মেম্বারের ছেলের লালসার শিকার সীমা রানীর আত্মহত্যা: ধর্ষণের ভিডিও ফাঁস
প্রেমের ফাঁদে ফেলে স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণ ও গোপন ভিডিও ধারণ করে ভিডিওটি ভাইরাল করার হুমকি দিয়ে ওই ছাত্রীর সাথে কয়েক দফা অনৈতিক সম্পর্ক করতে বাধ্য করায় সীমা রানী আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যার দুই মাস পর ধর্ষণের ভিডিও ফাঁস করে অভিযুক্তরা।
গত ৫ জানুয়ারি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার লোহানীপাড়া ইউনিয়নের কাঁচাবাড়ি হিন্দুপাড়ায় এই ঘটনাটি ঘটে। আত্মহত্যার ঘটনাটি দুই মাস আগে হলেও থানায় কোন মামলা বা অভিযোগ পড়েনি।
ইউপি সদস্য ফজু মিয়া ভিডিও ফাঁসের সত্যতা গণমাধ্যম কর্মীদের নিকট নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরো জানিয়েছেন, কাঁচাবাড়ি নয়াপাড়ার ইউনুস মেম্বারের ছেলে হাফিজুর রহমানের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে হিন্দু পরিবারের মেয়ে সীমার ওপর। কাঁচাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে আসা যাওয়ার পথে এক পর্যায়ে তার সাথে প্রেমের সম্পর্ক জড়ান। বিয়ের প্রলোভন দিয়ে হাফিজুর শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন তার সঙ্গে। এক বন্ধুকে দিয়ে গোপনে তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও চিত্র ধারণ করে হাফিজুর। সীমা হাফিজুর রহমানকে বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। মেয়েটি অন্য ধর্মের হওয়ায় হাফিজুর বিয়েতে অস্বীকৃতি জানায়। হাফিজুর চাপ প্রয়োগ করতে থাকে সীমাকে শারীরিক সম্পর্কের জন্য, এতে সীমা রাজি না হওয়ায় তাকে জানানো হয় সকল অপকর্মের গোপন ভিডিও তার মোবাইল ফোনে ধারণ করা আছে।
ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে কয়েক দফায় শারীরিক সম্পর্ক করেন লম্পট হাফিজুর। এতে মেয়েটি হতভম্ভ হয়ে পড়ে। ভিডিও ধারণ করে মেয়েটির প্রতিবেশী কালিপদ মাস্টারের ছেলে বিপুল চন্দ্র। বিপুলের মোবাইলের মেমোরিতে ভিডিও আছে বিষয়টি জানাজানি হলে, কাঁচাবাড়ি বাজারে বিপুলের মোবাইল ফোন সেট কেড়ে নেন হাফিজুরের বন্ধু রাসেল, শহীদুল। ভিডিও স্থানীয় মানুষের মোবাইল ফোনে ছড়িয়ে পড়ে। ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি জানতে পেরে গত ৫ জানুয়ারি নিজ বাড়িতে বিষপান করে সীমা। ওই সময় তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। ময়না তদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওই দিন নিজ গ্রামের শ্মশান ঘাটে দাহ করা হয় সীমার মরদেহ।
হাফিজুরের বাবা ইউনুছ আলী বলেন, আমার ছেলে এর আগে দুইটি বিয়ে করেছে, পরে সেই বিয়ে তালাক হয়ে যায়। কিন্তু এরমধ্যে সে এমন ঘটনা ঘটাবে তা আমি জানিনা। আগামী ইউপি নির্বাচনে আমি মেম্বার প্রার্থী, কেউ হয়তো আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এমন প্রচারণা চালাচ্ছে।
অভিযুক্ত হাফিজুর রহমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এসব আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার-ষড়যন্ত্র। জীবনে চলতে গেলে এরকম অনেক ঘটনাই ঘটতে পারে।
বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) হাবিবুর রহমান বলেন, ঘটনার পর থেকে এ পর্যন্ত থানায় কেউ কোন অভিযোগ করেনি। এখন নিহতের পরিবারের কেউ একজন অভিযোগ করলে আত্মহত্যার প্ররোচণা মামলা নেওয়া যাবে।
তবে ঘটনাটি যেহেতু স্পর্শকাতর, এ জন্য গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করার আশ্বাসও দেন তিনি।
প্রকৌশল নিউজ/সু