সেই রায়হান এখন ব্র্যাকে
মহামারির মধ্যেও অভিবাসীদের প্রতি মালয়েশিয়া সরকারের নিষ্ঠুর আচরণ নিয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়ে গ্রেপ্তার ও কারাভোগ করা বাংলাদেশি তরুণ রায়হান কবির দেশে ফিরে প্রবাসীদের অধিকার রক্ষার জন্য কাজ করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছিলেন। তার সেই আশা পূরণ করতে পাশে দাঁড়িয়েছে ব্র্যাক। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামে ইনফরমেশন সার্ভিস সেন্টার অফিসার হিসেবে কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন তিনি।
বৃহষ্পতিবার দুপুরে রায়হানের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম প্রধান শরিফুল হাসান। তিনি জানান, রায়হান যেভাবে প্রবাসীদের অধিকার রক্ষার জন্য লড়াই করেছিলেন সেটি যে কাউকে মুগ্ধ করবে। রায়হান সবসময় প্রবাসীদের জন্য কাজ করতে চেয়েছিলেন। ব্র্যাক মাইগ্রেশন পোগ্রামে তিনি সেই সুযোগ পাবেন। প্রবাসীদের বিমানবন্দরে জরুরী সেবা দেওয়ার জন্য বিমানবন্দরের উল্টো দিকে ব্র্যাকের একটি তথ্য ও সেবা কেন্দ্র রয়েছে। প্রবাসীদের বিমানবন্দরে জরুরী সেবা দেওয়ার জন্য বিমানবন্দরের উল্টো দিকে ব্র্যাকের একটি তথ্য ও সেবা কেন্দ্র রয়েছে। গত দুই বছরে আমরা সেখান থেকে ১৭ হাজার মানুষকে নানা ধরনের সেবা দিয়েছি। মালয়েশিয়া থেকে একযুগ আগে ফেরা আরেক প্রবাসী কর্মী আল আমিন নয়ন ভাই সেই সেন্টারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সেখানে এখন নয়ন ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করবেন রায়হান।
নিয়োগপত্র পাওয়ার পর নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে রায়হান কবির বলেন, প্রবাসীরা রেমিট্যান্স যোদ্ধা। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তাদের অর্জন অনেক। তারপরেও তারা প্রায়ই দুর্দশায় পড়েন। এই প্রবাসীদের জন্য কিছু করার ইচ্ছা ছিল অনেক আগে থেকেই। মালয়েশিয়াতেও সেটা করেছি, এখনো করবো।
গত বছরের ৩ জুলাই আল জাজিরার ইংরেজি অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ‘লকডআপ ইন মালয়েশিয়ান লকডাউন-১০১ ইস্ট’ শীর্ষক এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে মালয়েশিয়ায় থাকা প্রবাসী শ্রমিকদের প্রতি লকডাউন চলাকালে দেশটির সরকারের নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরা হয়।
সেখানে দেখানো হয়েছে, কর্মহীন ও খাবারের সংকটে থাকা অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার লঙ্ঘন করে ঘর থেকে টেনে-হিঁচড়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
ওই প্রামাণ্য প্রতিবেদনে বাংলাদেশিদের পক্ষে বক্তব্য দেন রায়হান কবির। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মালয়েশিয়ার পুলিশ তার বিরুদ্ধে সমন জারি করে। ২৪ জুলাই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিবাসন নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশের ২১টি সংগঠনসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠন এই গ্রেপ্তারের নিন্দা জানায় অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করে। মালয়েশিয়া সরকার তাকে কয়েকদফা জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু রায়হান জানান, তিনি যা দেখেছেন তাই বলেছেন। পরে মালয়েশিয়া সরকার তাকে নির্দোষ হিসেবে ২২ আগস্ট বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়।
রায়হানের বাড়ি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে। বাবা-মা আর দুই ভাই-বোনের পরিবার। স্থানীয়রা বলছেন, বন্দরে নিজ এলাকাতেও সবার কাছে প্রতিবাদী তরুণ হিসেবে পরিচিত রায়হান। এলাকার সবার বিপদে-আপদে পাশে থাকতেন। নিজের বই, টাকা দিয়ে সাহায্য করতেন শিক্ষার্থীদের। এলাকায় মাদকের বিরুদ্ধে দারুণ সোচ্চার ছিলেন তিনি। সবার বিপদে পাশে থাকতেন। এখনো সেই কাজটিই করতে চান রায়হান।