বিদেশফেরত অভিবাসীদের কর্মসংস্থান বেড়েছে, বেড়েছ আর্থিক সংকট
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন বলছে, সরকার দেশব্যাপী লকডাউন প্রত্যাহারের পরের মাসগুলিতে ফিরে আসা আভিবাসীরা চাকরি খুঁজে পেতে সক্ষম হয়েছিলেন, স্বাস্থ্য এবং মনো-সামাজিক সমস্যা কমেছিল এবং উন্নত হয়েছিল পরিবারিক পর্যায়ে খাদ্য সুরক্ষা। তবে অভিাবসীদের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ বেড়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, অভিবসাীদের ঋণের বোঝা বৃদ্ধি পেয়েছে, ঋণ পরিশোধে তারা টাকা ধার করেছেন এবং স্বাস্থ্য খাতে তাদের ব্যয়ের পরিমান কমাতে হয়েছে।
আইওএম-এর “র্যাপিড অ্যাসেসমেন্ট রাউন্ড-২: নিডস অ্যান্ড ভালনারেবিলিটিস অব ইন্টার্নাল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল রিটার্ন মাইগ্র্যান্টস ইন বাংলাদেশ” শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশের ১২টি উচ্চ অভিবাসন প্রবণ জেলায় দ্বিতীয় দফায় এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়। ২০২০ সালের আগস্ট এবং সেপ্টম্বর মাসে এক হাজার ৫৮৪ জন অভিবাসী এতে অংশ নেন যার মধ্যে ৮৭৫ জন বিদেশফেরত ও ৭০৯ জন অভ্যন্তরীণ অভিবাসী। প্রথম দফায় ২০২০ সালের জুন মাসে দুই হাজার ৭৬৫ জনের উপর গবেষণাটি করা হয়েছিল যেখানে দ্বিতীয় ধাপের সবাই ছিলেন। গবেষণার ফলাফল অভিবাসন নিয়ে কাজ করা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অভিবাসীদের উপর কোভিড-১৯-এর প্রভাব, পুনরায় ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়গুলো বুঝতে সহযোাগিতা করবে।
গবেষণার ফলাফল আরো দেখানো হয়েছে, প্রথম ধাপের চেয়ে দ্বিতীয় ধাপে বিদেশফেরত অভিবাসীদের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ২০ ভাগ বেড়েছে । প্রথম ধাপের গবেষণায় এই হার ছিল ৫০ শতাংশ, দ্বিতীয় ধাপে যা দাড়ায় প্রায় ৭১ শতাংশে। বিদেশফেরত অভিবাসীদের চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে চাকরি খুঁজে পেতে সমস্যা ৪৭ শতাংশ, অর্থনেতিক সমস্যা ২৯ শতাংশ এবং লোন পরিশোধের বোঝা ২১ শতাংশ।
দ্বিতীয় ধাপের জারিপে দেখা যায়, উত্তরদাতের বেকরত্বের হার কমে দাড়িয়েছে ৬৪ শতাংশ, যা আগের ধাপে ছিল ৭৪ শতাংশ। মূলত লকডাউন তুলে দেয়া, সাধারণ কর্মকান্ড উন্মুক্ত হওয়া এবং অন্যান্য বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ায় বেকারত্বের হার কমেছে। তারপরও গবেষণায় অংশ নেয়া উত্তরদাতাদের মধ্যে বেকারত্ব বেশি ছিল।
প্রথম ধাপের প্রতিবেদনে যেখানে বিদেশফরত অভিবাসীদের ৭০ শতাংশ তিন বেলা খেতে পারতেন, দ্বিতীয় ধাপে তা ১৮ শতাংশ বেড়ে ৮৮ শতাংশে দাড়িয়েছে। আর অভ্যন্তরীণ অভিবাসীদের এই হার ৪৩ শতাংশ বেড়ে ৯২ শতাংশে দাড়িয়েছে। প্রতিবেদন বলছে, কোভিড-১৯ এর কারণে সৃষ্ট সমস্যা মোকাবেলায় সরকারী সহায্যের জন্য আবেদন করতে চেয়েছেন ৬০ শতাংশ বিদেশফেরত অভিবাসী। আর অভ্যন্তরীণ অভিবাসীদের এই হার ৩৯ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক উভয় অভিবাসীরা বলেছেন, টাকা ধার করা, খরচ কমানো, এবং অর্থ সহয়তার উপর তারা নির্ভশীল ছিলেন অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধান ও ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে। অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবেলায় টাকা ধার করা বা অতিরিক্ত ঋণ নিয়েছেন এমন অভিবাসী ৫০ শতাংশ (আন্তর্জাতিক অভিবাসী) এবং ৭১ শতাংশ (অভ্যন্তরীণ অভিবাসী)।
