বিশ্বে আবারও বাড়ছে করোনার সংক্রমণ


প্রকৌশল প্রতিবাদক :
বিশ্বে আবারও বাড়ছে করোনার সংক্রমণ
  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বের ১০৬ দেশে বিদ্যুৎগতিতে ছড়িয়ে পড়েছে মহামারীর করোনার নতুন ধরন 'ওমিক্রন'। ইউরোপের বেশ কিছু দেশে এটি বর্তমানে তাণ্ডব দেখাচ্ছে। চলমান করোনা মহামারিতে বিশ্বজুড়ে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। একইসঙ্গে আগের দিনের তুলনায় ব্যাপক ভাবে বেড়েছে নতুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপীয় প্রধান ড. হ্যানস ক্লুগে ইউরোপের দেশগুলোর জন্য সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। বলেছেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি, আরেকটি ঝড় আসছে। এতে আমাদের অঞ্চলে বেশি সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে।

গত ২৪ ঘণ্টায় সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৭ হাজার ৮১ জন। একই সময়ে ভাইরাসটিতে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৭ লাখ ৪১ হাজার ৪৯০ জন।

গত সপ্তাহে ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ায় কোভিডে ২৭ হাজার মৃত্যু হয়েছে। ২৬ লাখ নতুন সংক্রমণ ধরা পড়েছে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চেয়েও ওমিক্রণ ভয়াবহ। গত বছরের এই সময়ের চেয়েও এবার ইউরোপে সংক্রমণের হার ৪০ শতাংশ বেশি।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। অন্যদিকে দৈনিক প্রাণহানির তালিকায় এরপরই রয়েছে রাশিয়া, জার্মানি, পোল্যান্ড, ইউক্রেন ও ফ্রান্স। এতে বিশ্বব্যাপী করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২৭ কোটি ৬৫ লাখ ৬২ হাজার ৪৭৭ জন। অন্যদিকে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫৩ লাখ ৮৪ হাজার ৫৮৭ জন।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। এই সময়ের মধ্যে দেশটিতে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৮০ হাজার ৩৩৮ জন এবং মারা গেছেন ১ হাজার ৮১১ জন। করোনাভাইরাসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৫ কোটি ২২ লাখ ৫১ হাজার ২৭৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৮ লাখ ৩০ হাজার ৯৯০ জন মারা গেছেন।

অন্যদিকে দৈনিক প্রাণহানির তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ হাজার ২৭ জন এবং নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ২৫ হাজার ৯০৭ জন। এছাড়া মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ২ লাখ ৬৭ হাজার ৭১৯ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ৯৯ হাজার ২৪৯ জনের।

গত ২৪ ঘণ্টায় যুক্তরাজ্যে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৯০ হাজার ৬২৯ জন এবং মারা গেছেন ১৭২ জন। মহামারির শুরু থেকে এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ১৫ লাখ ৪২ হাজার ১৪৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং ১ লাখ ৪৭ হাজার ৪৩৩ জন মারা গেছেন। একই সময়ে ফ্রান্সে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৭২ হাজার ৮৩২ জন এবং মারা গেছেন ২২৯ জন।

এছাড়া জার্মানিতে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৫ হাজার ৪৯ জন এবং মারা গেছেন ৫১৬ জন। করোনা মহামারির শুরু থেকে ইউরোপের এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৬৮ লাখ ৬৯ হাজার ৪৯৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং ১ লাখ ৯ হাজার ৭৫৯ জন মারা গেছেন। একই সময়ের মধ্যে ইউক্রেনে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৬ হাজার ২৯ জন এবং মারা গেছেন ৩৪৬ জন।

লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল করোনায় আক্রান্তের দিক থেকে তৃতীয় ও মৃত্যুর সংখ্যায় তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮৬ জন এবং নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৩ হাজার ৬২১ জন। অপরদিকে মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২ কোটি ২২ লাখ ১৯ হাজার ৪৭৭ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৬ লাখ ১৭ হাজার ৯৯১ জনের।

এদিকে করোনায় আক্রান্তের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। তবে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যার তালিকায় দেশটির অবস্থান তৃতীয়। মহামারির শুরু থেকে দেশটিতে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ৩ কোটি ৪৭ লাখ ৫৮ হাজার ৭৮ জন এবং মারা গেছেন ৪ লাখ ৭৮ হাজার ৬১ জন।

এছাড়া করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ইরানে ৪৩ জন, তুরস্কে ১৮৭ জন, হাঙ্গেরিতে ১৩২ জন, ইতালি ১৫৩ জন এবং ভিয়েতনামে ২৫০ জন মারা গেছেন। অন্যদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় মেক্সিকোতে মারা গেছেন ৫৮ জন। মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত উত্তর আমেরিকার এই দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ৯৭ হাজার ৯১৬ জনের।

ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়ায় কানাডার কুইবেকে ফের লকডাউন আরোপ করা হয়েছে। গত সোমবার বিকাল ৫টা থেকে কুইবেকের জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার রোধে কুইবেক প্রদেশে স্কুল, বার, জিম এবং সিনেমা থিয়েটার বন্ধ করে দিয়েছে।

দেশটির কর্তৃপক্ষ বলেছে, গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ অর্থাৎ চার হাজার ৫৭১ জন নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে।

কুইবেকের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ক্রিশ্চিয়ান দুবে বলেন, বর্তমানে দ্রুত বিস্তারকারী ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবে করোনা রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। এ কারণেই সরকার লকডাউনের পদক্ষেপ নিয়েছে।

জরুরি না হলে দেশের বাইরে কোথাও না যেতে নাগরিকদের পরামর্শ দিয়েছে ফেডারেল সরকার। প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো স্পষ্ট করে বলেছেন, কোথাও যাওয়ার সময় এটা না।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর গত বছরের ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনাকে ‘বৈশ্বিক মহামারি’ হিসেবে ঘোষণা করে। এর আগে একই বছরের ২০ জানুয়ারি বিশ্বজুড়ে জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করে সংস্থাটি।