অর্থনীতিতে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ একান্ত অপরিহার্য : পরিকল্পনামন্ত্রী
দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাতা চলামান রাখার লক্ষ্যে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ, শুল্ক ও ভ্যাট আহরণ ব্যবস্থার সংষ্কার ও যুগোপযোগীকরণ, স্থানীয় বেকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের উন্নতি, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে এডিআর ব্যবস্থার ব্যবহার বৃদ্ধি, পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ সুযোগ তৈরি, ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনা সহায়তা নিশ্চিত করা। সেইসঙ্গে সর্বোপরি কোভিড মহামারী ও এলডিসি উত্তর সময়ে জন্য সহায়ক ও সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন খুবই জরুরী বলে মনে ডিসিসিআই আয়োজিত ওয়েবিনারের বক্তারা।
শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত বেসরকারীখাতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ প্রেক্ষিত শীর্ষক ওয়েবিনার এই পর্যলোচনা তুলে ধরেন ডিসিসিআই সভাপতি। পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান প্রধান অতিথি এবং ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন সম্মানিত অতিথি হিসেবে ওয়েবিনারে অংশগ্রহণ করেন।
ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান। তিনি জানান, কোভিড-১৯ মহামারীর নানাবিধ চ্যালেঞ্জ থাকা সত্বেও দেশের অর্থনীতি গত ৬ মাসে মোটামুটি সঠিক পথেই পরিচালিত হচ্ছে। ২০২৬ ও ২০৪১ সালের প্রাক্কলিত লক্ষমাত্রা অর্জনে আমাদের সরকারী ও বেসারকারীখাতকে একযোগে কাজ করতে হবে। মাহামারী কারণে দেশের জিপিডি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার ৩৭৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে ৩৬৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে। দারিদ্রের হার ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২৯.৫ শতাংশ উন্নীত হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ২.২৬ মিলিয়ন জনগন কর্মসংস্থানের সুযোগ হারিয়েছেন।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, ২০২৬ সালে স্বল্পন্নোত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের আমাদের রপ্তানি প্রায় ৪-৬ বিলিয়ন কমে হাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমতাবস্থায় অর্থনৈতিক পুনঃরুদ্ধারই বিষয়টিকে আমাদের সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। জিডিপিতে করের অবদান বাড়ানোর পাশাপাশি করের হার বৃদ্ধি করতে হলে, দেশের শুল্ক ও ভ্যাট আহরণ ব্যবস্থার সম্পূর্ণ অটোমেশন খুবই জরুরী।
রিজওয়ান রাহমান বলেন, দেশে বেসরকারী বিনিয়োগ বাড়াতে প্রতিযোগিতার সক্ষমতার সূচকে উন্নয়ন, স্থানীয় বেকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের উন্নতি, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে এডিআর ব্যবস্থার ব্যবহার বাড়ানো। সেইসঙ্গে পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ নিশ্চিতকরণ একান্ত অপরিহার্য। সেই সাথে রপ্তানির বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কীম ও রপ্তানি উন্নয়ন ফান্ড’র যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স প্রক্রিয়ার সহজ করা। বাংলাদেশের বাণিজ্য সহযোগি দেশগুলোর সাথে দ্রুততর সহিত পিটিএ ও এফটিএ স্বাক্ষর প্রয়োজন।
তিনি বলেন, মহামারীর কারণে আমাদের সিএমএসএমই খাত মারাত্নকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এখাতের উদ্যোক্তাদের টিকে থাকার জন্য ক্ষতিগ্রস্থ উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা সহায়তা পাওয়া নিশ্চিত করা। সেইসঙ্গে সহায়ক নীতি সহায়তা প্রদান, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন এবং ঋণ প্রদানের সময়সীমা অন্তত ৩ বছর নির্ধারনের প্রস্তাব করেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এখাতের উদ্যোক্তাদের ঋণ আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্নেরও আহ্বান জানান তিনি। দেশের মানুষকে আরও উন্নত স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে সরকারকে আরো বেশি হারে বিনিয়োগ করার পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাত সম্পর্কিত গবেষণা ও উন্নয়ন, বায়োটেকনোলজি ও মহামারী নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি খাতে আরো বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি।
পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন এবং প্রবৃদ্ধি’র লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকার ও বেসরকারীখাত একযোগে নিরলসভাবে কাজ করছে। অর্থনীতিতে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ একান্ত অপরিহার্য। বর্তমান সরকার অর্থনীতির পাশাপাশি সমাজের সকল স্তরের জনগনের সার্বিক উন্নয়নের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, কর ও শুল্কসহ অন্যান্য নীতিতে সংষ্কার ও যুগোপযোগীকরণে ক্ষেত্রে দেশের বেসরকারীখাতের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে। দেশের জনগনকে করোনা মহামারীর থেকে সুরক্ষা দিতে টিকা প্রদান কার্যক্রম গ্রামীণ পর্যায়ে সম্প্রসারণ করেছে।
প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, বিবিএস’র তথ্য মতে, করোনা মহামারীর কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩.৫১ শতাংশ, তবে ২০২১ সালে যা ৫.৪৭ শতাংশ এসে দাঁড়িয়েছে। তিনি জিডিপিতে করের অবদান বাড়ানোর উপর জোরারোপ করেন। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বাই বেক সিস্টেম প্রবর্তন, কৃষিখাত এবং স্থানীয় বাজারের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া প্রয়োজন।
ইউএনডিপি বাংলাদেশের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, মহামারী পুনরুদ্ধার এবং এলডিসি গ্রাজুয়েশন মোকাবেলায় আগামী ৫ বছর আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এজন্য নীতিমালা প্রণয়েনের পাশাপাশি আমাদেরকে সার্বিক প্রস্তুত গ্রহণ করতে হবে। তারল্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তাদের বেশি প্রাধান্য দেওয়ার পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তাদের আরও অধিক হারে ঋণ সহায়তা প্রাপ্তির বিষয়ে নজর দিতে হবে।