প্রকল্প বাস্তবায়নে কার্যকর জবাবদিহিতার তাগিদ টিআইবি’র
প্রকল্প বাস্তবায়নের আগেই অস্থায়ী ল্যাবের নামে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় যন্ত্রপাতি ক্রয়ের চেষ্টা দুর্নীতি সহায়ক বলে মন্তব্য করে ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এজন্য দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতেও তাগিদ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বঙ্গমাতা ন্যাশনাল সেলুলার অ্যান্ড মলিকুলার রিসার্চ সেন্টার (বিএনসিএমআরসি) নামে চিকিৎসা গবেষণা বিষয়ক প্রকল্প বাস্তবায়নে অবিলম্বে কার্যকর জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিত দিয়েছে সংস্থাটি।
রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তাগাদা দেয় দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি। বিবৃতিতে বঙ্গমাতা ন্যাশনাল সেলুলার অ্যান্ড মলিকুলার রিসার্চ সেন্টার নামে সরকারি চিকিৎসা গবেষণাগারের অবকাঠামোগত কাজ শুরুর আগেই অস্থায়ী ল্যাবের নামে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় যন্ত্রপাতি ক্রয়ের উদ্যোগে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে টিআইবি।
এছাড়া সরকারি ক্রয় বিধির প্রচলিত নিয়ম না মেনে এ প্রকল্পে যেভাবে একটি বিশেষ প্রতিষ্ঠানকে বাড়তি দরে কাজ দেওয়ার চেষ্টার পাশাপাশি প্রভাব খাটানোর যে খারাপ নজির তৈরি করা হয়েছে তা সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির একটি নগ্ন উদহারণ বলে মনে করে সংস্থাটি। এক্ষেত্রে দরপত্র প্রক্রিয়া আটকে দেওয়ার মধ্যে দায়িত্ব শেষ না করে এহেন চেষ্টার কুশীলবদের জবাবদিহির আওতায় আনার মাধ্যমে পুরো প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, একটি আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা গবেষণাগার প্রতিষ্ঠার জন্য তিন বছর আগে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (বিএমআরসি)-কে পাঁচ বছর মেয়াদী একটি প্রকল্প দেওয়া হয়েছিল। নানা অজুহাতে তার ভৌত অবকাঠামোর কাজ শুরু না করেই হঠাৎ একটি অস্থায়ী ল্যাব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ কী বিবেচনায় নেওয়া হলো? স্থায়ী অবকাঠামো নির্মিত হলে ল্যাবটির ভবিষ্যৎ কী? এমন প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। সে সব প্রশ্নের যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা ছাড়াই যখন অর্ধশত কোটি টাকার বেশি মূল্যের কেনাকাটার আয়োজন করা হয়েছে। অস্বচ্ছ দরপত্র প্রক্রিয়ায় পছন্দের বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে অধিক মূল্যে কাজ পাইয়ে দেওয়ার এ চেষ্টা ল্যাব স্থাপনের নামে সরকারি অর্থ লোপাটের দুরভিসন্ধি বলাটা মোটেও অত্যুক্তি হবে না।
তার চাইতেও হতাশার বিষয় হচ্ছে সরকারি ক্রয়বিধির ব্যত্যয় ঘটানো এ অবৈধ প্রক্রিয়াকে বিএমআরসি চেয়ারম্যান যেভাবে সমর্থন দিয়েছেন এবং মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দ্বন্ধে জড়িয়ে পড়েছেন তা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। ড. জামান বলেন, প্রকল্প পাসের পর প্রশ্ন ওঠায় দায়সারাভাবে একটি সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন দিয়ে একদিকে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হলো।
অন্যদিকে ভৌত অবকাঠামোগত কাজ শুরু না করেই পণ্য কেনার মাধ্যমে শুরু হতে যাওয়া এ প্রকল্প বাস্তবায়নে চূড়ান্ত বিচারে কী পরিমাণ অনিয়ম-দুর্নীতি হতে পারে সেই চিন্তাটাও আতঙ্কজনক। বিশেষ করে, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটিতে কারিগরি উপ-কমিটির সদস্যদের অন্তর্ভুক্তি, পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে ডিপিপি সংশোধন করে বৈদেশিক মুদ্রায় অবৈধভাবে কেনাকাটার অনুমতি প্রার্থনা, দরপত্রের হালনাগাদ অগ্রগতি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে না পাঠানো ও দরপত্রের আর্থিক মূল্যায়নে কোনো ধরনের প্রতিযোগিতা না হবার মতো গুরুতর সব অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্বয়ং। তাই প্রকল্পটির সুষ্ঠু ও দুর্নীতিমুক্ত বাস্তবায়নে এ সংক্রান্ত সব কমিটি ঢেলে সাজাতে হবে এবং কঠোর তদারকির মাধ্যমে জবাবদিহিমূলক প্রক্রিয়া জোরদার করতে হবে।
বিভিন্ন সরকারি খাতের ওপর টিআইবি পরিচালিত গবেষণায় ক্রয়-সংক্রান্ত বিষয়ে দুর্নীতির ফলে ক্রয় বাজেটের ৮.৫ থেকে ২৭ শতাংশ ক্ষতি হওয়ার তথ্য উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, সরকারি ক্রয় ও প্রকল্প বাস্তবায়নে বিভিন্ন সময় অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য এলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা অস্বীকার করা হয় কিংবা এড়িয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু উল্লিখিত প্রকল্পে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। তবে এ উদ্যোগ যেন শুধু এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ না থাকে। এ ধরনের বিশেষ প্রতিষ্ঠান যেমন দেশের চিকিৎসাখাতের অগ্রগতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গুরুত্ব বিবেচনায় প্রকল্প বাস্তবায়নে অনৈতিক কোনো বিশেষ ছাড় দেওয়ার চেষ্টা করা হলে সেটিও অগ্রহণযোগ্য। তাই যথা সময়ে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও কার্যকর জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থায় এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়ের সার্বক্ষণিক তদারকি ও নজরদারি প্রত্যাশিত।