আর্থিক সংকটে নিজেকে ঋণ খেলাপি ঘোষণা করল শ্রীলঙ্কা
আর্থিক সংকটে জর্জরিত শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ তলানিতে ঠেকায় ৫১ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণ এই মুহূর্তে শোধ করতে পারবে না বলে জানিয়েছে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়। এর মাধ্যমে কার্যত দেশটি নিজেকে ঋণ খেলাপি হিসেবে ঘোষণা করল। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় শেষ হয়ে আসায় এই উদ্যোগ নিতে বাধ্য হয়েছে দেশটির সরকার।
মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) শ্রীলঙ্কার অর্থ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এতথ্য জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যেসব বিদেশি সরকার ও সংস্থা বিভিন্ন সময় শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দিয়েছে, তারা চাইলে আজ থেকে সে ঋণকে ক্যাপিটালাইজ করতে পারে। অর্থাৎ প্রাপ্য সুদের পরিমাণকে মূলধনের সঙ্গে যোগ করে দিতে পারে অথবা ঋণের অর্থ শ্রীলঙ্কান রুপিতে পরিশোধের বিকল্প বেছে নিতে পারে।
ঋণ খেলাপি হওয়ার জন্য নিজেদের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার শূন্য হয়ে যাওয়াকেই দায়ী করেছে শ্রীলঙ্কা। যার জেরে তারা বিদেশ থেকে কোনও জিনিস আমদানি করতে পারছে না। প্রতিনিয়তই শ্রীলঙ্কার আর্থিক দুর্দশা চরমে উঠেছে। তেলের অভাবে অধিকাংশ স্থানে সাধারণ যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। তেলের অভাবে দেশের এক স্থান থেকে অন্যস্থানেও পণ্য সামগ্রী পাঠানো যাচ্ছে না। লোডশেডিং এখন শ্রীলঙ্কার রোজকার জীবনের সঙ্গী হয়েছে। অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করে রাখা হয়েছে। পর্যান্ত খাবার মজুত নেই বলে জানা গিয়েছে। বহু স্থানে মানুষ আধপেটা খেয়েই দিন নির্বাহ করছে- এমন খবরও সূত্রে মিলেছে।
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে, শ্রীলঙ্কা সরকার চেষ্টা করছে জরুরি পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে যে অবস্থা তৈরি হয়েছে তা মোকাবিলা করার। ঋণ খেলাপির বিষয়টিকে তারা চূড়ান্ত ব্যবস্থা বলে বিবেচনা করছে।
এই উদ্যোগকে 'শেষ ভরসা' হিসেবে বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে শ্রীলঙ্কার অর্থ মন্ত্রণালয়। যাতে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির আরও অবনতি না হয়।
আর্থিক মন্দার জেরে শ্রীলঙ্কায় ২২ মিলিয়ন মানুষের দুর্দশা যেমন চরমে উঠেছে তেমনি সাধারণ মানুষ রাস্তা নেমে এসে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। একাধিক স্থানে প্রায় প্রতিদিন অবরোধ করে বিক্ষোভ চলছে। প্রেসিডেন্ট প্যালেসেও ঢোকার চেষ্টা করেছে বিক্ষোভকারীরা।
শ্রীলঙ্কার আর্থিক পরিস্থিতি যে ভালো নয় তা গত বছরই সামনে এনেছিল বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আর্থিক রেটিং প্রদানকারী সংস্থা। এমনকী শ্রীলঙ্কাকে আর ঋণ দেওয়া উচিত নয় বলেও তারা বারবার সতর্ক করেছিল। ফলে দেশটি তাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি নতুন ঋণ নিতে ব্যর্থ হয়।
ইতোমধ্যে ভারত ও চীনের কাছ থেকে ঋণ রেয়াত চেয়েছে শ্রীলঙ্কা, কিন্তু উভয় দেশ এর পরিবর্তে শ্রীলঙ্কাকে ধারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার সুযোগ দিয়েছে।