণের সময় কোনও সঠিক চুক্তি না করায় অনেক সৃজনশীল ব্যক্তিগুলো বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের মেধার প্রকৃত সৃষ্টিটি সুরক্ষা করতে না পেরে আই,পি শিল্পকে বিকশিত করার জন্য যে প্রধান ক্ষেত্রগুলিকে প্রধান্য দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে তাহা হল সচেতনতা, ক্ষমতা বৃদ্ধি, দক্ষতা, প্রশিক্ষণ এবং স্টেক হোল্ডারদের ইউনিটি।
মেধাস্বত্বের গুরুত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য বিশ্ব জুড়ে বাংলাদেশকে বাংলার মেধা সম্পদ সুরক্ষা দেয়ার জন্য প্রতিটি সৃজনশীল মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। ব্যবসার চেয়ে আরও বেশি স্রষ্টা তৈরির বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কারণ যদি স্রষ্টাগুলি ধ্বংস হয়ে যায় এবং কোনও নতুন স্রষ্টা জম্ম না নেয় তবে কোন ব্যবসা বিকশিত হতে পারে না।
অধিকার সুরক্ষা ও আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। অভিজ্ঞ ব্যক্তির খুজে বের করে, তাদের কে দিয়ে আইনি কাঠামো প্রলেসি, বিধি প্রণয়নের ভূমিকা রাখার সুযোগ করে দিতে হবে। অগ্রাধিকার দিতে হবে বর্তমান আইন ও অন্যান্য ত্রুটি গুলি সমাধানের একটি সুষ্ঠ, সমৃদ্ধ শিল্প গড়ে তোলার জন্য যেন সকলে উপকৃত হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এবং এর বিধিগুলি যথাযথ ব্যাখ্যা এবং প্রয়োগের জন্য মেধাস্বত্ব আইন গুলির সাথে সামঞ্জস্য করে ব্যাখ্যার প্রয়োজন। এছাড়াও এটির নৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার সুরক্ষার প্রয়োজন।
রপ্তানি ও আমদানী নীতি, মানি লন্ডারিং এবং প্রতিরোধ আইন ২০০২ (যেমন ২০০৮ এবং ২০১২ এর সংশোধিত হয়েছে), কোনও আইপি অধিকার প্রয়োগ করার সময় সরকারের রাজস্ব সমস্ত বিষয় অবশ্যই অবলম্বন করা উচিত। অধিকারের সুরক্ষা এবং মেধাস্বত্ব বাস্তবায়নের পরিচালনার জন্য নতুন ট্রিটি গুলিতে স্বাক্ষরিত করতে হবে বাংলাদেশকে।
উন্নত দেশ গুলিতে যেখানে আইপি রাইটস কঠোরভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় যাহা সময়ের সাথে সাথে এড়ানো চ্যালেঞ্জ হতে পারে। ডিজিটালি বিশ্ব যুগে, যেখানে গোপনীয়তা এবং ডাটা আইন, নীতি ও দক্ষতার অভাবের জন্য অনেক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের এই ক্ষেত্রে উপার্জনের উৎস হিসাবে অবদান রাখছে। উন্নয়শীল বাংলাদেশের জন্য বিশেষায়িত সাইবার সুরক্ষা এবং ডাটা গভর্নেন্স ইউনিট গঠনের গুরুত্বপূর্ণ সময়।
লেখক : ব্যারিস্টার ওলোরা আফরিন, প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, উইমেন ইন আইপি বাংলাদেশ; সেক্রেটারি জেনারেল, কপিরাইট সমিতি (এলসিএসসিএফ)।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। প্রকৌশলনিউজের এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)