গ্রামের দিকে ছুটছে মানুষ, রুখবে তাদের কে?
সরকারের সব নির্দেশনা অমান্য করে মানুষ ছুটছে ঢাকা ছেড়ে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের আক্রান্ত ও প্রাণহানি এড়াতে ঈদ সামনে রেখে মানুষকে ঢাকা ছাড়তে নিরুৎসাহিত করা হলেও গতকাল ফেরি ঘাটে দেখা গেছে ঘরে ফেরা মানুষের ঢল। মানুষের ঢল ঠেকাতে ফেরি ঘাটে বিজিবি পর্যন্ত মোতায়েন করতে হয়েছে। দূরপাল্লার বাস বন্ধ, ফেরি বন্ধ, কিন্তু তারপরও নাড়ির টানে ঘরে ফেরা মানুষকে ঠেকানো যাচ্ছে না, কোনো বাধাই টিকছে না মানুষের কাছে।
অন্যান্য বছর ঈদের এই সময়টাতে গাবতলী থাকতো লোকে লোকারণ্য। গাবতলীতে এবার সে চিত্র নেই, কারণ বাস বন্ধ। তবে আমিন বাজার ব্রিজ পার হলেই দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। হাজার হাজার মানুষ গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন। সেখানে সহজেই মিলছে কার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেল।
রফিক নামের আরেকজন যাবেন পাবনা। বোনকে নিয়ে রওনা হয়েছেন অনিশ্চিত যাত্রায়। তিনি বললেন, বাড়িতে যাচ্ছি অসুস্থ মায়ের জন্য। মা অসুস্থ না থাকলে এই পরিস্থিতিতে বাড়িতে যেতাম না। মূলত মাকে দেখতেই বাড়ি যাচ্ছি।
সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বাস, কার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে চেপেই যাত্রীরা যাচ্ছেন আরিচা-পাটুরিয়া ঘাটের দিকে। প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে জনপ্রতি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। অন্যদিকে বাসে জনপ্রতি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা। তবে প্রশাসনের তৎপরতায় যাত্রীদের গাবতলী থেকে হেঁটে আমিনবাজার গিয়ে ঘাটের গাড়ি ধরতে হচ্ছে।
এদিকে ফেরিতে মানুষের ঢল থামাতে বিজিবি মোতায়েন করা হলেও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়ায় বাড়িফেরা মানুষদের ঢল লক্ষ্য করা গেছে। বিজিবির বাধা সত্ত্বেও জোর করে ফেরিতে উঠে যাত্রীরা। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে শিমুলিয়া ঘাট থেকে রোববার সকাল ১০টার দিকে প্রায় দুই হাজার যাত্রী নিয়ে ছেড়ে গেছে ফেরি শাহপরাণ। এর আগে ১১টি অ্যাম্বুলেন্স ও কিছু যাত্রী ছেড়ে যায় ফেরি ফরিদপুর।
পাটুরিয়া- দৌলতদিয়া এবং শিমুলিয়া ফেরিঘাটে মোতায়েন করা হয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্য। শনিবার রাত থেকেই বিজিবি সদস্যরা ফেরিঘাট এলাকায় দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন।
এদিকে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভোর থেকে নদী পারাপারের জন্য ঘাট এলাকায় এসে জড়ো হয়েছেন হাজার হাজার যাত্রী। ৩ নম্বর শিমুলিয়া ফেরিঘাটে উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।
সকালের দিকে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় ঘরমুখো যাত্রীদের তেমন একটা চাপ দেখা না গেলেও দুপুরের দিকে কিছুটা চাপ বেড়েছে।
কাদের নামে একজন বলেন, গাড়ি চলাচল না করায় বিপদে পড়েছি। সরকারের লকডাউনে আমরা সাধারণ জনগণ বিপদে পড়েছি। ফার্মগেট থেকে বাসে গাবতলী এসেছি। গাবতলী থেকে হেঁটে আমিনবাজার এসেছি। এখান থেকে লেগুনা করে যাব।
রোজিনা নামে আরেকজন যাবেন টাঙ্গাইলে। তিনি বলেন, ঈদ করতে বাড়িতে যাচ্ছি। ঈদ শেষে আবার ঢাকায় আসব। কিভাবে যাবেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রাইভেট কারে যাবো। ভাড়া একটু বেশি লাগবে, তবে নিশ্চিন্তে বাড়িতে যেতে পারব, এটাই স্বস্তির।
করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় ৫ এপ্রিল থেকে দেশে চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও তা কার্যকর হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। সে পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ এপ্রিল থেকে চলাচল নিয়ন্ত্রণে নতুন করে বিধি-নিষেধ আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এরপর কয়েক দফায় ওই বিধি-নিষেধের মেয়াদ বাড়িয়ে সর্বশেষ ১৬ মে পর্যন্ত করা হয়েছে।
এরমধ্যে ঈদ সামনে রেখে মানুষের ঘরে ফেরা ঠেকাতে ঈদের ছুটিতে কর্মস্থল ত্যাগ না করার নির্দেশও দিয়েছে সরকার। করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সরকারের পক্ষ থেকে এমন নির্দেশনা দেওয়া হলেও ফেসবুকে এ নির্দেশনার সমালোচনা করছেন অনেকে। দূরপাল্লার বাস চালুর দাবি জানিয়েছে পরিবহন সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোও। দাবি বাস্তবায়ন না হলে ঈদের নামাজ শেষে সারাদেশের মালিক ও শ্রমিকরা নিজ নিজ এলাকায় বাস ও ট্রাক টার্মিনালে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে। এছাড়া ঈদের পরে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।