অগ্নিকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ১১০তম জন্মদিন আজ


প্রকৌশল প্রতিবেদক :
অগ্নিকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ১১০তম জন্মদিন আজ
  • Font increase
  • Font Decrease

আজ ৫ মে, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বাঙালি মুক্তিযোদ্ধা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ১১০তম জন্মদিন। ১৯১১ সালের এদিন চট্টগ্রামের পটিয়ায় ধলঘাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এই অগ্নিকন্যা। তার বাবার নাম জগবন্ধু ওয়াদ্দেদার ও মা প্রতিভাদেবী। মাস্টার দা সূর্যসেনের নেতৃত্বে ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন এ বিপ্লবী নেত্রী।

প্রীতিলতা ১৯২৭ সালে ডা. খাস্তগীর উচ্চ ইংরেজি বালিকা বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করে ঢাকার ইডেন কলেজে ভর্তি হন। এইচএসসি পরীক্ষায় মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে প্রীতিলতা কলকাতার বেথুন কলেজে ইংরেজী সাহিত্য নিয়ে বি.এ. তে ভর্তি হন। 

তখন থেকে মাস্টারদার নির্দেশে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড শুরু করেন তিনি। গড়ে তুললেন এক বিপ্লবী চক্র যেখানে আরও অনেক মেয়ে সদস্য যোগ দিলেন। 

মেয়েদের নিয়ে অর্থ সংগ্রহ করে প্রীতিলতা চট্টগ্রামে পাঠাতেন। পাশাপাশি মাস্টারদার নির্দেশে কলকাতার গোপন কারখানায় তৈরিকৃত বোমার খোল সংগ্রহ করতেন তিনি। ১৯২৯ সালে পূজার ছুটিতে চট্টগ্রামে গিয়ে বোমার খোলগুলো পৌঁছে দেন বিপ্লবীদের হাতে। এরপর প্রীতিলতা প্রকাশ্য বিপ্লবী কাজে যুক্ত হন। কলকাতার বিপ্লবী চক্রের সকল প্রকার প্রশিক্ষণ তিনি দিতেন।

১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল মহানায়ক সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম দখল হয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রামে ইংরেজ শাসন অচল হয়ে যায়। টেলিগ্রাফ-টেলিফোন বিকল, সরকারি অস্ত্রাগার লুণ্ঠন, রিজার্ভ পুলিশ ছত্রভঙ্গ ও রেললাইন উপড়ে ফেলা হয়। সেসময়য় প্রীতিলতা কলকাতায় ছিলেন। বিএ পরীক্ষা শেষে মাস্টারদার নির্দেশে স্থায়ীভাবে চট্টগ্রামে চলে আসেন তিনি।

১৯৩২ সালে চট্টগ্রাম অপর্ণাচরণ ইংরেজি বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন তিনি। ওই একই বছরের মে মাসে প্রীতিলতার জন্মস্থান ধলঘাটে সাবিত্রী দেবীর বাড়িতে মাস্টারদা তাঁর সহযোদ্ধাদের সঙ্গে গোপনে বৈঠক করেন। এই বৈঠক চলার সময় ব্রিটিশ সৈন্যদের সাথে বিপ্লবীদের বন্দুক যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধে প্রাণ দেন নির্মল সেন ও অপূর্ব সেন। সূর্যসেন প্রীতিলতাকে নিয়ে বাড়ির পাশে ডোবার পানিতে ও গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকেন। সাবিত্রী দেবীর বাড়িটি পুলিশ পুড়িয়ে দেয়।

এ ঘটনার পর ব্রিটিশ সরকার প্রীতিলতাকে সন্দেহ করতে শুরু করলে মাস্টারদার নির্দেশে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। অন্য একটি বিপ্লবী গ্রুপ ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণে ব্যর্থ হলে প্রীতিলতার ওপর দায়িত্ব দেয়া হয় ক্লাবটি আক্রমণের। ১৯৩২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ কাট্টলী গ্রামে এক গোপন বৈঠকে মাস্টারদার নির্দেশে প্রীতিলতা ও কল্পনা দত্ত ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের পরিকল্পনা করার জন্য একটি গ্রামের উদ্দেশ্যে পুরুষের বেশে রওনা দেন। কিন্তু পথে পাহাড়তলীতে কল্পনা দত্ত ধরা পড়েন। প্রীতিলতা নিরাপদে নির্দিষ্ট গ্রামে এসে পৌঁছেন। এখানেই প্রীতিলতার নেতৃত্বে ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়। আক্রমণের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য কাট্টলীর সাগরতীরে প্রীতিলতা ও তার সাথীদের অস্ত্র শিক্ষা শুরু হয়।

প্রশিক্ষণ শেষে বীরকন্যা প্রীতিলতার নেতৃত্বে বিপ্লবীরা ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করে সফল হন। প্রীতিলতা সেদিন পুরুষের বেশে আক্রমণে যোগ দেন। জয়ী হয়ে ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হন প্রীতিলতা। এ অবস্থায় ধরা পড়ার আগেই সঙ্গে থাকা সায়ানাইড খেয়ে আত্মাহুতি দেন তিনি। মাত্র ২১ বছর বয়সে আত্মদানের ইতিহাস রচনা করে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন প্রীতিলতা।

মৃত্যুর আগে তিনি মায়ের কাছে চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘মাগো, অমন করে কেঁদো না! আমি যে সত্যের জন্য, স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিতে এসেছি, তুমি কি তাতে আনন্দ পাও না? কী করব মা? দেশ যে পরাধীন! দেশবাসী বিদেশির অত্যাচারে জর্জরিত! দেশমাতৃকা যে শৃঙ্খলভাবে অবনতা, লাঞ্ছিতা, অবমানিতা! তুমি কি সবই নীরবে সহ্য করবে মা? একটি সন্তানকেও কি তুমি মুক্তির জন্য উৎসর্গ করতে পারবে না? তুমি কি কেবলই কাঁদবে?’ শুধু তার মা নয়, আজও অসাধারণ সাহসী সেই নারী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারকে অশ্রুসজল চোখে পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন দেশপ্রেমী মানুষ।