শাহিদ কাপুরের মা নীলিমার একাকিত্বের গল্প
ছোট থেকেই তার আগ্রহ ছিল কত্থক নাচে। সেই মতো প্রশিক্ষণ নেন পণ্ডিত বিরজু মহারাজের কাছে। তিনি দ্রুত বিরজু মহারাজের পছন্দের ছাত্রী হয়ে ওঠেন। এরপর নিজেই কোরিওগ্রাফি শুরু করেন। নাচের পাশাপাশি তিনি জড়িয়ে পড়েন থিয়েটারের সঙ্গেও। বলছি বলিউড সুপারস্টার শাহিদ কাপুর ও ঈশান খট্টরের মা নীলিমার কথা।
নীলিমার বাবা এবং মা দুজনেই ছিলেন সাহিত্যজগতের উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব। ১৯৫৮ সালের ২ ডিসেম্বর তার জন্ম রাশিয়ার মস্কো শহরে। সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক আবহে কেটেছে শৈশব। নীলিমার জন্মের কয়েক বছর পর তার পরিবার দিল্লিতে চলে আসেন। তার মা-বাবা কাজ করতেন একটি নামি ফিল্মি পত্রিকায়। নীলিমার মামা খাজা আহমদ আব্বাস ছিলেন সাংবাদিক এবং পরিচালক। তার বাড়িতে বলিউডের বহু তারকা আসতেন। সেখান থেকেই বলিউড ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে নীলিমার পরিচয়।
অভিনয়ের সূত্রেই কিশোরী নীলিমার সঙ্গে পরিচয় হয় বিখ্যাত অভিনেতা তথা শাহিদ কাপুরের বাবা পঙ্কজ কাপুরের। পরিচয়ের এক বছরের মধ্যেই ১৯৭৫ সালে তারা বিয়ে করেন। তখন নীলিমা ষোড়শী। পঙ্কজ কাপুরের বয়স ২১ বছর। বিয়ের ছয় বছর পরে জন্ম হয় তাদের প্রথম সন্তান শাহিদ কাপুরের। এরপর থেকেই তাদের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। শাহিদের যখন সাড়ে তিন বছর বয়স, বিচ্ছেদ হয়ে যায় তার মা-বাবার।
বিচ্ছেদের পর নীলিমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তার মা-বাবা। নীলিমা নিজেকে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন নৃত্যসাধনায়। বিরজু মহারাজের সঙ্গে দেশ বিদেশে শো করতে যেতেন তিনি। শাহিদ থাকতেন তার দাদু দিদিমার কাছে। নীলিমা জানিয়েছেন, বাবার স্নেহ পায়নি বলে শাহিদ কাপুর ছোট থেকেই নিজের বন্ধুদের বৃত্তের বাইরে খুব চুপচাপ থাকতো।
অর্থোপার্জনের কথা ভেবে নীলিমা নাটকের পাশাপাশি সিনেমাতেও অভিনয় করবেন বলে ঠিক করেন। রাজ বব্বর এবং তার প্রথম স্ত্রী নাদিরার সঙ্গে তার ভালো বন্ধুত্ব ছিল। তাদের সূত্রেই প্রথম ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান। নীলিমা অভিনয় করেন ‘কর্মযোদ্ধা’ ছবিতে। তবে সেটি মুক্তি পেয়েছিল অনেক পরে। তার আগেই ১৯৯০ সালে মুক্তি পেয়েছিল নীলিমার প্রথম ছবি ‘সেলিম লঙড়ে পে মত রো’। বলিউডে সুযোগ বাড়তে থাকায় নীলিমা দিল্লি থেকে মুম্বাই চলে আসেন।
বলিউডের ছবিতে আত্মপ্রকাশের আগে নীলিমা অভিনয় করেছিলেন দূরদর্শনে। ১৯৮৯ সালে শুরু হয়েছিল ধারাবাহিক ‘ফির ওহি তালাশ’। ওই ধারাবাহিকে শেহনাজ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন নীলিমা। তার বিপরীতে ক্যাপ্টেন সেলিমের চরিত্রে অভিনয়ের কথা ছিল শাহরুখ খানের। বেশ কিছু দিন মহড়াও দিয়েছিলেন কিং খান। যদিও নানা কারণে ওই চরিত্রে অভিনয় করেন রাজেশ খট্টর।
একসঙ্গে কাজ করতে করতেই পরিচয় এবং প্রেম। ১৯৯০ সালে বিয়ে করেন রাজেশ এবং নীলিমা। ৫ বছর পর জন্ম হয় তাদের একমাত্র সন্তান ঈশানের। কিন্তু নীলিমার দ্বিতীয় বিয়েও ভেঙে যায় ২০০১ সালে।
দ্বিতীয় বিয়ে ভাঙার তিন বছর পর নীলিমা আবার বিয়ের কথা ভাবতে শুরু করেন। ২০০৪ সালে তিনি বিয়ে করেন বাল্যবন্ধু রাজা আলি খানকে। কিন্তু মায়ের তৃতীয় বিয়ে মানতে পারেননি শাহিদ। তার মনে হয়েছিল, মা খুব দ্রুত সম্পর্ক নিয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এই নিয়ে তাদের মতবিরোধও হয়েছিল। যদিও তৃতীয় বিয়েও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ২০১১ সালে বিচ্ছেদ হয়ে যায় রাজা এবং নীলিমার।
অভিনেত্রীর প্রথম এবং দ্বিতীয় স্বামী এখন বিবাহিত। পঙ্কজ কাপুর ১৯৮৮ সালে বিয়ে করেছেন সুপ্রিয়া পাঠককে। দ্বিতীয় পক্ষের স্বামী রাজেশ খট্টর ২০০৮ সালে বিয়ে করেছেন বন্দনা সজনানিকে। তাদের একটি ছেলেও হয়েছে কয়েক বছর আগে। কিন্তু নীলিমা এখন ব্যক্তিগত জীবনে সম্পূর্ণ একা। পরিচালনা, লেখালেখি, অভিনয় এবং কত্থক ঘিরেই আবর্তিত তার জীবন।
প্রকৌশল নিউজ/এস