পুলিশ থেকে দুর্নীতিকে আমরা পায়ে দলে-মুছে ফেলতে চাই: আইজিপি


ডেস্ক নিউজ
পুলিশ থেকে দুর্নীতিকে আমরা পায়ে দলে-মুছে ফেলতে চাই: আইজিপি
  • Font increase
  • Font Decrease

পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, আমরা সবাই মিলে দুর্নীতির মতো সর্বশেষ কলঙ্কচিহ্ন পায়ের নিচে দলে মুছে ফেলতে চাই। দু্র্নীতি আর পুলিশ এক সঙ্গে চলতে ও উচ্চারিত হতে পারে না, এমন একটি সংগঠন হিসেবে আমরা পুলিশকে গড়ে তুলতে চাই। পুলিশ থেকে দুর্নীতিকে আমরা ইতিহাসের আস্থাকুঁড়ে নিক্ষেপ করতে চাই। 

ঢাকা মহানগর পুলিশের(ডিএমপি) ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।

শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে প্রতিষ্ঠা দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। 

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, বিশেষ অতিথি ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন। 

আইজিপি বলেন, পুলিশ থেকে দুর্নীতি ইতিহাসের আস্থাকুঁড়ে নিক্ষেপ করতে দরকার দুর্দমনীয় সাহস ও আত্মত্যাগের মনোভাব। আমি মনে করি পুলিশের প্রত্যেকটি কর্মীদের মধ্যে এসব রয়েছে। একই সঙ্গে আমাদের মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে। এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ। 

দেশের সঙ্গে ও দেশ সৃষ্টি ও স্বাধীনতার পেছনে পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, রয়েছে পুলিশের তাজা রক্ত। পুলিশে যারা কাজ করেন তারা এই দেশের মানুষ, সমাজের মানুষ। সেজন্য আমাদের হতে হবে দেশের মানুষের কাছেরই একজন। সেই আস্থা আর বিশ্বাসের জায়গাটা আমাদের লালন করতে হবে। 

আইজিপি বলেন, পুলিশের মধ্যে আভ্যন্তরীণ দুর্নীতি ঝেড়ে ফেলে সৎ ও স্বচ্ছ পুলিশ বাহিনী গড়ে তুলতে হবে। মানুষ চায় একটি সৎ, স্বচ্ছ পুলিশ বাহিনী। আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রীর সহযোগীতায় বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী যে অবস্থানে পৌছেছে, সৎ ও স্বচ্ছ পুলিশ বাহিনী গড়তে যে ধরণের নৈতিক, সৎ নিষ্ঠাবান পেশাদার ও পরিশ্রমী সদস্য দরকার তা আমাদের রয়েছে।

আইজিপি আরও বলেন, পুলিশকে মানবিক হতে হবে। আমরা হতে চাই মানুষের খুব কাছেরই একজন। দেশের মানুষ যখনই কোনো সমস্যায় পড়েছে দৌড়ে পুলিশের কাছে এসেছে খুব কাছের মনে করে। সেই আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গাটাকে আমাদের সর্বোচ্চ ত্যাগের মাধ্যমে লালন পালন করতে হবে। 

আমরা থানাকে করতে চাই সর্বোচ্চ আস্থার জায়গা। কনস্টেবল থেকে শুরু করে আইজি পর্যন্ত সকলের ভূমিকা ও মানসিকতা একই নিয়ে কাজ করতে হবে। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশের ক্রান্তিকালে দেশাত্মবোধ নিয়ে সামনে থেকে কাজ করেছে পুলিশ। এই করোনাকালেও ৮৫ সদস্য জীবন দিয়েছেন। ২১ হাজার সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি সদস্য ডিএমপি'র।

এই প্যান্ডেমিক পরিস্থিতিতেও সারাদেশে মানুষকে সেবার দেয়ার জন্য সর্বোচ্চ সেবার মানসিকতা নিয়ে পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করেছে, সেবার মানসিকতা নিয়ে কাজ করে ফ্রন্টলাইনার খ্যাতি কুড়িয়েছে।

