ই-কমার্স : নতুন লেনদেন পদ্ধতিতে কেনাকাটায় পণ্য ডেলিভারির পর দাম
কেনাকাটায় ক্রেতার স্বার্থ রক্ষায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের জন্য লেনদেন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এরফলে এখন থেকে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান থেকে কেনাকাটার ক্ষেত্রে ক্রেতার আগাম পরিশোধ করা টাকা সরাসরি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে জমা হবে না। ক্রেতারা অর্ডারের বিপরীতে আগাম যে টাকা পরিশোধ করবে, তা থাকবে বিক্রেতার অনলাইনে লেনদেনের টাকা সংগ্রহকারী ‘পেমেন্ট সিস্টেম অপারেটর(পিএসও)’ প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে। ক্রেতা পণ্য হাতে বুঝে পেলেই বিক্রেতার অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেবে পিএসও প্রতিষ্ঠান।
বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ‘ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা’ বিষয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৈঠক শেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাফিজুর রহমান জানান, গ্রাহক পণ্য বুঝে পাওয়ার পর ডেলিভারি মেসেজ দিলে বিক্রেতা মূল্য পাবেন। আর এ প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গেটওয়ের মাধ্যমে এই অর্থ লেনদেন হবে। তবে তার পরামর্শ, গ্রাহকেরা যেন ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড, বিকাশ বা নগদের মতো মাধ্যম ব্যবহার করে কেনাকাটা করেন। তারা যেন আগাম নগদ অর্থ পরিশোধ না করেন।
বৈঠকের পর ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শমী কায়সার বলেন, এক-দুটি প্রতিষ্ঠানের জন্য ই-কমার্স খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এটা কারও কাম্য নয়। ভোক্তা ও বিক্রেতা উভয়ের স্বার্থের জন্য এ খাতে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর বা পরিচালন নির্দেশিকা দরকার। এছাড়া পেমেন্টের নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি প্রয়োজন। নীতিমালা হওয়ার পর ডিজিটাল কমার্স আইনের দিকেও যেতে হবে।
সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছে কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের কাছ থেকে আগাম টাকা নিয়ে পণ্য সরবরাহ করছে না। আবার কেউ কেউ অর্ডার বাতিল করলেও টাকা ফেরত দিচ্ছে না। কোনো কোনো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান তাদের সক্ষমতার চেয়ে অনেকে বেশি অর্ডার ও পণ্য মূল্য নিয়ে ফেলেছে। অনেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান পণ্য সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠানকেও টাকা দিচ্ছে না। তারই প্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নতুন লেনদেন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে একটি ‘স্ক্রো সিস্টেম’ তৈরি করা হবে। পাশাপাশি ই-কমার্স খাতের ব্যবসা পরিচালনার নিয়ম কানুন নিয়ে একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরসহ (এসওপি) নীতিমালা তৈরি করা হবে। যতদিন এই স্ক্রো সার্ভিস ও এসওপি চালু না হচ্ছে, ততদিন অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে ‘পেমেন্ট গেটওয়ে কন্ট্রোল’ ব্যবস্থার মাধ্যমে ই-কমার্সের লেনদেনে ক্রেতার অর্থ তৃতীয় পক্ষের অ্যাকাউন্টে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। বর্তমানে দেশে ৫টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ৫টি ব্যাংক ও একটি মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস কোম্পানি পেমেন্ট সিস্টেম অপারেটর (পিএসও) হিসেবে কাজ করে। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছেই থাকবে ক্রেতাদের টাকা। পণ্য বুঝে পাওয়ার পর বিক্রেতার অ্যাকাউন্টে যাবে তা। এই ব্যবস্থা চালু করতে আগামী রোববার বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে এই সভায় বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা, বিটিআরসি, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রকৌশল নিউজ/এমআর