সিলেট-৩ উপ-নির্বাচন : সকাল থেকে ভোটগ্রহণ চলছে
মহামারি করোনাভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণের কারণে দুই দফা পেছানোর পর অবশেষে শুরু হয়েছে সিলেট-৩ আসনে উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। আজ শনিবার (০৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টায় এ ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে শেষ হয়েছে উপ-নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা। যদিও ভোটের প্রচারে প্রার্থীদের এবার মাত্র একদিন সময় দেয়া হয়েছে।
এদিকে সকাল ৮টায় ভোট শুরু হলেও নির্বাচনী এলাকার ভোটকেন্দ্রগুলোতে সকাল থেকে তেমন ভোটার উপস্থিতি চোখে পড়েনি। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটাদের উপস্থিতি বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নির্বাচনী এলাকায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
সিলেটের তিনটি উপজেলা দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্জুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ নিয়ে গঠিত এ আসনে ভোট অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পর্যাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তারা নির্বাচনের আগে-পরে দু’দিন করে এবং ও নির্বাচনের দিন মিলিয়ে মোট পাঁচ দিন মাঠে দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপন সূত্রে এমনটিই জানা গেছে।
উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী হাবিবুর রহমান হাবিব, লাঙ্গল প্রতীকে লড়ছেন আতিকুর রহমান আতিক, সাবেক সংসদ সদস্য ও দল থেকে সদ্য বহিষ্কৃত বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শফি আহমদ চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়ছেন। এছাড়াও আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী জুনায়েদ মোহাম্মদ মিয়া।
গুঞ্জন আছে, শফি আহমদ চৌধুরীর ওপর বিএনপি চরমভাবে নাখোশ থাকায় স্থানীয় পর্যায়ের নেতা আর গোষ্ঠীভিত্তিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিএনপির ভোট নিজেদের পক্ষে টানাতে চেষ্টা চালাচ্ছেন অন্য দুই প্রার্থী হাবিব ও আতিক।
প্রার্থী হওয়ার কারণে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য পদ থেকে শফি আহমদ চৌধুরীকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। শুরুর দিকে শফির পক্ষে স্থানীয় পর্যায়ের বিএনপির কয়েকজন নেতা প্রচারে অংশ নেন। পরে কঠোর অবস্থানে থাকা বিএনপি ওই নেতাকর্মীদেরও বহিষ্কার করে। এরপর শফির পক্ষে প্রকাশ্যে বিএনপির আর কাউকে দেখা যায়নি। অনেকটা একাই ভোটের প্রচারণা চালিয়েছেন তিনি।
সিলেটের বিএনপি নেতারা বলছেন, প্রচারের মতো ভোটের মাঠেও নীরব থাকবেন তাদের দলের নেতা-কর্মীরা। ভোটকেন্দ্রে যাবেন না বিএনপির কেউ। এ সরকারের অধীনে সকল নির্বাচনই তারা বর্জন করবেন।
তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৩ আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫২ হাজার। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি এ তিন দলেরই এখানে বড় ভোট ব্যাংক রয়েছে বলে মনে করা হয়। একসময় সিলেট-৩ আসন ছিল জাতীয় পার্টির দুর্গ। টানা তিনবার এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির আব্দুল মুকিত খান। ২০০১ সালের নির্বাচনে মুকিত খানকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপির শফি আহমদ চৌধুরী।
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি মহাজোটের ব্যানারে ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ নিলেও সিলেট-৩ আসন উন্মুক্ত রাখা হয়। সে নির্বাচনে আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হন মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস। আতিককে আলাদা প্রার্থী দেয় জাতীয় পার্টি। আর বিএনপির প্রার্থী ছিলেন শফি আহমদ। আতিক-শফি দুজনকে হারিয়ে সেবার বিজয়ী হয়েছিলেন মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনেও আসনটি নিজের দখলে রাখেন কয়েস। যদিও দশম জাতীয় নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি।
নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, অপরাধ আমলে নিয়ে সংক্ষিপ্ত বিচারকাজ সম্পন্ন করতে সিলেটের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুবুর রহমান ভূঞাকে দক্ষিণ সুরমা উপজেলায়, অঞ্জন কান্তি দাসকে বালাগঞ্জ উপজেলায় এবং সিলেটের মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুমন ভূঁইয়াকে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিচারকাজ সম্পন্ন করার জন্য তারা ২ থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাঁচদিন নির্বাচনী মাঠে দায়িত্ব পালন করবেন। বিচারকাজের জন্য তারা একজন বেঞ্চ সহকারী/স্টেনোগ্রাফার/অফিস সহকারীকে সহকারী হিসেবে সঙ্গে নিতে পারবেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাদের নিজ নিজ অফিস প্রধানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটরা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দায়িত্ব পালনকালে প্রয়োজনীয় যানবাহন সরবরাহ করার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটদের সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় আদালত পরিচালনার নিমিত্তে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সশস্ত্র পুলিশ নিয়োগ দেওয়ার জন্য সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার এবং সিলেট জেলা পুলিশ সুপারকে (এসপি) নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গত বুধবার (০১ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপন সূত্রে জানা গেছে, উপ-নির্বাচনে বিচারবিভাগীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে দুই সদস্যবিশিষ্ট একটি ‘নির্বাচনী তদন্ত কমিটি’ গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন। কমিটির দুই সদস্য হলেন- সিলেটের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ তাসলিমা শারমিন ও সিনিয়র সহকারী জজ নির্জন কুমার মিত্র।