দেশ মাতৃকার সেবা, জননিরাপত্তা রক্ষা করা পুলিশের প্রধান দায়িত্ব। এক্ষেত্রে রাজধানী তথা ঢাকা মহানগরের (ডিএমপি) পুরো বাহিনীর মুখায়বের ভুমিকা পালন করে। কারণ ঢাকা মহানগরের দায়িত্ব সুবিশাল। বঙ্গবন্ধুর স্বল্পকালীন শাসনামলেই স্বপ্ল সংখ্যক ঢাকা মহানগর পুলিশ প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এরই অংশ হিসেবে পুলিশ সদস্যদের মধ্য থেকে স্বপ্লসংখ্যক হলেও বিদেশে পাঠানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। যদিও তিনি এর সুফল দেখে যেতে পারেন নি। 

আমরা জানি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ডিএমপি অত্যন্ত দক্ষতা, বিচক্ষণতার সাথে নিত্যনতুন ক্রাইম প্রতিহত ও মোকাবেলা করে কাজ করে যাচ্ছে। সম্প্রতি নারী ও শিশুদের জন্য কুইক রেসপন্স টিম গঠন প্রশংসার দাবি রাখে। আর বিট পুলিশিং এর মাধ্যমে পুলিশিংকে জনমানুষের সামনে তুলে ধরার কাজও প্রশংসার।

তবে পুলিশের উচ্ছ্বসিত হওয়া বা প্রশংসার কুড়ানো বা আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নাই। নাগরিকের সাথে পুলিশের পার্টনারশিপ গড়ে তোলাই সামনে পুলিশের লক্ষ্য। পুরোনো ধ্যানধারণা বদলে, বঙ্গবন্ধুর সেই বক্তব্যের ন্যায় বলতে হয়, তোমরা বাংলাদেশের পুলিশ। সেজন্য দুর্দান্ত দেশপ্রেম, ভালবাসা, জনগণের প্রতি প্রতিশ্রুতি, সততা ও নিষ্ঠার সাথে শতভাগ সততার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে। যা পরবর্তী প্রজন্মকে উন্নত সমাজ উপহার দিতে হলে এই প্রজন্ম তথা তোমাদের সবাইকে ত্যাগস্বীকার করতে হবে। ২০৪১ সালকে লক্ষ্য রেখে প্রধানমন্ত্রীর যে ঘোষণা সেলক্ষ্যে পুলিশকেও এগিয়ে নিতে হলে সবাইকে মেধা দক্ষতার সন্নিবেশ ঘটিয়ে কাজ করতে হবে।

মহানগরবাসীকে অনুরোধ জানিয়ে পুলিশ প্রধান বলেন, ডিএমপি ৫০ থানা নিয়ে পুলিশের সর্বোচ্চ ইউনিট ডিএমপি। শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে নগরবাসীর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা নিরাপত্তা রক্ষার পাশাপাশি নগরবাসীর চাহিদা ও সেবা পুরণের চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করবেন ডিএমপি সদস্যবৃন্দ।

২০১২ থেকে ২০১৫ সালের বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাওপোড়াও কর্মসূচি, ২০১৩ সালের ৫ মে দুর্দান্তভাবে সফলতার সাথে রক্তপাতহীনভাবে শাপলা চত্বরের আন্দোলনকেও মোকাবেলা করেছিল ঢাকা মহানগর পুলিশ। হলি আর্টিসানসহ সব ধরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কাজ করেছে ডিএমপি। যার সুফল পেয়েছেন দেশবাসী। 

মহানগর পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাওয়ায় নিজেকে ধন্য ও গর্বিত মনে করেন উল্লেখ করে পুলিশ প্রধান বলেন, পুলিশের উপর মানুষের প্রত্যাশা ভিন্ন। পুলিশ বাহিনীর উপর মানুষের আস্থা ভালবাসা রয়েছে। সেটার প্রতিদান দিয়ে যেতে হবে। আমাদের যে ঐতিহ্য তা ধারণ করতে হবে।