তারাবিহ’র নামাজের উপকারিতা
রমজানের তারাবিহ রোজা রাখার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এর মধ্যে একটি ছাড়া যেন আরেকটি পূর্ণতা পায় না। রমজানে রাতে মুমিনগণ জামাতের সাথে এই নামাজ আদায় করেন। আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার এক অনন্য মাধ্যম তারাবিহ নামাজ।
আমরা জানি, তারাবিহ শব্দটি আরবি। এর বাংলা প্রতিশব্দ আরাম করা, বসা বা বিশ্রাম নেয়া। রমজান মাসে ইশার পর থেকে ফজরের নামাজের আগ পর্যন্ত এই নামাজ আদায়ের সময় বিদ্যমান থাকে। তারাবিহ নামাজ ইশার নামাজ আদায়ের পর বিতর নামাজের আগে পড়া উত্তম।
চার মাযহাব তথা হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী, হাম্বলি মাযহাবের চার ইমামসহ ফোকাহায়ে কেরাম বলেছেন, রোজাদার নারী-পুরুষের জন্য তারাবিহ নামাজ পড়া সুন্নাত। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে নিয়মিত এ নামাজ আদায় করতেন। কাজেই নামাজের গুরুত্ব অশেষ। তবে ফরজের ন্যায় এটি আবশ্যক নয়।
হাদিসের দ্বিতীয় বিশুদ্ধ গ্রন্থ সহীহ মুসলিমের এক হাদীসে এসেছে, নবী করিম (সা.) অঘোষিতভাবে মাত্র তিন দিন জামাতের সাথে তারাবিহ নামাজ আদায় করছিলেন। তাঁর এই আমলের প্রতি সাহাবাগণ এত বেশি ঝুঁকে পড়েন, যেন মসজিদে ভীড় জমে গেছে। সাহাবাদের এমন আগ্রহ দেখে তিন আশঙ্কা করলেন, উম্মতের উপর এ আমল ফরজ হয়ে যেতে পারে। আর তাই উম্মতের কষ্টের কথা বিবেচনা করে জামাতে তারাবিহ আদায় বন্ধ করে দেন।
নারীদের মধ্যে সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবী, উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক রাতে রাসূলুল্লাহ (সা.) মসজিদে তারাবিহ নামাজ পড়লেন। সাহাবাগণও তাঁর সাথে উপস্থিত ছিলেন। এরপর দ্বিতীয় রাতে মুক্তাদির সংখ্যা বেড়ে গেল। পরবর্তীকালে তৃতীয় ও চতুর্থ রাতে আল্লাহর রাসূল (সা.) মসজিদে আসলেন না। পরে সকালে সবাইকে লক্ষ করে বললেন, আমি তোমাদের আগ্রহ ও উপস্থিতি লক্ষ করেছি, কিন্তু এই নামাজ তোমাদের উপর ফরজ হয়ে যাবে। সেই আশঙ্কায় আমি তোমাদের মাঝে আসিনি।
মানবতার মুক্তির দিশারী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করেছেন, আর আমি তোমাদের জন্য তারাবিহ নামাজকে সুন্নাত করেছি। যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানে দিনে রোজা পালন করবে ও রাতে তারাবিহ নামাজ আদায় করবে, সে গুনাহ থেকে এমন পবিত্র হবে, যেমন নবজাতক শিশু মাতৃগর্ভ থেকে নিষ্পাপ অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়।’ ( সুনানে নাসায়ী, পৃষ্ঠা: ২৩৯)।
পরবর্তীকালে নবী করিম (সা.) এর সাহাবাগণ স্বতন্ত্রভাবেই তারাবিহ নামাজ আদায় করে আসছিলেন। এরপর ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা.) এর সময়ে একরাতে মসজিদে গিয়ে তিনি দেখতে পেলেন, লোকেরা একাকী বিচ্ছিন্ন( অসুন্দর)অবস্থায় তারাবিহ নামাজ আদায় করছেন। এটি হযরত ওমর (রা.) কে কিছুটা চিন্তায় ফেলল। তিনি ভাবলেন, এখন আর এই আমল ফরজ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সুতরাং এক ইমামের পিছনে সবাই একত্র হয়ে জামাতে তারাবিহ নামাজ আদায় করলে সন্দর ও সুশৃঙ্খল দেখা যাবে এবং মুমিনের কাছে এর গুরুত্বও বাড়বে।
এখনে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই, হযরত ওমর(রা.) এর সময় থেকেই তারাবিহ নামাজ জামাতে পড়ার প্রচলন শুরু হয় এবং সেটি সংখ্যায় ছিল বিশ রাকাত।
আবার তারাবিহ নামাজ আট রাকাতের কথাও হাদিসে বলা হয়েছে। হযরত আবু সালমা ইবনে আবদুর রহমান বলেন, তিনি উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা.) কে জিজ্ঞাসা করলেন, রমজান মাসে নবী করিম (সা.) এর নামাজ কেমন হতো? জবাবে তিনি বললেন, রমজান মাসে এবং অন্য মাসে রাসূলুল্লাহ (সা.) এগারো রাকাতের বেশি পড়তেন না। এমনভাবে তিনি চার রাকাত নামাজ পড়তেন, এর দীর্ঘতা ও সৌন্দর্য সম্পর্কে কী বলব!
এরপর আবার চার রাকাত এমনভাবে পড়তেন, যেন এর দীর্ঘতা ও সৌন্দর্যের কথা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এরপর তিনি তিন রাকাত নামাজ পড়তেন। আয়েশা (রা.) নবী করিম (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি বিতর নামাজ পড়ার আগে ঘুমাচ্ছেন? নবী করিম (সা.) জবাবে বললেন, আয়েশা আমার চোখ নিদ্রিত হয় কিন্তু সজাগ থাকে। [সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৭৭৮/১২৫]