৮৫ বছর বয়সী বেলা রানীর করোনাযুদ্ধ জয়ের গল্প
কোভিড-১৯ এর কারণে যখন চারিদিকে শূন্যতা আর হাহাকার চলছে, তখন কোথাও আছে ফিরে আসার সেই কঠিন সময়ের গল্প।
পরিবার পরিজন থেকে একাকী দূরে, বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকার এই কঠিন সময় আরোও কঠিন হয় যদি প্রিয়মুখের না দেখা মেলে। এমন সময়কে কিভাবে বরণ করতে হয় তা জানেন সেই, যিনি এই অবস্থা থেকে ফিরে এসেছেন। এমনই এক গল্প বলছিলেন, সাতক্ষীরার ৮৫ বছর বয়সী এক মা বেলা রানী রায়।
সময়টা গেলো বছরের ২৫ ডিসেম্বর। তারও কিছু আগে নানা শারিরিক জটিলতায় অসুস্থ্য হন তিনি। পারিবারিক ডাক্তার এবং নিজ সন্তান (তিনি নিজেও ডাক্তার) এর পরামর্শ মত চিকিৎসা চলছিল তার। কয়েকদিন যাওয়ার পর যখন অবস্থার উন্নতি না হয়, তখন তাকে নিয়ে শুরু হয় ভিন্নভাবে চিকিৎসার তৎপরতা।
২৬ ডিসেম্বর সকালে তাকে এয়ার এম্বুলেন্সে করে সাতক্ষীরা থেকে আনা হলো ঢাকাতে। ক্রমশ যখন কোভিড সিম্পটম পাওয়া যাছিল, তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এসেই কুর্মিটোলা হসপিটালে নেওয়ার জন্য।
এয়ারপোর্ট থেকে যথারীতি সেখানে নিলেও উন্নত চিকিৎসার আশায় ২৭ তারিখে তাকে নেওয়া হয় ঢাকার মগবাজারের আদ-দ্বীন হাসপাতালে। একই দিনে আবারও আদ-দ্বীন থেকে কোভিড স্যাম্পল কালেকশন এবং পরীক্ষা করে রাতেই জানা যায়, তিনি কোভিড পজেটিভ।
শুরু হয় নতুন যুদ্ধ। নিতে হবে নতুন কোথাও। পারিবারিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইন্সটিটিউট ও হসপিটালই নির্ধারিত হয় পরবর্তী চিকিৎকেন্দ্র। রাতেই নেওয়া হয় সেখানে। মাকে সুস্থ্যভাবে ফিরে পাওয়ার জন্য শুরু হয় সন্তানদের প্রার্থনা। আত্মীয় স্বজনরাও প্রার্থনা করতে থাকেন বেলা রানীর ফিরে আসার জন্য। একদিকে বিভিন্ন টেষ্ট আর ঔষুধ কিনতে ছোটাছুটি, অন্যদিকে তাকে নিয়ে ভাবনায় সকলে। সবার চিন্তার কারন একটাই বয়স যে তার অনেকটা বেশি। প্রায় ৮৫। এমন বয়সে এই ক্রিটিক্যাল অবস্থা থেকে ফিরে আসাটা সৌভাগ্য নয়, আশীর্বাদ বটেই।
৭০ লিটার অক্সিজেন চলছে তখন বেলা রানীর ওপর। ভাবতেই অবাক লাগে যখন বুকটা অক্সিজেনের জন্য এভাবে চেপে ধরে তখন কিভাবে নিজেকে সামলে টিকে থাকতে একটা মানুষ মনের সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করেন। তবুও রোগকে পরাস্ত করে সকল ডাক্তার, সেবিকা আর প্রিইজনের আশীর্বাদে হাসিমাখা মুখ নিয়ে ফিরে এসেছেন, বেলা রানী রায়।
চিকিৎসা সময়কালে, রোগির সাথে আচরনে অভিভূত হয়ে, বন্ধুত্ব হয় রেহানা নামের সেখানকার সিনিয়র স্টাফ নার্সের সাথে।
প্রিয়জন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, দেশবাসীর আশীর্বাদে আবারোও আগের জীবনে ফিরে আসতে পেরেছেন বেলা রানী রায়।
পরিবার আত্মীয় স্বজন, এলাকাবাসী এবং বেলা রানীর সেবায় নিয়োজিত সকল চিকিৎসক, নার্স এবং সর্বপরী দেশেবাসীর প্রতি প্রতি শুভ কামনা আর প্রার্থনা জানিয়েছেন বেলা রানীর ছেলে ডাক্তার টি কে রয়।