মিন্নির পথেই হাটছেন নুসরাত!
বরগুনা রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের কথা আমাদের মনে আছে। ভুলে যাইনি রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির নাম। ২০১৯ সালের ২৬ জুন যে নারকীয় ঘটনার জন্ম দিয়েছিল মিন্নি তা এখনও সবার নজরে ভাসে। অচেতন রক্তাক্ত রিফাতকে হাসপাতালে নিয়ে মিডিয়া কভারেজের কারণে দেশব্যাপী প্রশংসিত হন মিন্নি। কিন্ত এর পিছনে যে কত বড় চক্রান্ত লুকিয়ে ছিল সেটা জানতো কজনে?
রিফাত শরীফ হত্যার ঘটনায় নয়ন বন্ড ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে নিজে বাদী হয়ে মামলাও করেন মিন্নি। তদন্তে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর বের হয়ে আসে সহজ সরল সুন্দরি মিন্নির বিভৎস চেহারা। অনুসন্ধানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানতে পারে, রিফাত শরীফ হত্যার ঘটনা এই মিন্নিরই মাস্টার প্ল্যানের অংশ। স্বামী রিফাত শরীফকে শায়েস্তা করতে প্রেমিক নয়ন বন্ডকে দিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটায় মিন্নি। অবশেষে মামলার বাদী হয়ে যায় আসামি। পরবর্তিতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মিন্নির ফাঁসির আদেশ দেন মহামান্য আদালত। মিন্নি বর্তমানে কারান্তরীণ আছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে গুলশানে মোসারাত জাহান মুনিয়ার আত্মহত্যার ঘটনার পর আবার মিন্নির ঘটনাটি সামনে এসেছে। এই আত্মহত্যার ঘটনার পর থেকে মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান যা কিছু করছেন সবকিছুই আবার মিন্নিকে মনে করিয়ে দিচ্ছে। তবে নুসরাতও কি বাদী থেকে আসামিতে পরিণত হতে যাচ্ছেন?
একাধিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থা মুনিয়ার আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলার ব্যাপারে অনুসন্ধান করছেন। প্রতিনিয়ত এই মামলায় নুসরাতের ভূমিকা নিয়ে নানারকম রোমাঞ্চকর তথ্য তাদের কাছে আসছে। এইসব তথ্যের ভিত্তিতে মুনিয়ার আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলায় শেষ পর্যন্ত নুসরাতের আসামি হওয়ার পথ উন্মুক্ত হচ্ছে।
আপাত দৃষ্টিতে, মুনিয়া যে ফ্ল্যাটে থাকতেন সেটি মুনিয়ার নয়, বসুন্ধরা এমডি সায়েম সোবহানেরও নয়। ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিলেন নুসরাত এবং তার স্বামী। ফ্ল্যাট মালিককে দেয়া হয়েছিল তাদের দুজনের ভোটার আইডি কার্ডের কপি। প্রথম বাড়ির যে এডভান্সের টাকা সেটিও নুসরাত দিয়েছিলেন। নুসরাত বাড়ি ভাড়া নিয়েও মিথ্যাচার করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে তিনি এবং তার স্বামী তার ছোটবোন মুনিয়াকে নিয়ে এখানে থাকবেন। কিন্তু বাস্তবে তিনি থাকেন নি মুনিয়াকে নিয়ে। তাহলে তিনি কোন স্বার্থের কারণে ষোড়শী বোনকে একা থাকার জন্য একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করে দিলেন? আর কলেজ শিক্ষার্থী বোনের প্রতি মাসে এক লাখ টাকা ফ্ল্যাট ভাড়া পরিশোধ করার উৎসই বা কি? এখানে নুসরাতের স্বার্থের বিষয়টি স্পষ্ট।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুসন্ধানে জানা যাচ্ছে, মুনিয়ার আত্মহত্যার ঘটনাযর আগে মুনিয়ার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা চেয়েছিলেন নুসরাত। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন সময়ে নুসরাত মুনিয়াকে টাকার জন্য চাপ দিতেন। টাকার জন্য বিভিন্নভাবে মুনিয়াকে ব্যবহার করতেন। আর এই টাকা জোগাড় করতে করতেই মুনিয়ার এই পরিণতি হয়েছে। কাজেই বোনের জন্য টাকা জোগাডড়ের চাপ মুনিয়াকে বিপর্যস্ত করেছিলো। এটিও এই মামলার অন্যতম একটি উপজীব্য হতে পারে।
মুনিয়ার মৃত্যুর পর ঢাকায় এসে নুসরাতের একের পর এক কর্মকাণ্ড এবং কথাবার্তা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে ‘অসংলগ্ন’ মনে হচ্ছে। একটি তথ্য গোপন করতে আরেকটি তথ্য প্রকাশের চেষ্টা এবং বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম তথ্য দিচ্ছেন নুসরাত। এ থেকে মনে করা হচ্ছে যে, নুসরাত কোনো তথ্য গোপন করতে চাইছেন।
পুরো বিষয়টিতে নুসরাত বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরকে এককভাবে টার্গেট করছেন। কিন্তু তদন্তে ইতোমধ্যেই সামনে এসেছে যে, মুনিয়ার একাধিক জনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। সেগুলোর যথেষ্ট প্রমাণাদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও ভাইরাল হয়েছে।
এসবের কারণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে যে, নুসরাত কি তাহলে মিন্নির পথেই হাটছেন? মিন্নি যেমন মাস্টারমাইন্ড হয়েও মামলার বাদী হয়েছিলেন, নুসরাতও সে রকম আত্মহত্যার প্ররোচনাকারী হয়েও নিজে বাদী হয়েছেন? দেশের জনগণ তাহলে কি আর এক মিন্নিকে দেখতে চলেছেন?
প্রকৌশল নিউজ/সু