৬০ টাকার ত্রাণ নিতে খসলো ৩০ টাকা
সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নের অসহায় মানুষের সাথে অভিনব কাণ্ড এলাকায় আলোড়ন ফেলেছে। সেখানকার একটি বেসরকারী সাহায্য সংস্থা ত্রাণের নামে লুটপাট শুরু করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ আছে, ওই এলাকার বাহেরা গ্রামে প্রতিবন্ধী অধিকার সংস্থা নামে একটি সংস্থা খুলে সদস্যদের ত্রাণ দেবার কথা বলে ৩০ টাকা জামানত রেখে ৬০ টাকা ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। ত্রানের নামে এসব করছে ওই গ্রামের বড় খোকার মেয়ে আছমা পারভীন ও তার স্বামী আব্দুল আলিম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিছুদিন পূর্বে উক্ত গ্রামের আছমা পারভীন ও তার স্বামী আব্দুল আলিম দম্পতি মিলে প্রতিবন্ধী অধিকার সংস্থা নামে একটি সংস্থা তৈরি করেন। তারা ওই সংস্থার সভাপতি ও সম্পাদক হয়ে সমাজের নানান পেশার মানুষজনদের নিকট থেকে অর্থ সংগ্রহ করে আসছেন। সেইসাথে তারা কৌশলে সসাজের বিশিষ্টজনদের অতিথি বানিয়ে এবং গ্রামের সহজ সরল মহিলাদের বোকা বানিয়ে তাদের নিকট থেকে সদস্য ফি হিসেবে ৩০ টাকা নিয়ে তাদেরকে ৬০ টাকার হাস্যকর ত্রাণ বিতরণ করছে।
গত মঙ্গলবার ২৮ রমজানে সকাল ৯ টার দিকে বহেরাস্থ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র সংলগ্ন স্থানে করোনাকালীন সময়ে স্বাস্থ্য বিধি লঙ্ঘন করে গ্রামের সহজ সরল প্রায় তিনশাধিক মহিলা ও শিশুদের একত্রিত করে প্রায় ৪ ঘন্টা ধরে বসিয়ে রেখে তাদেরকে ত্রাণের নামে ৬০ টাকার পরিমান সেমাই চিনি দেওয়া হয়।
এতে ত্রাণ নিতে আসাদের মাঝে প্রচন্ড ক্ষোভ দেখা যায়। এদের কেউ কেউ বলেছেন, এ ধরনের হাস্যকর ত্রাণ বিতরণের জন্য তাদের ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষায় রাখার কোন দরকার ছিলনা। আগে জানতে পারলে তারা এই হাস্যকর ত্রাণ নিতে কেউ আসতো না।
তারা আরও অভিযোগ করেন, আমদেরকে বিভিন্ন প্রকার ত্রাণের প্রলোভন দেখিয়ে রমজান মাসের পূর্বে তাদের নিকট থেকে সদস্য ফি হিসেবে ৩০ টাকাসহ আরো ২০ টাকা হারে সঞ্চয়ের নাম করে নেওয়া হয়েছে। তাহলে তাদেরকে কেন ৬০টাকার মতো ত্রাণ দেওয়া হলো?
এছাড়া উক্ত ধূর্ত আছমা পারভীন ও তার স্বামী আব্দুল আলিম মিলে সমাজের বিত্তবানদের নিকট থেকে ত্রাণ দেওয়ার নামে যে পরিমান অর্থ সংগ্রহ করেছে সেই অর্থ গেল কোথায়? অন্যদিকে প্রতিবন্ধী অধিকার সংস্থা নাম হলেও উক্ত সংস্থায় নামমাত্র কয়েকজন প্রতিবন্ধী পরিবারের সদস্য রাখা হলেও প্রকৃতপক্ষে সাধারণ মহিলাদের সদস্য বানিয়ে সমিতি খুলে অর্থ সংগ্রহ করছে।
পাশাপাশি ঋণ পরিচালনার অনুমতি না থাকলেও ঋণ দেওয়ার নাম করে সঞ্চয় সংগ্রহ করছে এই প্রতিবন্ধী অধিকার সংস্থা। আসলে প্রতিবন্ধীদের অধিকার আদায়ে উক্ত সংস্থার কোন ভুমিকা নেই। তবে সচেতন মহল দাবি করছে, সেদিনের ত্রাণ বিতরণ ছিল নিছক লোক দেখানো মাত্র।
এর নেপথ্যে রয়েছে আছমা পারভীনের নির্বাচনী কৌশল। সে নিজেকে সমাজ সেবক হিসেবে নিজের এলাকায় নিজেকে জাহির করতে সহজ সরল মানুষগুলোকে প্রতিবন্ধী অধিকার সংস্থার আড়ালে নিজের ভোট ব্যাংক তৈরি করছে। সে আগামী ১নং কুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১,২,৩ নং ওয়ার্ডের মহিলা প্রার্থীর ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণার ব্যানার করে এলাকায় ব্যানার ফেস্টুন টানিয়ে রেখেছে।
যদিও উক্ত ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে নির্বাচনী কোন প্রচার করা হয়নি। বিতর্কিত সেই ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ মোস্তাফিজুর রহমানের নাম থাকলেও তিনি উপস্থিত ছিলেননা।
প্রধান আলোচক হিসেবে উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার অধির কুমার গাইন অনুষ্ঠান শুরুর আগে এসে রুটিন বক্তব্য দিয়ে চলে যান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) বিপ্লব কুমার সাহা।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন রাফসান বিক্সস এর আবু হাসান, কুলিয়ার চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রাণনাথ দাশ। কিন্তু স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের সেখানে আমন্ত্রণ জানালেও তারা অনুষ্ঠান বর্জন করেছে।