অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র রচনার জন্যই বাংলাদেশের অভ্যুদয়
অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র রচনার জন্যই বাংলাদেশের অভ্যুদয়, বলেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
বুধবার সকালে রাজধানীর শাহবাগে বৌদ্ধ ধর্মের পবিত্রতম উৎসব শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে বাংলাদেশ বৌদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিষদ আয়োজিত জাতীয় সম্মিলিত প্রতীকী শান্তি শোভাযাত্রা ও সম্প্রীতি উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন।
উপকূলে ঘনায়মান ঘুর্ণিঝড় 'ইয়াস' যেনো দুর্বল হয়ে যায় এবং বিশ্ব যেনো অচিরেই করোনামুক্ত হয় সেজন্য সকলকে এই পবিত্র দিনে প্রার্থনার আহবান জানান মন্ত্রী।
বৌদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিষদের সভাপতি ড: উত্তম কুমার বড়ুয়া সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক প্রসেনজিৎ বড়ুয়ার সঞ্চালনায় আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি এবং মহাথেরো আশিনো দীনরক্ষিত আমন্ত্রিত অতিথির বক্তব্য দেন।
পবিত্র বুদ্ধ পূর্ণিমায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সকলের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, 'সকল ধর্মের মানুষের মিলিত রক্তস্রোতের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। আর স্বাধীনতার অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তেই পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি এবং সেকারণেই আমাদের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা বর্ণিত রয়েছে।'
ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে অনেক অপপ্রচার চালানো হয়, কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে উল্লেখ করে ড. হাছান উদাহরণ দিয়ে বলেন, যে ফিলিস্তিনকে সব মুসলিম দেশ সমর্থন দেয়, সেই ফিলিস্তিনেও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি, ইরাকেও তাই।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলের অন্যতম নীতি ব্যক্ত করে হাছান মাহমুদ বলেন, 'আমাদের দল মনে করে, সবার আগে আমাদের পরিচয় আমরা বাঙালি, তারপর আমরা হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান বা অন্যান্য ধর্মের অনুসারী। কিন্তু বাংলাদেশে এমন একটি পক্ষ আছে যারা ধর্মের পরিচয়কেই আগে রাখে। আর তারপর তারা বাঙালি না বাংলাদেশি এ নিয়ে সার্বক্ষণিক দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগে। সেখানেই তাদের সাথে আমাদের পার্থক্য।'
মন্ত্রী এসময় বলেন, দেশের সকল ধর্মের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যেমন যুগান্তকারী নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন, একইসাথে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা ও সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়ানোর অপচেষ্টাও কঠোর হস্তে দমনে সরকার সবসময়ই বদ্ধপরিকর।
মানুষের মাঝে শান্তি-সম্প্রীতি-সাম্য প্রতিষ্ঠাই সকল ধর্মের মূলমন্ত্র আর বৌদ্ধ ধর্ম আরো একধাপ এগিয়ে সকল জীবের কল্যাণে ব্রতী, বলেন ড. হাছান। আমরা যদি সবাই ধর্মের মর্মবাণী বুকে ধারণ করে অনুশীলন করি, তাহলে পৃথিবীতে এই হানাহানি-বিভেদ থাকতো না উল্লেখ করে বুদ্ধ পূর্ণিমার এইদিনে সকলকে নিজ নিজ ধর্মের মূলমর্ম বুকে ধারণ করে শান্তি-সম্প্রীতি-সাম্য প্রতিষ্ঠার ব্রত নেবার আহবান জানান হাছান মাহমুদ।
ধর্মীয় উৎসবগুলো আমাদের সংস্কৃতি ও কৃষ্টির অংশ হয়ে উঠেছে বর্ণনা করে ড. হাছান বলেন, বুদ্ধ পূর্ণিমা, দুর্গাপূজা, ঈদ, বড়দিনসহ সকল ধর্মীয় উৎসবই এদেশে সকল ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণে সার্বজনীন রূপলাভ করে। এই সার্বজনীন সম্প্রীতির চেতনা, যা জননেত্রী শেখ হাসিনা চিরজাগরূক রাখতে চান, তার ওপর কালিমা লেপন বা তাকে নস্যাৎ করার সকল অপচেষ্টা রুখে দিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহবান জানান তিনি।
সভাশেষে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ অতিথিদের নিয়ে পরিষদের পক্ষে সভায় আগতদের মাঝে উপহারসামগ্রী তুলে দেন ও বুদ্ধ পূর্ণিমা শোভাযাত্রায় অংশ নেন।
প্রকৌশল নিউজ/এমআরএস