বিদেশফেরত অর্ধেকেরও বেশি অভিবাসীরা বলেছেন, তাদের প্রত্যেকের এক লাখ টাকার উপরে ঋণ আছে এবং ২৮ শতাংশ বলেছেন তাদের ঋণ আছে দুই লাখ টাকার উপরে। ৫৮ শতাংশ আন্তর্জাতিক ও ৫৩ শতাংশ অভ্যন্তরীণ অভিবাসী বলেছেন, তাদের ঋণের পরিমান ২০২০ সালের জুনের চেয়ে সেপ্টেম্বর মাসে বেড়েছে।
আইওএম এর বাংলাদেশ মিশন প্রধান গিওরগি গিগাওরি বলেন, ‘আমরা একটি অভূতপূর্ব সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। অভিবাসী ও তাদের পরিবার কিভাবে বেকারত্ব ও লকডাউন মোকাবেলা করেছেন এবং তাদের অভিবাসন ইচ্ছা কি তা বুঝতে নিবিড় কার্যক্রম, গবেষণা, ও তথ্য সংগ্রহ করা দরকার যা এই এই পরিস্থিতি থেকে উন্নত ও দ্রুত পুনরুদ্ধারে সহযোগিতা করবে। এই তথ্য অভিবাসী কর্মীদের সুরক্ষা দিতে ভবিষ্যতে আমাদের সহয়তা প্রদান প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করবে এবং করোনাভাইরাসেরমত ভবিষ্যত কোন প্রাদুর্ভাব থেকে অভিাবসীদের সুরক্ষা দিতে সহযোগিতা করবে। আমাদের স্রাম্প্রতিক প্রতিবেদনটি বিশ্বব্যাপী ইঙ্গিতগুলিকে সমর্থন করে যে, কোভিড-১৯ মহামারিটি বৈশ্বিক চলাচলের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা দেশে ও বিদেশে অভিবাসীদের মূল্য ও অবদানের স্বীকৃতি জানাই। আরো ভাল অভিবাসন ব্যবস্থাপনা ও ফিরে আসা অভিবাসীদের টেকসই পুনঃরেকত্রীকরণে সরকারকে সহযোগিতা করতে আইওএম প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দেশে এবং দেশের বাইরের অভিবাসীদের চাহিদা মেটাতে আমাদের একসাথে কাজ করা প্রয়োজন।
প্রতিবেদনটি বলছে, ৮৭ শতাংশ বিদেশফেরত অভিবাসী আবার বিদেশে ফিরে যেতে চান। তাদের গন্তব্যগুলির মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় দেশগুলি হলো- সৌদি আরব, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, ইতালি এবং মালয়েশিয়া। অভিবাসীরা বলেছেন, পুনরায় অভিবাসনের সময়সীমা নিয়ে নিশ্চয়তা কমছে। এর কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, ভিসা নিয়ে অনিশ্চয়তা, ভ্যাকসিন প্রাপ্ততা, আন্তর্জাতিক ভ্রমনে নিষেধাজ্ঞা, এবং ভ্রমন খরচের কথা। অন্যদিকে অভ্যন্তরীন অভিবাসীদের ৭৫ শতাংশ অভিবাসন করতে চেয়েছেন যা প্রথম ধাপের গবেষণায় ছিল ৮৫ শতাংশ। দেশের ভেতরে অভিবাসনের ক্ষেত্রে ৪৭ শতাংশ বলেছেন তারা ঢাকায় যেতে চান। এই হার চট্টগ্রামের জন্য ১৫ শতাংশ এবং বরিশালে ১৩ শতাংশ।
“র্যাপিড অ্যাসেসমেন্ট রাউন্ড-২: নিডস অ্যান্ড ভালনারেবিলিটিস অব ইন্টার্নাল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল রিটার্ন মাইগ্র্যান্টস ইন বাংলাদেশ” শীর্ষক এই গবেষণাটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে “রিজিওনাল এভিডেন্স ফর মাইগ্রেশন এনালাইসিস অ্যান্ড পলিসি (রিমেপ)”- প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত হয়েছে।
প্রকৌশলনিউজ/এসআই