প্রকৌশলীদের তত্ত্বাবধানে আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়নের সুপারিশ আইইবির


প্রকৌশল প্রতিবেদক:
প্রকৌশলীদের তত্ত্বাবধানে আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়নের সুপারিশ আইইবির
  • Font increase
  • Font Decrease

শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, মুজিববর্ষ উপলক্ষে দেশের গৃহহীনদের জন্য নির্মিত ঘর নির্মাণে অব্যবস্থাপনা এড়িয়ে সুষ্ঠভাবে কাজ সম্পূর্ণ করতে দেশের প্রকৌশলীদের তত্ত্বাবধায়নে তা বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে দেশে প্রকৌশলীদের জাতীয় প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)। এছাড়া আইইবি সুনির্দিষ্ট পাঁচটি প্রস্তাবনা পেশ করেছে।

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে আইইবি'র সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. শাহাদাৎ হোসেন (শীবলু) এই দাবি করেন।

বিবৃতিতে প্রকৌশলী শাহাদাৎ হোসেন (শীবলু) বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। যা সকলের জন্য একটি গৌরবের বিষয়। বাংলাদেশের প্রকৌশলী সমাজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের সৈনিক হিসেবে যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি সরবরাহ, আইসিটি, টেলি-কমিউনিকেশন, পরিবহন ব্যবস্থা, বন্যা ব্যবস্থাপনা, জনস্বাস্থ্য সহ সকল সেক্টরে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এমনকি কোভিড-১৯ এর মহামারির মধ্যেও প্রকৌশলীরা রাত-দিন পরিশ্রম করে সকল উন্নয়ন কাজ ও জরুরী সেবাসমূহ অব্যাহত রেখেছে। 

বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন যুগোপযোগী কর্মকান্ডের মাধ্যমে বিশ্বের অন্যতম একজন সফল রাষ্ট্রনায়কের স্বীকৃতি পেয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করেছেন। পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের মত স্থাপনা বাস্তবায়ন- বিশ্বে বাংলাদেশকে মর্যাদার আসনে স্থান দিয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, মুজিববর্ষ উপলক্ষে দেশের গৃহহীনদের বিনামূল্যে ঘর প্রদান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আরেকটি সুদূরপ্রসারী যুগান্তকারী মানবিক প্রকল্প। 

আইইবি'র সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সচিত্র তথ্য হতে জানা যায়, ঘর নির্মাণের কিছু দিনের মধ্যেই অনেকগুলো ঘরে ফাটল এবং অনেকগুলো ঘর ইতোমধ্যে বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। আইইবি মনে করে এই ঘটনায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে।

এমতাবস্তায় আইইবি মনে করে আশ্রয়ন প্রকল্পের কাজ প্রকৌশলীদের তত্ত্বাবধায়নে করা হলে দূর্নীতি রোধসহ প্রকল্পের সুষ্ঠু বন্টন এবং সরকারের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ থাকবে। তাই আইইবির পক্ষ থেকে পাঁচটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব করা হচ্ছে।

এগুলো হলোঃ 
১। বিল্ডিং নির্মাণ একটি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস এবং প্রকল্পটি ইঞ্জিনিয়ারিং প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টের আওতাধীন থাকা বাঞ্ছনীয় বিধায় দেশের যেকোন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করাটাই যুক্তিযুক্ত ছিল।

২। অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারিং প্রজেক্টের ন্যায় টেকনিক্যাল সুপারভিশন, সয়েল টেস্ট ও ম্যাটেরিয়াল টেস্টের মত বিভিন্ন কোয়ালিটি কন্ট্রোল টেস্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং পয়েন্ট অব ভিউ থেকে মনিটরিং ও সিদ্ধান্ত প্রদানের অভাব এই প্রকল্পে পরিলক্ষিত হয়েছে।

৩। উপজেলা পর্যায়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)-এর উপজেলা প্রকৌশলী ও তার অধীনস্থ টেকনিক্যাল ম্যান পাওয়ার দিয়ে কাজ চলাকালীন সময়ে নিবিড় তদারকীর মাধ্যমে ড্রয়িং-ডিজাইন অনুযায়ী কোয়ালিটি ঠিক রেখে কাজটি বাস্তবায়ন করা যেত।

৪। জেলা পর্যায়ে গণপূর্ত, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল, শিক্ষা প্রকৌশল, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, সড়ক ও জনপথ, পানি উন্নয়ন বোর্ড সহ বিভিন্ন অধিদপ্তরের জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীগণের সমন্বয়ে একটি প্রকৌশল টিমের দ্বারা উক্ত কাজের মনিটরিং ও কোয়ালিটি কন্ট্রোলে সিদ্ধান্ত প্রদান করে কাজের মান নিয়ন্ত্রণ করা যেত। উপজেলা পর্যায়ে যেকোন ধরণের কারিগরী ত্রুটি ও সমস্যা জেলা পর্যায়ের টিম তাৎক্ষণিক কারিগরী সিদ্ধান্ত দিয়ে সমাধান করতে পারতো।

৫। সর্বোপরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে গণপূর্ত, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল, শিক্ষা প্রকৌশল, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, সড়ক ও জনপথ, পানি উন্নয়ন বোর্ড সহ বিভিন্ন অধিদপ্তরের সিনিয়র ও অভিজ্ঞ প্রকৌশলীদের দ্বারা একটি ইঞ্জিনিয়ারি সেল গঠন করে একজন অভিজ্ঞ ও দক্ষ প্রকৌশলী প্রকল্প পরিচালকের নেতৃত্বে উক্ত ইঞ্জিনিয়ারিং সেল-এর মাধ্যমে প্রকল্পটির ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট, প্রকিউরমেন্ট ম্যানেজমেন্ট এবং প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট পরিচালনা করলেই ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো এড়ানো যেত।

উপরোক্ত পদক্ষেপগুলো আমলে নিলে দৃশ্যমান দূর্ঘটনাগুলো এড়ানো যেতো এবং ভবিষ্যতে এধরণের দূর্ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য যেকোন ধরণের ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকল্প, প্রকৌশল অধিদপ্তরগুলোর মাধ্যমে বাস্তবায়ন হবে বলে আইইবি মনে করে।